শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

কঠোর হাতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন বাংলাদেশের প্রশংসায় ওআইসি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মহাসচিবের বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সফররত ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমেদ আল-ওসাইমীন এক বৈঠকে এ আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। ওআইসি মহাসচিব ৪ দিনের সরকারি সফরে গত বুধবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান। জেদ্দাভিত্তিক এই সংস্থার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। সৌদি আরবের প্রাক্তন সামাজিকবিষয়ক মন্ত্রী ড. ওসাইমীন গত বছরের ১৭ নভেম্বর ওআইসির নতুন মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে ওআইসি গঠিত হয়। ওআইসির সদস্য দেশ ৫৭টি। প্রেস সচিব জানান, বৈঠকে ওআইসি মহাসচিব বলেন, মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা এবং বাংলাদেশের মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। এই সংলাপ নেতৃবৃন্দের মাঝে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি ও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করবে। প্রেস সচিব বলেন, ওআইসি মহাসচিব অসংখ্য রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনি খুব উদার। এ সময় তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইসলাম শান্তি ও সহনশীলতার ধর্ম।  প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ওআইসি মহাসচিবকে জানান, বাংলাদেশকে এই সমস্যা নিয়ে ভুগতে হচ্ছে ১৯৯১ সাল থেকে। নিবন্ধিত ও অনিবদ্ধিত মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের কক্সবাজারে বসবাস করে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘মানবিক কারণে’ নোয়াখালীর হাতিয়ায় সরিয়ে নেওয়ারও ঘোষণা রয়েছে সরকারের। ওআইসি মহাসচিব রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের ওই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন বলে ইসহানুল করিম জানান। শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন, মিয়ানমার যাতে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়, সেজন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।  প্রেস সচিব জানান, ওআইসি মহাসচিব সাক্ষাৎকালে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেন। প্রধানমন্ত্রীও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তাকে জানান। শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি এবং এ কাজে ইমাম, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে কিছু রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলেও প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন। বৈঠকে ওআইসির মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমি সবসময় বলি যে আপনি একজন সফল নেতা এবং বিশ্বের মুসলিম নারীদের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ড. ওসাইমীন এ সময় বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকরা আন্তরিক, কঠোর পরিশ্রমী এবং পেশাদার। আগামী বছর বাংলাদেশ ওআইসির পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলন এবং ওআইসি পর্যটন মন্ত্রীদের সম্মেলনের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ওআইসি বাংলাদেশের নারীদের যে  কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারলে খুশি হবে। ওআইসি মহাসচিব বলেন, তার সংস্থা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিদ্যায় সদস্য দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি চালুর চিন্তা-ভাবনা করছে। শেখ হাসিনা বিভিন্ন খাতে তার সরকারের অর্জনের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের জনগণের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠাই তার সরকারের লক্ষ্য। জনগণের এই মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ জাতির পিতাকে হত্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এবং তার ছোট বোনকে ৬ বছর দেশে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর