সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

জেলে যেতে পারেন নওয়াজ শরিফ

ভাতিজা পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী?

প্রতিদিন ডেস্ক

জেলে যেতে পারেন নওয়াজ শরিফ

নওয়াজ শরিফ

পাকিস্তানের সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ কারাগারে যেতে পারেন। গত শুক্রবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণা করে যে রায় দিয়েছে তা কোনো গতানুগতিক রায় নয়। নওয়াজ শরিফ কত দিনের জন্য অযোগ্য থাকবেন রায়ে তা পরিষ্কার করে বলা হয়নি; তবে বহু আইন বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এ রায় যাবজ্জীবনের জন্য। ১৯৭৬ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে, কোনো সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা অথবা অসত্য ঘোষণার মামলা পাকিস্তানের সংবিধানের ৭৮ অনুচ্ছেদের ‘দুর্নীতি চর্চা’র আওতায় পড়ে। একই আইনের ৮২ ধারায় বলা হয়েছে, এ ধরনের দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে তিন বছরের কারাদণ্ড। সঙ্গে পাঁচ হাজার রুপি অর্থ জরিমানা অথবা দুই ধরনের সাজাই হতে পারে। কিন্তু নওয়াজ শরিফের মামলার রায় দেওয়া হয়েছে সংবিধানের ৯৯ ও ৬২-এর ১ উপধারা অনুসারে যেখানে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যদের সৎ হতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজ শরিফকে নানা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অসৎ বলে রায় দিয়েছে। এর আগে এ ধরনের মামলার রায়ে কয়েকজন সংসদ সদস্য জেল খেটেছেন। ফলে নওয়াজ শরিফকে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে নেওয়া হতে পারে। পাকিস্তানের সংবিধানে এ ধারা যোগ করা হয় সাবেক সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউল হকের আমলে। ধারাটি বহু সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ছেলেকে চাইছেন শাহবাজ : সবকিছু ঠিক থাকলে দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভাই নওয়াজ শরিফের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। কিন্তু এ পালাবদলের কারণে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পদটি যে ফাঁকা হচ্ছে সেখানে কে আসীন হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। নওয়াজের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএলএন)-এর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জানাশোনা রয়েছে এমন নেতাদের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, ছেলে হামজাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করতে চান শাহবাজ। তবে শেষ পর্যন্ত কে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হবেন তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে নওয়াজের ওপর। সূত্রগুলো জানিয়েছে, অবশ্য নওয়াজ শরিফ যাচ্ছেন না বাবা (শাহবাজ) ও ছেলেকে (হামজা) ক্ষমতায়ন করতে। পিএমএলএন-এর জ্যেষ্ঠ এক এমপি ডনকে বলেন, ‘শাহবাজ চান পাঞ্জাবের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও তার ছেলে হামজাকে বর্তমান পাঞ্জাব সরকারের বাকি মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার স্থলাভিষিক্ত করতে। হামজা এ পদের উপযুক্ত নাকি উপযুক্ত নন সেই সিদ্ধান্ত এখন নওয়াজের ওপর নির্ভর করছে।

মুখ্যমন্ত্রীর পদে যাকেই নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন তিনি শাহবাজের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করবেন। এক্ষেত্রে বহিরাগত একজনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ছেলের সঙ্গেই বেশি স্বস্তি পাবেন শাহবাজ। একই সঙ্গে শাহবাজ চান ছেলে শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা অর্জন করুক।’ ওই পিএমএলএন নেতা আরও জানান, শাহবাজ পরোক্ষভাবে পাঞ্জাবের বিষয়গুলো তদারকি করবেন। আর নিজের বাসভবনে বসে হয়তো পরোক্ষভাবে কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনা করবেন নওয়াজ।

নওয়াজের বিরুদ্ধে মামলার ঘোষণা : নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ খুরশিদ খান। অবিলম্বে নওয়াজকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন নওয়াজের বিরুদ্ধে খুরশিদ খানের এফআইআর করার সিদ্ধান্ত জানায়। শনিবার পেশোয়ার প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে মোহাম্মদ খুরশিদ বলেন, ‘পানামা পেপারসে যে পরিমাণ সম্পদের কথা প্রকাশ হয়েছে তা নিয়ে পার্লামেন্টে গোপন করার কারণে আমরা ইসলামাবাদের সেক্রেটারিয়েট পুলিশ স্টেশনে নওয়াজের বিরুদ্ধে এফআইআর করব।’ মামলা শুরুর দিন হিসেবে সোমবারের দিনটিকে বেছে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। খুরশিদের দাবি, ক্ষমতায় আসার আগে নওয়াজের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৫০ মিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি। আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নওয়াজের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩৫০ মিলিয়ন ডলারে। অথচ ২০১৩ সালের নির্বাচনে যখন জাতীয় পরিষদে আসন পাওয়ার জন্য নওয়াজ আবেদন করেন তখন সব সম্পদের হিসাব দেননি তিনি। একে অবৈধ ও অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন খুরশিদ।

বাসভবন ছেড়ে গেলেন নওয়াজ : প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানোর পর নওয়াজ শরিফ গতকাল সরকারি বাসভবন ছেড়েছেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডির ‘মুরি’ এলাকার দিকে রওনা হয়েছেন। সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী কুলসুম নওয়াজ, তাদের মেয়ে মরিয়াম নওয়াজ ও জামাতা ক্যাপ্টেন সাফদার।

বাসভবন ছাড়ার আগে নওয়াজ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সব কর্মীর সঙ্গে দেখা করেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক ধরও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সব কর্মীর সঙ্গে দেখা করেন। তিনিও শরিফ পরিবারের সঙ্গে মুরি যান।

অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে ভোটাভুটি আগামীকাল : অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদে ভোটাভুটির তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ভোট গ্রহণে দেশটির প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসেন আগামীকাল অধিবেশনের ডাক দিয়েছেন। কেবল অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বিষয়টিই রয়েছে ওই দিনের অধিবেশনের আলোচ্য সূচিতে। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে অযোগ্য ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের পর সেই শূন্যস্থান পূরণে একজন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে যাচ্ছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএলএন-নওয়াজ)। তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে কিছু সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে তাকে। সেই সময়ের জন্য একজন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবে নওয়াজের দল।

প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসেনের দফতরের কয়েকটি সূত্র উদ্ধৃত করে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন জানায়, কাল বিকাল ৩টায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসতে পারে। কেবল অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বিষয়টিই থাকবে অধিবেশনের আলোচ্য সূচিতে। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত (অন্তত ৪৫ দিন) অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। এর মধ্যে নওয়াজের দল পিএমএলএন-এর বৈঠকের পর নির্ধারণ হয় সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসীকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে বাছাই করার। অন্যদিকে, বিরোধী পক্ষের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি শেখ রশীদ আহমেদকে সমর্থন দিয়েছে ইমরান খানের দল তেহরিকে ইনসাফ পার্টি। এদিকে একই দলীয় বৈঠকে পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ছোট ভাই শাহবাজ শরিফের নাম ঘোষণা করেছেন সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।

পরিবারতন্ত্রে ক্ষুব্ধ ইমরান খান : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সদ্য পদত্যাগ করা নওয়াজ শরিফ নিজের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করায় তার সমালোচনা করেছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা ইমরান খান। তিনি বলেছেন, ছোট ভাইকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করে তিনি রাজতন্ত্রের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাইছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে কোনো গণতন্ত্রের চর্চা নেই। এটা আদতে রাজতন্ত্রের মতো। ডন, বিবিসি, এএফপি

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর