বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

চরম বিশৃঙ্খলা হজ ব্যবস্থাপনায়

বিমানমন্ত্রী বললেন, দায় নেওয়ার সময় হয়নি

মোস্তফা কাজল

হজ ব্যবস্থাপনায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এজন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় দায়ী করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে আর ধর্ম মন্ত্রণালয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগে এখন মুখোমুখি দুই মন্ত্রণালয়। বিমান মন্ত্রণালয় বলছে, ভিসাসংক্রান্ত জটিলতা শিগগির না কাটলে হজ ফ্লাইট পরিচালনায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, বিমান মন্ত্রণালয়ের ফ্লাইট শ্লট পেতে দেরি হওয়ায় ভিসার কার্যক্রম শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে হজসংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, অতিরিক্ত মুয়াল্লিম ফি, ভিসা প্রিন্ট জটিলতাসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান দু-এক দিনের মধ্যে না হলে হজ ফ্লাইটে জটিলতা আরও বাড়বে। তিনি গতকাল সচিবালয়ে হজসংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। এ সভায় ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও ধর্ম সচিব আবদুল জলিল উপস্থিত ছিলেন না।

হজ অফিস জানায়, গতকাল পর্যন্ত ৮৫ হাজার হজযাত্রীর পাসপোর্ট হাতে পায়নি তারা। এখন পর্যন্ত ভিসা পেয়েছেন ৪১ হাজার ৭১৪ জন। গতকাল পর্যন্ত ১৭ হাজার ৮৫৩ জন হজযাত্রী সৌদি আরব যেতে পারেননি। বাংলাদেশ বিমানের ১২টি হজ ফ্লাইট এরই মধ্যে বাতিল হয়েছে। পাশাপাশি গতকাল পর্যন্ত সৌদি এয়ারলাইনসের ৩টি ফ্লাইট বাতিল হয়। বাতিল হওয়া ১৫ বিমানের হজযাত্রী পরিবহনের চাপ বাড়বে বলে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া ভিসা ফির অতিরিক্ত ২০০০ রিয়াল জমা দেওয়ার নির্দেশনার কারণে হজ এজেন্সিগুলোও জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে। কীভাবে হজযাত্রীদের কাছে নতুন করে অতিরিক্ত টাকা চাইবে এ নিয়ে চিন্তিত তারা। এদিকে আগামীকালও যাত্রী সংকটে হজ ফ্লাইট বাতিল হতে পারে। বিমান মন্ত্রণালয় বলছে, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিগুলোর জটিলতার কারণে সংকটের সৃষ্টি। এদিকে জটিলতা কাটাতে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কথা ভাবছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে এই মন্ত্রণালয় মনে করে, গণবিজ্ঞপ্তি দিলে এজেন্সিগুলোর অতিরিক্ত ২০০০ রিয়াল আদায়ে সুবিধা হবে। বিজ্ঞপ্তি না দিলে ভিসা সংগ্রহ করতে সমস্যা থেকেই যাবে। বিমানমন্ত্রী মেনন বলেন, ভিসা জটিলতা ও মুয়াল্লিম ফিসহ নানা কারণে যাত্রীরা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে হজ করেছেন এমন যাত্রীর জন্য হঠাৎ করেই ২০০০ রিয়াল দাবি করেছে সৌদি দূতাবাস। ভিসা আবেদনের সঙ্গে টাকা প্রদানের রসিদ না দিলে ই-ভিসার আবেদনপত্র গ্রহণ করছে না তারা। হজযাত্রীরা নতুন ফি নিয়ে জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছেন। তাদের বক্তব্য, ‘আমরা প্যাকেজ অনুযায়ী এজেন্সিগুলোকে সব টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। এখন হজ ক্যাম্পে এসে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছি। হঠাৎ ২০০০ রিয়াল (প্রায় ৪৫ হাজার টাকা) কোথা থেকে দেব।’ তারা চাইছে বিষয়টি সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করতে। এজন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে হাব। ভিসা দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে হাব বলছে, এবার পাসপোর্টের সঙ্গে আলাদা কাগজে ই-ভিসা দিচ্ছে দূতাবাস। এতে সার্ভার জটিলতায় বেশি সময় লাগছে। পাশাপাশি দ্বিতীয়বার হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের বাড়তি ২০০০ রিয়াল জমা দেওয়ার নির্দেশনার কারণেও দেরি হচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (হজ) মো. হাফিজ উদ্দিন বলেন, সৌদি সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির সময় ২০০০ রিয়ালের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল না। সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ নতুন করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সিদ্ধান্তটি তারা শুধু বাংলাদেশি হজযাত্রীদের বিষয়ে নেয়নি। পৃথিবীর সব দেশের জন্যই এ সিদ্ধান্ত।

বিমানমন্ত্রীর প্রেস ব্রিফিং : প্রেস ব্রিফিংয়ে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, এ বছর সৌদি সরকার মুয়াল্লিম ফি বাড়িয়েছে ১ হাজার ৫০০ রিয়াল। একই সঙ্গে ২০১৫-১৬ সালে যারা হজে গেছেন তাদের জন্য অতিরিক্ত ৪৪ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া ই-ভিসা জটিলতার কারণেও ঠিক সময়ে হজযাত্রীরা যেতে পারছেন না। এসব জটিলতা নিরসনে সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। হজের সব সমস্যার জন্য দায় কার— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এখনই দায় দিয়েন না। হজ শেষ হলে দায় দিয়েন।’ ধর্মমন্ত্রী কিংবা সচিবের দায় আছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা রেগুলার মিটিং করছি।’ বৈঠক শেষে সমস্যার সমাধানের বিষয়ে বিমান মন্ত্রণালয়ের বার্তা কী— এ বিষয়ে মেনন বলেন, ‘আমাদের বার্তা হচ্ছে, ইনশা আল্লাহ উই শ্যাল ওভার কাম। প্লিজ নো টেনশন।’ এরপর মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন আসে, এর পরও কি আর কোনো হজ ফ্লাইটে আসন খালি যাবে? জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ফ্লাইটে আসন খালি যাবে না তা এখনই বলতে পারছি না। ফ্লাইট তারা প্রিপেয়ার (উপযোগী) করতে পারছে। আজকের পর ক্যানসেল হবে কিনা, তাও বলতে পারছি না।’ বিমানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দু-এক দিনের মধ্যে এটি সমাধান করতেই হবে। পরিস্থিতি জটিল হোক আর যাই হোক। আমি এটা মনে করি। আমরা কাজও করছি।’

আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে বিমানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিমান পরিকল্পনার সময় এমন লস হতে পারে ধারণা করে অতিরিক্ত ফ্লাইটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।  কিন্তু আজকালের মধ্যে যদি সমাধান না হয়, তাহলে এটা একটা জটিল সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে।’

সর্বশেষ খবর