সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে লুটপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি অর্থ লুটপাটের নতুন ফন্দি হয়ে উঠছে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে খয়রাতি বরাদ্দ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় মুসলমানদের ওয়াজ    মাহফিল, এতিমখানায় খাদ্য ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নামযজ্ঞসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এ খয়রাতি অর্থ বরাদ্দ করে থাকে। ধর্মীয় কাজে সহায়তা সরকারের ভালো উদ্যোগ হলেও তা বাস্তবায়নে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণির নেতা এবং মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা একটি বিশেষ সিন্ডিকেট লুটেপুটে খাচ্ছে এ অর্থ। সারা দেশে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দিয়ে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে খোদ মন্ত্রণালয়ের একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি মাগুরা জেলাতেই ১ হাজার ৭৭৬টি ওয়াজ মাহফিল ও নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের জন্য ২৪ কোটি টাকার খয়রাতি সাহায্য বরাদ্দ করা হয়েছে, যার ৯৫ শতাংশই ভুয়া বলে জানা গেছে। যেখানে ওয়াজ মাহফিল দেখানো হয়েছে এর অধিকাংশই ভুয়া। আবার যাদের নাম-পরিচয় দিয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে তারাও কিছুই জানেন না। কে বা কারা এ প্রকল্প পাঠিয়েছেন তাও জানেন না তারা। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় থেকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘মাগুরার ঘটনা আমাদের দৃষ্টিতে আসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জানা গেছে, বর্তমান সরকার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে টিআর-কাবিখার বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যানদের নিজস্ব প্যাডে লিখিত আবেদন করা হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে খয়রাতি বরাদ্দের জন্যও একই প্যাডে আবেদন করা হয়ে থাকে। অধিকাংশ এমপিই সরকারি দলের হওয়ায় ত্রাণ মন্ত্রণালয় সাধ্যমতো বরাদ্দ দিয়ে থাকে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে বরাদ্দগুলোর অধিকাংশই ভুয়া বলে জানা গেছে। খয়রাতি প্রকল্পের জন্য শুধু রাজনৈতিক দলের নেতাই নয়, সচিবালয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী বিভিন্ন পেশাজীবীও ভিড় জমান। তারাও নিজ নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধিদের প্যাডে আবেদন করে মন্ত্রীর সঙ্গে সখ্যের কারণে বরাদ্দ নিয়ে অর্থের পুরোটাই আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সব যাচাই-বাছাই করে বরাদ্দ দেওয়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সম্ভব হয় না। কিন্তু বাস্তবায়নের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের। যেগুলো ভুয়া প্রকল্প দেখানো হয়, তা তদন্ত সাপেক্ষে পাওয়া না গেলে সে বরাদ্দ পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ে ফেরত আসে। তারা বলছেন, কিছু ব্যক্তি ও নেতার কারণে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অনেক সাফল্য যেমন ঢাকা পড়ছে, তেমনি অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে অনেক শুভ উদ্যোগের সাফল্য।

 এদিকে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের প্রতি একটি বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জিআর, বরাদ্দের তদারক করবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক এতিমখানার নিবন্ধন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের তারিখ ও অস্তিত্ব এবং উভয় ক্ষেত্রে প্রাপ্তির যোগ্যতা যাচাই করবেন। অযোগ্য বা অস্তিত্বহীন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এ বরাদ্দ প্রদান করা যাবে না। বরাদ্দ প্রাপ্তির যোগ্যতা না থাকলে তা মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া একই অর্থবছরে যেসব এতিমখানায় চাল বরাদ্দ করা হয়েছে, এরূপ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পুনরায় বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।

সর্বশেষ খবর