শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিশেষজ্ঞ অভিমত : কোন পথে পাকিস্তান

অভ্যস্ত হয়ে গেছে ওরা

----- সোহরাব হোসেন

জুলকার নাইন

অভ্যস্ত হয়ে গেছে ওরা

সরকারের রদবদল ও বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়ার মতো ঘটনায় প্রায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে পাকিস্তানের জনগণ। কারণ, কয়েক দিন পরপরই এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে সদ্য দায়িত্ব পালন করে আসা সোহরাব হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। সাবেক রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেন বলেন, পুরো বিষয়টি নওয়াজ শরিফের জন্য দুর্ভাগ্যের। তার আগে আসিফ আলী জারদারি প্রেসিডেন্ট ও ইউসুফ রাজা গিলানি প্রধানমন্ত্রিত্বের সরকারের সময়ও গিলানিকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল আদালত। অবশ্য পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি নির্বাচিত সরকারের পুরো মেয়াদ শেষে তাদের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়েছিলেন নওয়াজ শরিফ। এ কারণেই প্রত্যাশা করা হচ্ছিল নওয়াজ হয়তো এবার তার পুরো মেয়াদ শেষ করবেন। যদিও তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানান উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির মামলায় চলে যেতে হলো নওয়াজ শরিফকে। শুধু নওয়াজ শরিফ নন, তার আপন বেয়াই ও তার সরকারের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারকেও তার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে আদালত। জানা যায়, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার এ অভিজ্ঞতা অবশ্য নওয়াজের নতুন নয়। ১৯৯০ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ’৯৩ সালে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই দুর্নীতির দায়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব চলে যায় তার। দ্বিতীয়বার ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ’৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান তিনি। তখন দেশান্তরিও হতে হয় তাকে। এ সময় সৌদি আরবেই বেশি সময় কাটিয়েছেন নওয়াজ শরিফ। পরে ২০১৩ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এবারই সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকলেন নওয়াজ। আগামী বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। সাবেক রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেন বলেন, পাকিস্তানের নির্বাচনও আর বেশি দেরি নেই। ২০১৮ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা। আমার ধারণা, নওয়াজ শরিফের দল নির্বাচন পর্যন্ত দলের অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী করে সরকার চালাতে চাইবে। এত দিন শোনা যাচ্ছিল নওয়াজের মেয়ে মরিয়ম তার পিতার জায়গায় আসতে পারেন। কিন্তু এখন যে দুর্নীতির মামলায় নওয়াজ শরিফ চলে গেলেন তারপর মরিয়মের আসাটা মনে হয় কিছুটা কঠিনই হবে। গত বছর ফাঁস হওয়া পানামা পেপারসে নওয়াজের মেয়ে মরিয়ম ও ছেলে হাসান-হোসাইনের নামই এসেছিল। তারা তিনজন ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত বিভিন্ন অফশোর কোম্পানির নামে লন্ডনে সম্পত্তি কিনেছিলেন বলে ফাঁস হওয়া নথিতে তথ্য ছিল। সে থেকেই এই দুর্নীতির মামলার শুরু। রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন কাকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে তা বলা মুশকিল। তবে নওয়াজের ছোট ভাই ও বর্তমানে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানের রাজনীতিতে বেশ জনপ্রিয়। তার কথাও হয়তো ভেবে দেখতে পারে পাকিস্তান মুসলিম লীগ। পাকিস্তানের জনজীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, পাকিস্তানে মাঝেমধ্যেই সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। কয়েক দিন আগেই লাহোরে হামলা হলো। লাহোরে এর আগেও হয়েছে। ইসলামাবাদেও হয়েছে। এ কারণেই সেখানে চলাফেরা বা বসবাসের সময় সবারই এক ধরনের চিন্তাভাবনা থাকে। তবে একটা রাষ্ট্রে যখন বছরের পর বছর একই ধরনের পরিস্থিতি চলতে থাকে, তখন অনেক মানুষই এসব বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে যায়। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কারণ, এ দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় তো তারা পাচ্ছে না। তবে পাকিস্তানে গণতন্ত্রকে তার মূল ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর একটি চেষ্টা চলছিল। সেই চেষ্টা এবার নওয়াজ শরিফের চলে যাওয়ার মাধ্যমে আরেক দফা হোঁচট খেল। নিশ্চয়ই সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে একটি সমাধানের চেষ্টা করবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর