মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
বদলে যাবে মহুরীর চর, থাকবে অত্যাধুনিক পাল্প ও বোর্ড মিলসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প

মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক জোন

বসুন্ধরার সঙ্গে বেজার সমঝোতা স্মারক সই

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক জোন

চট্টগ্রামের মিরসরাইতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য সমঝোতা স্মারক গতকাল অনুষ্ঠিত হয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রামের মিরসরাই মহুরীর চরে ৫০০ একর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করবে দেশের শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ। এজন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই (এমওইউ) করেছে বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনোমিক জোন লিমিটেড (বিআইইজেডএল)। প্রতিষ্ঠানটি এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি অত্যাধুনিক পাল্প ও বোর্ড মিলসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প গড়ে তুলবে। এর প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৮৮ কোটি টাকা। এতে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। গতকাল রাজধানীর র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সমঝোতা স্মারক সই করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) পবন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনোমিক জোন লিমিটেডের অনুকূলে ৫০০ একর জমি বরাদ্দের জন্য নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারক সই করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান ও বেজার নির্বাহী সদস্য মো. হারুনুর রশিদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বেজার নির্বাহী সদস্য ড. এম এমদাদুল হক।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের বিনিয়োগ অন্যতম। অঞ্চলগুলোয় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বেজা ইতিমধ্যে সফল হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এজন্য সরকার প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তুলতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘১৯৮৫ সাল থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশে শিল্পায়ন, হাউজিং এবং ট্রেডিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আজকের এই দিনে আমি প্রথম স্মরণ করছি যার জন্ম না হলে এই দেশ স্বাধীন হতো না, এই দেশে আমরা শিল্পপতি হতে পারতাম না, আজ আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতাম না; সেই বঙ্গবন্ধুকে, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। বাংলাদেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন এই দেশ বিশ্বের বুকে একটা অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ধস নামে। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ভাবমূর্তি ছড়াতে থাকে যে, তোমরা জাতির পিতাকে হত্যা করেছ। যে নেতা স্বাধীনতার জন্য ১৪ বছর কারাবরণ করেছেন, সংসার ত্যাগ করেছেন। এমন নেতাকে যারা হত্যা করতে পারে, সেই দেশে আর কিছু করা সম্ভব নয়। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা আট বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ     হাসিনা একে একে বাংলাদেশকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকেন।’

দেশের প্রথিতযশা শিল্পোদ্যোক্তা আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘একসময় রাজাকাররা এ দেশ শাসন করেছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দেশ চালিয়েছে। যে কারণে আমাদের দেশ এগোতে পারেনি। আমরা আজ সফল জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে হাজির হয়েছি। বিদেশে আজ কোনো বাংলাদেশি দেখলে বিদেশিরা বলেন, ক্রিকেটে বাংলাদেশ এত ভালো করল কীভাবে। এও কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অবদান। তিনি যদি কোনো সভায় ব্যবসায়ীদের দেখেন, তখনই বলেন, আপনারা খেলাধুলার জন্য সহায়তা করুন। বাংলাদেশে ক্রিকেট যত দূর এগিয়েছে, তার সম্পূর্ণ দাবিদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ উন্নয়নের যে রোল মডেল বাংলাদেশ, তার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে উন্নয়নের রোল মডেল তৈরি করেছেন, আমরা তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

আহমেদ আকবর সোবহান আরও বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ানদের টাকা বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আনতে, সে দেশের সরকার ১৫ শতাংশ কর নিয়ে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু আমরা প্রায়ই দেখি ১ লাখ কোটি বা ২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে রয়েছে। এ টাকা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করুন। এখানে প্রচুর বিনিয়োগ করার মতো অবস্থা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা হাউজিংয়ে যারা ৬ লাখ টাকা দিয়ে প্লট কিনেছেন, তা এখন ৬ কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়ে বিনিয়োগের লাভজনক জায়গা আর কোথাও নেই। বিদেশে যারা টাকা রেখেছেন, তা দেশে আনার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, ন্যূনতম একটা ফি দিয়ে সব টাকা বিদেশ থেকে দেশে আনুন।’

মাদক বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যা আছে, যেমন মাদক ও যানজট। এগুলো সমাধানে সরকার কাজ করছে। বাংলাদেশে এখন প্রধান সমস্যা মাদক। প্রধানমন্ত্রী নাফ নদে ইয়াবা চোরাচালান বন্ধ করেছেন। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব, বাংলাদেশের সব বিভাগীয় ও জেলা শহরে স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও থিম পার্ক স্থাপনের বিষয়টি যেন অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায় আনা হয়। তাহলে মাদক কমবে। মানুষকে আনন্দের খোরাক দিতে হবে। এটা করতে পারলে মাদক সমস্যা দূর হয়ে যাবে। ছেলেমেয়েদের খেলার মাঠে আনতে হবে। বিনোদনে আনতে হবে। তাহলেই আমাদের মাদক সমস্যা থাকবে না। ছেলেমেয়েরা আনন্দ-উৎসবে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে মেতে থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘মাথাপিছু আয় আগে যেখানে ৬০০ মার্কিন ডলার ছিল, আজ সেখানে আমরা প্রায় ১৫০০ ডলারে উন্নীত হয়েছি। আশা করি, ২০২১ সালে আমরা মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হব। ২০৪১ সালে অবশ্যই উন্নত দেশের কাতারে যাব। বিশ্বের সব অর্থনীতিবিদ বলছেন, বাংলাদেশ ইজ এ টাইগার নাউ।’

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) পবন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বেসরকারি খাত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি। তাদের হাত ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে অর্থনৈতিক অঞ্চল। মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। এখানে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পাওয়া গেছে।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১৫ বছরের মধ্যে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় এবং ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর