সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

এর সমাধান না হলে চলবে না

—প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

এর সমাধান না হলে চলবে না

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিষয়ক বিধিমালার যে খসড়া চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করেছে, আপিল বিভাগ তা গ্রহণ করেনি। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, এ খসড়া আদালতের সুপারিশ অনুসারে হয়নি। এটি উল্টো। এর সমাধান না হলে চলবে না। গতকাল আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হয়। ৬ আগস্ট আদেশের জন্য দিন ধার্য হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের আবেদনে আপিল বিভাগ গত সপ্তাহে ওই গেজেট প্রকাশের জন্য ৩০ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছিল। সে অনুযায়ী গতকাল বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে আসে। এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধান বিচারপতির কাছে চূড়ান্ত খসড়াটি হস্তান্তর করেন। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, ‘আমরা চাই একটা সুন্দর আইন হোক। তাই আসুন, আমরা বসি। আমি এবং আপিল বিভাগের আমরা সব বিচারক, আপনি, মাননীয় আইনমন্ত্রী ও আইন মন্ত্রণালয় চাইলে তাদের পক্ষ থেকে এক্সপার্ট যে কজন ইচ্ছা, সেই মিটিংয়ে রাখতে পারবে। আজ থেকে বৃহস্পতিবার যে কোনো দিন দুপুর ২টার পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমাদের বসতে সমস্যা নেই।’ শুনানিতে আইন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া খসড়ায় থাকা ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’ শব্দ নিয়ে কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হলো। তিনি খসড়া দিয়ে গেলেন। আমি তো খুশি হয়ে গেলাম, যদিও খুলে দেখিনি। কিন্তু এটা কী! এখানে বলা হলো ‘‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’’। এর মানে কী? সব আইনে ব্যাখ্যা থাকে। কিন্তু এখানে কোনো ব্যাখ্যা নেই। কর্তৃপক্ষ বলতে বিচার বিভাগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে রাখলেন। তবে তো আইন মন্ত্রণালয়েই থাকছে। এর সমাধান না হলে চলবে না।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘খসড়ায় বলা আছে, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত তারিখ থেকে গেজেট কার্যকর হবে। অথচ মাসদার হোসেন মামলায় নির্দেশনা আছে, সুপ্রিম কোর্ট যে তারিখ থেকে কার্যকরের পরামর্শ দেবে, সেই তারিখ থেকে কার্যকর হবে। আমরা যেটা পাঠিয়েছি, আপনারা তার উল্টোটা পাঠিয়েছেন। (মাসদার হোসেন মামলার) রায়ের ষোলো বছরেও হয়নি। আর এভাবে হলে ষোলো শ’ বছরেও গেজেট হবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখানে বলা হলো, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হবে। তাহলে হাই কোর্টের কী থাকল? সবই তো মন্ত্রণালয়ের। ১৮৬১ সালে কলকাতা হাই কোর্ট হয়েছে। তখন থেকে হাই কোর্টের বিচারকরা নিম্ন আদালত পরিদর্শন করেন। এ ব্যবস্থাই চলে আসছে। হাই কোর্ট কেন রাখবেন? হাই কোর্ট উঠিয়ে দিন।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা খুশি হয়েছিলাম মাননীয় আইনমন্ত্রী এসেছেন। এসে খসড়া দিয়ে গেছেন। প্রেসে বক্তব্য দিয়েছেন যে বিধিমালা হয়ে গেছে। কিন্তু এ কী রকম হলো!’ এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি বিদেশে যাওয়ার সময় মন্ত্রণালয় জিও দেয়।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তাহলে আপনি অ্যাভয়েড করছেন?’ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘না।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘খসড়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আমার যে আলাপ হয়েছিল, আমি যে বিষয়গুলো খসড়ায় রাখার কথা বলেছিলাম, হি ওয়াজ টোটালি স্যাটিসফায়েড। বাট তিনি সেদিন যে খসড়া দিলেন, সেখানে ‘‘কমপ্লিটলি ইউটার্ন’’।’ এই মতপার্থক্য দূর করে বিধিমালা চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবারের মধ্যে যে কোনো দিন বৈঠকে বসার তাগিদ দেন প্রধান বিচারপতি। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথক্করণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে আপিল বিভাগ যে রায় দেয়, তাতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা তৈরির নির্দেশনাও ছিল। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী বলে এর আগে এক শুনানিতে জানান আপিল বিভাগ। পরে ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেই সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়কে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়। এদিকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার বিষয় নিয়ে প্রধান বিচারপতির বৈঠকের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়কে জানাবেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার বিষয়ে কয়েক দিন আগে প্রধান বিচারপতির কাছে আইনমন্ত্রী একটা খসড়া দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ওই খসড়ার কয়েকটি ধারা সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে আমাকে আদালত জানিয়েছে, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আইনমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের, যাদের সরকার পাঠাতে চায় তাদের সঙ্গে বসতে চান। এ ব্যাপারটা সুরাহা করার জন্য। এ ব্যাপারে আমি আইন মন্ত্রণালয়কে জানাব।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর