শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
অভিযান সদস্য সংগ্রহের

বাধার অভিযোগ বিএনপির ৩০ লাখ ফরম বিক্রি

মাহমুদ আজহার

বাধার অভিযোগ বিএনপির ৩০ লাখ ফরম বিক্রি

মাত্র এক মাসে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নতুন সদস্য ও নবায়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৩০ লাখেরও বেশি। এ নিয়ে তৃণমূল বেশ চাঙ্গা। তবে বিএনপির অভিযোগ, সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালাতে গিয়ে সরকারি দল ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অনেক এলাকায় এ কর্মসূচি পণ্ড করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দলীয় সংঘাত-সংঘর্ষ ও বিরূপ আবহাওয়াকেও প্রতিবন্ধকতা মনে করেন নেতারা। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দফতর শাখা থেকে ৩০ লাখের বেশি ফরম বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলের সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু। তিনি বলেন, ‘জেলা-মহানগর থেকে দায়িত্বশীল নেতারা টাকা দিয়ে ফরম কিনে নিচ্ছেন। বিক্রি হওয়া সব ফরমই পূরণ হয়েছে কিনা তা ১ সেপ্টেম্বরের পর কেন্দ্র থেকে হিসাব চাওয়া হবে।’ দুই মাসে বিএনপির টার্গেট এক কোটি। সেই হিসাবে হাতে আরও এক মাস সময়। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, এর মধ্যে ৭০ লাখ ফরম পূরণ করতে হবে। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ‘এটা অসম্ভব নয়। কারণ, ক্ষমতাসীন দলের বাধা-বিপত্তি, বর্ষা-বাদলসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও যেভাবে সারা দেশে এ অভিযান চলছে, তাতে এক মাসে বাকি টার্গেটও পূরণ সম্ভব।’ কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে নেওয়া বেশির ভাগ ফরম পূরণ করা হয়েছে বলেও দাবি নেতাদের। গুলশান কার্যালয়ে গত ১ জুলাই রাতে ‘প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ’ অভিযান উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি জানান, গতবার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ লাখ। এবার টার্গেট এক কোটি। এ সময় তিনি নিজেই ফরম পূরণ করে সদস্যপদ নবায়ন করেন। একইভাবে স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও সদস্যপদ নবায়ন করেন।

আগামী ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে এ কর্মসূচি চলবে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ২০১২ সালে তা আবারও শুরু হয়। ওই সময়ও দলটি পুরোপুরি সফল হয়নি। এবার টার্গেট পূরণে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন নেতারা। সিনিয়র এক নেতা জানান, সদস্য সংগ্রহ অভিযানে দল চাঙ্গা হবে। এতে আগামী নির্বাচনেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। একদিকে নেতা-কর্মীসহ সমর্থকদের ফরম পূরণ করে নিজেকে দলের একজন কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে ভালো লাগবে। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্র একটি ডাটাবেজ তৈরিতে সক্ষম হবে। ১০ টাকা মূল্যের এক কোটি ফরম পূরণ হলে আয় হবে ১০ কোটি টাকা। ফলে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আর্থিক সংকটও অনেকটা কেটে যাবে। সদস্য সংগ্রহ অভিযানে সিনিয়র নেতারাও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গল ও বুধবার বরিশালে অভিযান উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভীসহ সিনিয়র প্রায় ৫০ জন নেতা বিভিন্ন জেলা ও মহানগর সফর করছেন। রাজধানীতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে অভিযান চলছে। মহানগর উত্তর শাখাতে আহসান উল্লাহ এবং আতাউর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট নেতারা এ অভিযান চালাচ্ছেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সারা দেশে সদস্য নবায়ন ও সংগ্রহ অভিযান চলছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।’ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা একটি ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির চেষ্টা করব। আশা করি, নির্ধারিত সময়ে বিএনপি টার্গেট পূরণে সক্ষম হবে।’ জানা যায়, নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নে রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী ও টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকটি স্থানে সদস্য সংগ্রহ অভিযান পণ্ডও হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন শতাধিক নেতা-কর্মী। ২২ জুলাই রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সংগ্রহ নবায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। একই দিনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলাধীন হাটহাজারী উপজেলায়ও সংঘর্ষ বাধে। এর আগে ১২ জুলাই নারায়ণগঞ্জে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে ছাত্রদলের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ হয়। ২৩ জুলাই টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে সদস্য সংগ্রহ অভিযান ভণ্ডুল হয়ে যায়। এ ছাড়া পুলিশের বাধায় পটুয়াখালীর দশমিনায় সদস্য সংগ্রহ ও বর্ধিত সভা পণ্ড হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার বরিশালে মহাসচিবের সামনে বিরোধ ও হাতাহাতিতে জড়ায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির দুটি পক্ষ। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। অবশ্য সদস্য সংগ্রহ অভিযান শেষ পর্যন্ত চলে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পুলিশ ও সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা যৌথ হামলা চালিয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করেছে।’

সর্বশেষ খবর