সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

নারী কাউন্সিলরসহ আটক আরও পাঁচ, তুফান রিমান্ডে

মা-মেয়েকে ন্যাড়া তোলপাড় বগুড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

নারী কাউন্সিলরসহ আটক আরও পাঁচ, তুফান রিমান্ডে

বগুড়ায় কিশোরী ধর্ষণ ও তার মাকে শারীরিক নির্যাতনের পর চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় শ্রমিক লীগ নেতা তুফানসহ তিনজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে নারী কাউন্সিলরসহ আরও পাঁচজনকে। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গতকাল রাতে পাবনা থেকে বগুড়া পৌরসভার   সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি ও তার মা রুমি খাতুনকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে, সাভারের হেমায়েতপুর থেকে মুন্না, আশা ও টিটু নামের তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল রাতে মোবাইল ট্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাদেরকে আটক করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. খোরশেদ আলম।

বগুড়া থানা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বগুড়া সদর থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতারকৃত চারজনের মধ্যে তিনজনকে বগুড়া সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে নিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বগুড়ার খান্দার সোনারপাড়ার মোখলেছার রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান আতিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করায় তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়নি। পুলিশ অপর তিনজন বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর কসাইপাড়া এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে ও শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার, একই এলাকার দুলু আকন্দের ছেলে আলী আজম দিপু ও শহরের কালিতলা এলাকার জহুরুল হকের ছেলে রূপমকে রিমান্ডে নিয়েছে। রাতে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, গতকাল রাত প্রায় পৌনে ৮টায় পাবনা শহর থেকে মা ও মেয়ের মাথা ন্যাড়া করার ঘটনায় বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি ও তার মা রুমি খাতুনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আমিরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল পাবনায় এ অভিযান চালায়। পরে পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ে বগুড়ার পথে রওনা হন।

জেলা প্রশাসক হাসপাতালে : গতকাল নির্যাতিত কিশোরী ও তার মার চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে বগুড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। এসময় তিনি ধর্ষকদের দ্রুত বিচারের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি জনপ্রতিনিধি হওয়ায় এ বিষয়ে তার সম্পৃক্ততা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে বগুড়া এডিসি জেনারেল আবদুস সামাদকে। কমিটির অন্য দু’জন সদস্য হলেন বগুড়ার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এবং বগুড়া জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা। ওই কিশোরীরর চিকিৎসা এবং লেখাপড়ার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসা শেষে মেধা অনুযায়ি কলেজে ভর্তি করার বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে। মামলা হয়েছে, পুলিশ সে বিষয়ে কাজ করবে। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, গ্রেফতারকৃত আসামী আতিকুর রহমান আতিক আদালতে স্বীকারোক্তিতে বলেছে, ওই কিশোরীকে তুফান সরকার ধর্ষণ করেছে। বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুনের আদালতে তুফান সরকার, দীপু ও রুপমকে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আতিক স্বীকারোক্তি দেওয়ায় তার রিমান্ড আবেদন করা হয়নি। এই মামলার পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উত্তাল বগুড়া : ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল বিকাল ৩ টায় বগুড়া শহরের সাতমাথায় সচেতন নাগরিক সমাজ, সমাজ উন্নয়ন সংস্থা সুজন, বন্ধুসভার সদস্যরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। এতে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চোখে কালো কাপড় বেঁধে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদ সভা থেকে দোষিদের দ্রুততম সময়ে বিচারের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। এছাড়া দিনভর বিভিন্ন শ্রেণী-পোশার মানুষ একই দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

তুফানকে বহিস্কার : বগুড়া জেলা শ্রমীক লীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন শেখ হেলাল জানিয়েছেন, শহর শ্রমিক লীগের আহবায়কের পদ থেকে তুফান সরকারকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই কলেজে ভর্তি করার কথা বলে ওই কিশোরীকে কৌশলে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে গ্রেফতারকৃত তুফান সরকার। এ ঘটনার পর ২৯ জুলাই দুপুরে ঐ এলাকার পৌর কাউন্সিলর রুমকি ও তার সহযোগিরা বিচারের নামে ঐ মেয়ে ও তার মাকে ধরে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে মারপিট করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। এ খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে তুফান সরকার ও তিন সহযোগিকে গ্রেফতার করে। এসব ঘটনায় ওই কিশোরীর মা মুন্নি বেগম বাদি হয়ে অপহরণ, ধর্ষণ ও মারপিটের অভিযোগে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর