সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাকিস্তান হাইকমিশনারকে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার রাফিউজ্জামান সিদ্দিকীকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই ও সিরামিকের তৈরি আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে পাকিস্তানের হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তাকে এসব উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কে বিশ্বাস করে।

প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের মধ্যে নানা বিষয়ে বিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাও চলমান থাকবে। যে কোনো সমস্যা বা যেসব বিরোধ রয়েছে সেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা হবে। বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে। এ সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকে আলোচিত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে, এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত ও সমুদ্রসীমার বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করেছে। স্থলসীমান্ত বিল ভারতীয় পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ সমাধান সারা বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এ সময় শেখ হাসিনা একই প্রক্রিয়ায় মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ সমাধানের কথাও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান করেছি। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভারত থেকে ৬২ হাজার শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে এনেছি। দারিদ্র্যকে অঞ্চলের প্রধান শত্রু উল্লেখ করে দারিদ্র্য নির্মূল করতে এ অঞ্চলের সব দেশকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী গত সাড়ে আট বছরে তার সরকারের বিভিন্ন অর্জনের কথা উল্লেখ করেন। প্রসঙ্গক্রমে শেখ হাসিনা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাকে হত্যার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে পরিচালিত গ্রেনেড হামলা এবং জঙ্গিদের সাহায্যে ৬৩টি জেলার ৫০০ স্থানে পরিচালিত বোমা হামলার উল্লেখ করেন। সন্ত্রাসের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সুফল ভোগ করেন অস্ত্র ব্যবসায়ীরা।

সাক্ষাতের সময় পাকিস্তানের হাইকমিশনার বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে বাংলাদেশ আমূল পাল্টে গেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করছেন, পাকিস্তানের জনগণ একে সাধুবাদ জানায়। গত বছর গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাফিউজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামলেছেন। আর সে জন্য এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

এ সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সুরাইয়া বেগম এবং প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন উপস্থিত ছিলেন।

জঙ্গি হামলায় নিহত ঝরণা রাণীর পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী: কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় গত বছর ঈদের দিনে জঙ্গি হামলায় নিহত ঝরণা রানী ভৌমিকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেসরকারি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সহকারী অফিসার পদে ঝরণা রানীর ছেলে বাসুদেবকে চাকরি দিলেন তিনি। গতকাল প্রধানমন্ত্রী এই নিয়োগপত্র বাসুদেবের হাতে তুলে দেন। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে বাসুদেব আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম চাকরি পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করায় তার চাকরিটি হয়েছে। এ জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, মায়ের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বাসুদেব কিশোরগঞ্জ গুরম্নদয়াল সরকারি কলেজ থেকে একাউন্টিংয়ে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন।

গত বছর ঈদুল ফিতরের দিন জঙ্গিদের বুলেট ঝরণা রানীর প্রাণ কেড়ে নেয়। শোবার ঘরের ভেতরেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ঝরণা রানী ভৌমিক। তার স্বামী গৌরাঙ্গ ভৌমিক শহরের একটি বিড়ি ফ্যাক্টরির একজন অল্প বেতনের কর্মী।

 

সর্বশেষ খবর