বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

রূপকল্প বাস্তবায়নে বড় বাধা মাদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রূপকল্প বাস্তবায়নে বড় বাধা মাদক

ভিশন-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে বড় বাধা মাদকের আগ্রাসন বলে উল্লেখ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে দেশের যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। আর আমাদের দেশের অধিকাংশ জনগণই যুব সমাজ। সমাজের অর্থলিপ্সু মানুষ যুবাদের ইয়াবার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শুধু বল প্রয়োগ করে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মাদক আসছে। ভারতের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বিজিবির বৈঠক হচ্ছে। যার ফলে ভারত থেকে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে আসছে। তবে মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ মাদক ইয়াবা আসছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এক্ষেত্রেও আমরা সফল হব। মাদক আন্তর্জাতিক সমস্যা। এটা নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে। তিনি বলেন, ইয়াবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছি। কারাগারে বন্দীদের মধ্যে অধিকাংশই মাদক সংক্রান্ত মামলার আসামি। তারপরও এটা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। মাদকের বিরুদ্ধে মসজিদের ইমাম, গণমাধ্যম, শিক্ষক, আলেম, সমাজসেবক, এনজিও, জনপ্রতিনিধিদের সোচ্চার হতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আগে শুনুন, শিশু ও যুবাদের প্রতি মনোযোগ দেওয়াই তাদের নিরাপদ বেড়ে ওঠার প্রথম পদক্ষেপ’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দেশজুড়ে দিবসটি পালিত হয়। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে সমাজের বন্ধন শিথিল হচ্ছে। শিশু ও যুবাদের প্রতি নজর দিন, তাদের কথা শুনুন ও তাদের সময় দিন। এ সময় তিনি ঐশীর উদাহরণ তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনকে সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হচ্ছে। এ আইনে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। ধর্মীয় অনুশাসন, আচার-আচরণ, পরিবারিক বন্ধন মাদক থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে। দেশের ৬৫ শতাংশ জনগণ কর্মক্ষম। তাদের কাজে লাগাতে না পারলে রূপকল্প অর্জন সম্ভব নয়। মাদক প্রবেশ রোধে কক্সবাজারকে বিশেষ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার প্রক্রিয়া চলছে। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, দেশে মাদক ব্যবহার অসহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ল’ইনফোর্সের গাফিলতিতে মাদক আসামি জামিন বা পার পেয়ে যাচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ অতিথি হিসেবে ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত গতকালের রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মাদক ব্যবহারে বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণে ইয়াবার সাজা মৃত্যুদণ্ড বিধান রেখে মাদকদ্রব্য আইনটি সংশোধনের উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান। দেশে ৭০ লাখ মাদকসেবী রয়েছে। ২০২০ সালে এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। যা আতঙ্কের বিষয়। এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ যুবক। মাদক গডফাদারদের আটকের ব্যবস্থা করতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা সংশোধন করা হয়েছে। কারাগারে মাদকসেবী আসামিদের জন্য কাউন্সিলিং সেল ও ডোপ টেস্ট গ্রহণের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে। এতে মাদক ব্যবহার কমে আসবে। মাদক জটিল ও বহুমাত্রিক সমস্যা। মাদকের করুণ চিত্র তুলে ধরে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

যারা পুরস্কার পেলেন : চিকিৎসা পুনর্বাসনে প্রথম প্রমিসেস মেডিকেল লিমিটেড, মাদকবিরোধী কার্যক্রমে প্রথম ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ডিএনসির শ্রেষ্ঠ পরিদর্শক (চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা) মো. ইলিয়াস হোসেন তালুকদার, শ্রেষ্ঠ সার্কেল জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মানববন্ধন ও র‌্যালিতে প্রথম হয়েছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এ ছাড়া রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার দেওয়া হয়। বিজয়ীদের হাতে এসব পুরস্কার তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী।

অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতেই জঙ্গিবাদ : ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেছেন, অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতেই জঙ্গিবাদ। হাত-পায়ের রগ কেটে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ নয়। যে দেশের মানুষ ভাষার জন্য প্রাণ দিতে পারে তারা কখনো জঙ্গি হতে পারে না। যখন বিশ্বের মানুষ আতঙ্কে, তখন বলতে পারি আমরা ভালো আছি। নিরাপত্তার দিকে ৩৫তম স্থান। আমাদের জনগণ আফগান, পাকিস্তানের মতো নয়।

মঙ্গলবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনে জঙ্গিবাদ ও মাদকবিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা জঙ্গি সন্তানের লাশ নিতে আসেনি। আমরা লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেছি। জঙ্গিবাদের বিষয়ে আমাদেরকে আরও সতর্ক হতে হবে। এ দেশের এক ইঞ্চি জমিও সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেব না। বাংলাদেশে মাদক তৈরি হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসে। প্রথমে তারা বর্ডার গার্ড, কোস্ট গার্ডের মুখোমুখি হয়। পরে র‌্যাব, পুলিশ কাজ করে। তবে মাদক এতটা প্রকট হয়েছে যে নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করলেই হবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মাদক বিভাগকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। লোকবল বাড়ানো হচ্ছে। জেলায় জেলায় মাদক নিরাময় কেন্দ্র করা হবে।

জেলা পুলিশের আয়োজনে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন  র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি, অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এমপি, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী এমপি, বিজিবি-১২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লে. কর্নেল শাহ্ আলী, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শামছুল হক, পৌর মেয়র নায়ার কবির, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

সর্বশেষ খবর