শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাদকের গডফাদারদের কঠোর সাজা

প্রস্তাবিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত

নিজামুল হক বিপুল

সংশোধন-সংযোজন করে মাদকদ্রব্য আইনকে আরও কঠোর করা হচ্ছে। এতে ইয়াবাকে ‘ক’ শ্রেণির মাদক হিসেবে চিহ্নিত করে মাদক অপব্যবহারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনে মাদক ব্যবসার গডফাদার ও অর্থ বিনিয়োগকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরে নতুন নতুন যেসব মাদকদ্রব্যের আবির্ভাব হচ্ছে সেগুলোর জন্যও প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৭-এর খসড়া থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ১৯৯০ সালের আইনটি প্রায় তিন দশকেও সংশোধন হয়নি। ফলত এ আইন দিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেড়ে যাওয়া মাদকের অপব্যবহার ও বহুমাত্রিকতা রোধ করা যাচ্ছে না। নিশ্চিত করা যাচ্ছে না মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের কঠোর শাস্তিও। এ অবস্থায় মাদকের ছোবল থেকে দেশের কিশোর, তরুণ ও যুবসমাজকে রক্ষা করতে এবং দেশকে বাঁচাতে সরকার বিদ্যমান আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে ওই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগ। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, মাদক ব্যবসার যারা গডফাদার বা নেপথ্যের নায়ক, যারা মাদক ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করেন তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কারণ, তাদের নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে দেশে মাদকের ব্যবসা ও ব্যবহার বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই প্রস্তাবিত আইনে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে নতুন ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা তদন্তের জন্যও একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। নতুন নতুন মাদককে আইনের আওতায় আনতে একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে হঠাৎ করেই নতুন নতুন মাদক আবির্ভূত হয়; যা তাত্ক্ষণিকভাবে প্রচলিত আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। সংগত কারণেই এর জন্য একটি নতুন ধারা প্রয়োজন। আইনে মাদকদ্রব্য সেবনকারী, বহনকারী, ব্যবসায়ী, মাদকদ্রব্য সেবন করে নেশাগ্রস্ত হয়ে জনগণের শান্তি বিনষ্ট করাসহ এ রকম অপরাধের জন্য আলাদা শাস্তির বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদকদ্রব্যের ব্যবসায় অর্থ জোগানদাতা, পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতাদের বিষয়েও প্রস্তাবিত আইনে নতুন নতুন ধারা সংযোজন করা হচ্ছে। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জেলা-উপজেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও প্রচার কমিটি গঠন ও এর কার্যক্রমে। দেশের যেসব এলাকায় মাদকের ব্যবহার ও ব্যবসা সবচেয়ে বেশি সেগুলোকে ‘বিশেষ মাদকপ্রবণ অঞ্চল’ ঘোষণা এবং মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যাতে অগ্রাধিকার পাবে পাশের মিয়ানমার ও ভারত। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মাদকের বড় যেসব চালান ঢুকছে এর সবই আসছে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে। মিয়ানমারের সীমান্তেই ইয়াবার কারখানা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। তাই মিয়ানমারের বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এর বাইরে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও মোবাইল কোর্টের শাস্তির আওতা বাড়ানোর বিষয়টিও স্থান পাচ্ছে প্রস্তাবিত আইনে। বিদ্যমান আইনে সব ধরনের মাদক ও অপরাধ মোবাইল কোর্টে বিচার্য ছিল না। প্রস্তাবিত আইনে লঘু ও গুরু অপরাধের জন্য শ্রেণিবিভাজন ও পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে দণ্ডের বিষয়টি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। সম্প্রসারণ করা হয়েছে সব ধরনের মাদকের বিচারের ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্টের এখতিয়ার।

সর্বশেষ খবর