মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

৫৭ ধারা সাংবাদিক হয়রানির জন্য নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মীকে হয়রানি বা নির্যাতনের উদ্দেশে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার প্রবর্তন করা হয়নি। গণমাধ্যমকর্মীরা সঠিক নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকে যেন তাদের কাজ করতে পারেন সে জন্যই এ ধারা।

গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত এ বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা ছাড়াও সংস্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ৫৭ ধারার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা আন্দোলন করছেন। তারা এই ধারা বাতিল চান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তথ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ৫৭ ধারায় কতজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে? এ পর্যন্ত কত মামলা হয়েছে। মামলাগুলো করেছেন কারা? প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য রাষ্ট্রবিরোধী কোনো লেখা লেখে অথবা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌক্তিক প্রমাণ ছাড়াই কোনো নিউজ লেখে, তাহলে কী হবে, তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না?’ শেখ হাসিনা বলেন, ব্যক্তি যদি ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে যায়, তাহলে এখানে সরকার কী করতে পারে? সবারই আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার আছে।’ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার বেড়েছে। এদিকে চলতি বছর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল থেকে জুন) মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭১.৬২ শতাংশ। মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০১৭ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সচিবালয়ে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত বছর একই সময়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ছিল ৭০.৬৫ শতাংশ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ৯টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৭৪টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৫৩টি। ২১টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাস্তবায়নের হার ৭১.৬২ শতাংশ।

চলচ্চিত্র শিল্পীদের কল্যাণে ট্রাস্ট ফান্ড হবে : চলচ্চিত্রের শিল্পী, কলাকুশলীদের কল্যাণে একটি ট্রাস্ট ফান্ড করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এ মাধ্যমের শিল্পী, কলাকুশলীদের অনেকেই জীবনের শেষ সময়ে এসে অর্থাভাবে ভোগেন, সঠিক চিকিৎসা পান না। এটা দুঃখজনক। তাদেরসহ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের কল্যাণে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হবে। চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নে ঢাকার পাশে সাভারে “বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি” গড়ে তোলা হবে। যা হবে বিশ্বমানের।’ গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০১৫ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ফান্ড আছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনেও একটি ফান্ড রয়েছে। সে ফান্ডকে আরও বড় পরিসরে করতে চাই; যাতে কোনো শিল্পীকে কারও কাছে হাত পাততে না হয়। ওই ফান্ড থেকেই সহায়তা দেওয়া যায়। প্রায়ই খবর আসে, শিল্পীরা চিকিৎসা করাতে পারছেন না, টাকাপয়সা নেই। যেখানে অনেক সন্তানই বাবা-মার খোঁজখবর নেন না সেখানে একজন শিল্পীর কে খোঁজ নেবে। আর যেন কোনো শিল্পীকে কষ্ট পেতে না হয়, অর্থাভাবে, চিকিৎসার অভাবে মারা যেতে না হয় সে ব্যবস্থা আমি করে যেতে চাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই যারা বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তারা আরও উন্নতমানের সিনেমা নির্মাণ করবেন, যাতে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি-কৃষ্টি সবকিছু ধারণ করবে। দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিকভাবে যেন আরও সুনাম অর্জন করতে পারে সেদিকে আরও বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ছিল মরুভূমি, তারা আমাদের দেশের সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত। এভাবেই তারা চলত। একটা সময় আমাদের দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ছিল অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ। আমাদের দেশেই শুটিং করা হতো। শেষে নেগেটিভ লাহোরে নিয়ে যাওয়া হতো, সেখানে কাটছাঁট, সেন্সরশিপ করত। কাস্টমের নামে নানাভাবে টাকা আদায় করত। এক দেশ অথচ কাস্টম আলাদা। আমাদের চলচ্চিত্রের টাকা দিয়ে তারা নিজ দেশের অর্থনীতি উন্নতি করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান আমাদের সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে চলত। এখান থেকে তারা নানাভাবে আয় করত। তাদের ইন্ডাস্ট্রিও পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ওপর নির্ভরশীল। যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য তেজগাঁও শিল্প এলাকায় চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন গড়ে তোলার জন্য জায়গা বরাদ্দ করেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু যখন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন, তখন তিনি সমানভাবে এ দেশের শিল্প-সংস্কৃতিকেও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি সিনেমাকে ভুলে যাননি। সিনেমার উন্নয়নে বিএফডিসি গড়ে তোলেন। সেন্সর নীতিমালা তৈরি করেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্টদের বিদেশে পাঠান, চলচ্চিত্র সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভের জন্য। তিনি চেয়েছেন এ দেশে ভালো সিনেমা হোক।’

তিনি বলেন, ‘এই এফডিসির চলার রাস্তা এটি আমিই করে দিয়েছি। আগে কারওয়ান বাজারের ভিতর দিয়ে শুঁটকি মাছের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে আসতে হতো। চলচ্চিত্রের যত উন্নয়ন আমাদের হাত দিয়েই হয়েছে।’

আমি যাদের জন্য শাবানা, আজকের এ পুরস্কার তাদের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্তির প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কাঁদলেন চিত্রনায়িকা শাবানা। অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্য দিতে এসে দীর্ঘদিন আড়ালে থাকা এ নায়িকা বললেন, ‘আমি যাদের জন্য শাবানা, আজকের এ পুরস্কার তাদের।’

কান্নাভেজা বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এই তো সেদিন আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথমবারের মতো দেখা করতে গিয়েছিলাম। মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী দুই হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরেন। আমি জানি, তিনি যে সম্মান আমাকে সেদিন দিয়েছেন, তা সব শিল্পীর, শিল্পের। তিনি অসুস্থ পরিচালকের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’

দেশীয় চলচ্চিত্রের সংকট প্রসঙ্গেও বক্তব্য দেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্র আজ সংকটে। কিন্তু যে কোনো সংকটের মাঝে লুকিয়ে থাকে সমাধান। যখন আাামাদের পাশে সবার প্রিয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আছেন তখন কোনো সংকটই থাকতে পারে না। প্রবাসে থাকলেও আমি জ্ঞাত হয়েছি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট করেছেন। বিপুল অর্থের মাধ্যমে বিএফডিসি আধুনিকায়ন করেছেন। জানতে পারি, তিনি ফোর-কে রেজুলেশন প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করছেন। যেখানে বিশ্বের অনেক দেশে এখনো টু-কে রেজুলেশন ব্যবহার করা হয়। আমি তাকে সাধুবাদ জানাই।’

সর্বশেষ খবর