শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

লন্ডনে কী করছেন খালেদা, খোঁজ নিচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

লন্ডনে কী করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া— খোঁজখবর নিচ্ছে সরকার। বিএনপি নেত্রীর লন্ডন সফরের আগে শোনা যাচ্ছিল বিজেপির সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। এ রেশ কাটতে না কাটতেই বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাকিস্তানি গোয়েন্দা   সংস্থা আইএসআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বৈঠকের ছবি ও সংবাদ ভাইরাল হয়েছে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নতুন ষড়যন্ত্র করতে লন্ডন গেছেন।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের অন্যতম মিশন হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ও বিদেশে ‘লবিস্ট’ নিয়োগ করা। তাদের ধারণা, এ সফরে মিডিয়ার সঙ্গে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বিশ্বজনমত সৃষ্টি ও চড়া মূল্যে ‘লবিস্ট’ নিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করতে পারেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া এ সফরে হতে পারে একাদশ সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুল করার শলা-পরামর্শও। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আপাতত লন্ডনকে নিরাপদ মনে করে সেখানে গেছেন তিনি। এমনকি বিএনপি নেতা-কর্মীরাও মনে করছেন, এটি শুধু নিছক পরিবারের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার সফর নয়। রাজনীতিতে বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ও আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলের কলাকৌশল নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় কর্মতৎপরতা সৃষ্টির নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারও রয়েছে। ঘটনা যাই ঘটুক, খোঁজখবর রাখছে সরকার।

 

এদিকে কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের বিষয় বেশকিছু তথ্য এসেছে। এতে বলা হয়েছে, খুব গোপনীয়ভাবে সেন্ট্রাল লন্ডনে একটি হোটেলে তারা বসেছিলেন। গোপন ওই বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার পুত্র বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, লন্ডনে পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছেন আরেক যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামান ও লন্ডন জামায়াতের কয়েকজন নেতা।

এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা সংস্থা বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার পর থেকেই তার ওপর কঠোর নজরদারি রেখেছে। তাদের তথ্যান্যুায়ী লন্ডনে পাকিস্তান অ্যাম্বাসিতে কর্মরত জুনায়েদ নামের এক ব্যক্তি যিনি সম্ভবত পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর আন্ডারকাভার একজন অফিসার, তিনি খালেদা জিয়া লন্ডন পৌঁছানোর পরপরই তার সঙ্গে দেখা করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ছদ্মবেশী এই জুনায়েদ লন্ডনে থাকাকালে খালেদাপুত্র ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তথা বাংলাদেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়ার সঙ্গে খুবই নিবিড় ও গোপন সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। জানা যায়, জুনায়েদের সাক্ষাতের পর পাকিস্তানের আইএসআইর পূর্বাঞ্চল গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা রিয়াজ আশফাক লন্ডনে পাড়ি জমান এবং বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জুনায়েদ এবং রিয়াজের সঙ্গে উভয় সাক্ষাৎই ঘটে লন্ডনের সেন্ট জেমস কোর্ট এরিয়ায় অবস্থিত তাজ হোটেলে গত ১৮ ও ১৯ জুলাই গভীর রাতে।

উল্লেখ্য, এ তাজ হোটেলেই তারেক রহমান বাংলাদেশে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে তার গোপন বৈঠকগুলো করতেন। এমনকি এ তাজ হোটেলেই ২০১৪-এর নির্বাচন প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে নিশা দেশাই বিসওয়ালের আগে দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি রবার্ট ব্লেকের সঙ্গেও দুবার তারেক সাক্ষাৎ করেছিলেন। আইএসআই এ হোটেলটি এর আগেও বহুবার তাদের গোপন বৈঠকের জন্য ব্যবহার করেছে। ১৯৯৫-৯৬ সালে এ হোটেলেই আইএসআই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আবদুর রশীদের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়েও বৈঠক করেছিল বলে জানা যায়। এ ছাড়া গোয়েন্দা সংস্থাটির রিপোর্টে জানা যায়, আইএসআই সদস্যরা নেদারল্যান্ডসের রাজধানীর উপকূলের একটি শহর ব্রেডায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে দেখা করে। এ ছাড়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খালেদ মহিউদ্দিনের সঙ্গেও তারা বৈঠক করে।

এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপি নেতা নাজমুল হুদা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ফারুক-রশীদদের সঙ্গে বৈঠক করে শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এলটিটিইর সঙ্গে যোগাযোগ এবং প্রক্রিয়া খোঁজার চেষ্টা করে যে, যেভাবে শ্রীলঙ্কান এলটিটিই আত্মঘাতী বোমা হামলায় রাজীব গান্ধীকে হত্যা করে, তেমন কোনো প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যা করা যায় কিনা। কিন্তু সে সময় ইসরায়েলি একটি সংস্থার মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশের একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা সে তথ্য পেয়ে যায় এবং এ হত্যা চক্রান্ত ভেস্তে যায়।

কিন্তু বর্তমানে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরে আইএসআইর রিয়াজের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারটি থেকে এই উপমহাদেশের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা ধারণা করছে, হয়তো খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াসহ আওয়ামীবিরোধী চক্র বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় বা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে সফররত অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আত্মঘাতী বোমা হামলা ঘটানোর প্রচেষ্টা করতে পারে এবং এই আত্মঘাতী বোমা হামলার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে পাকিস্তানের আত্মঘাতী বোমা হামলায় পারদর্শী জিহাদি গোষ্ঠীর সদস্যদের এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশে আটকে থাকা রোহিঙ্গাদের দ্বারা গঠিত আত্মঘাতী শিশু ও নারী বোমা হামলাকারীদের।

এ ছাড়া জানা যায়, বাংলাদেশের কিছুটা অস্থির পার্বত্যাঞ্চলের সরকারবিরোধী গোষ্ঠীদেরও এ হামলার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, দুজন আইএসআই অফিসার যাদের নাম জানা যায় যথাক্রমে কর্নেল বশির ও মেজর ইমতিয়াজ তারা বর্তমানে হংকংয়ে সক্রিয় রয়েছেন চীনের নির্মিত অবৈধ অস্ত্র কীভাবে মিয়ানমার-চীন বর্ডার দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী উলফা ও বাংলাদেশের জনসংহতি সমিতিকে সরবরাহ করা যায়।

কর্নেল বশির ও মেজর ইমতিয়াজ মিয়ানমারের অন্যতম বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী টঘওঞঊউ ডঅ ঝঞঅঞঊ অজগণ-এর কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করছেন বলে জানা যায়। উল্লেখ্য, টডঝঅ বর্তমানে মিয়ানমারের অন্যতম বিদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী, যাদের রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার সদস্য।

এমনকি অনেক সূত্র থেকে জানা যায়, সংগঠনটি চীনা ভারী অস্ত্র ও অত্যাধুনিক অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইলও নিজেদের করায়ত্ত করেছে। আর টডঝঅ-এর তরফ থেকে নেপালি বংশোদ্ভূত শিব পাণ্ডে নামক একজন এই অস্ত্র কেনাবেচার মধ্যস্থতা করছেন।

এ বিষয়ে গতকাল বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর