শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

এরশাদের টার্গেট এখন ১০০ আসন

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে কোনো কৌশলে ১০০ আসনে বিজয় নিশ্চিত করতে চায় জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন ইউএনএস জোট। এজন্য নানান পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীরা যদি ১০০ আসনে বিজয়ী হতে পারে, তা হলে অন্য কোনো বড় দলের সমর্থন নিয়ে জাতীয় পার্টি আগামীতে সরকার গঠন করতে পারবে। বর্তমানে দলের সাংগঠনিক অবস্থায় কোনোভাবেই ১৫১ আসনে বিজয়ী হয়ে এককভাবে সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। কিন্তু দল ও জোটের পক্ষ থেকে এখন থেকে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামলেও অন্তত ১০০ আসনে জাতীয় জোটের প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পারে। জানতে চাইলে, পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমাদের টার্গেট ১৫১ আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করা। তিনি বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা আগামী নির্বাচনে, যে কোনো মূল্যে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাব। পল্লীবন্ধু এরশাদকে যে কোনো মূল্যে সরকার প্রধান বানানো হবে। এ জন্য আমরা আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলের বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে ১৫১ আসনে বিজয় সম্ভব কিনা জানতে চাইলে বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানের ভারত সফরের পর থেকে পার্টির নেতা-কর্মীরা কতটা চাঙ্গা তা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি বলেন, আমরা কত আসনে বিজয়ী হতে পারব সেটা সময় বলে দেবে। তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে এককভাবে সরকার গঠন করা। আর এই যাত্রায় দেশের মানুষের পাশাপাশি আমাদের বিদেশি বন্ধুরাও জাতীয় পার্টির পাশে থাকবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এ প্রতিবেদককে বলেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টি কেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কেউ এককভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আমরা যতই বলি না কেন এককভাবে নির্বাচন করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসব, এটি রাজনৈতিক বক্তব্য। তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান ১৫১ আসন টার্গেট করে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু যে কোনো মূল্যে ১০০ আসনে জয়লাভ করতে চান। আর ১০০ কিংবা তার চেয়ে কম পেলেও আমাদের নেতৃত্বেই সরকার গঠন হবে।

পার্টির দায়িত্বশীলরা বলছেন, কোনো কারণে যদি শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নিতে হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের কাছেও কমপক্ষে ১০০ আসন চাইবে জাপা। এ ব্যাপারে ভিতরে ভিতরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ আলোচনাও চলছে বলে জাপার নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, যদি শেষ মুহূর্তে এরশাদ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এরশাদের জাতীয় পার্টি ও তার নেতৃত্বাধীন জোটকে কমপক্ষে ৭০টি আসন ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে বৃহত্তর রংপুরে কমপক্ষে ১৫টি আসনে জাপাকে ছাড় দিতে হবে। দলের চেয়ারম্যান এরশাদ রংপুর -১ আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৭ ও লালমনিরহাটের আসনও জাপার পক্ষে ছাড়তে হবে আওয়ামী লীগকে। এ ছাড়া বিএনপির একটি অংশও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান বলেন, বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আগামীতে কোনো দলই এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে বরাবরের মতো আগামীতেও কে বা কারা সরকার গঠন করবে তা নির্ভর করবে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি বলেন, আমরা যত আসনই পাই না কেন, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সরকার গঠন হবে এমন প্রস্তাব যারা মানবে তাদের সঙ্গেই আমাদের নির্বাচন পরবর্তী জোট হবে। জানা গেছে, দলের চেয়ারম্যান আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের ও জোটের সম্ভাব্য হেভিওয়েট প্রার্থীদের ইতিমধ্যে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জোরেসোরে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদের নির্দেশ মোতাবেক দলের অন্তত শতাধিক শক্তিশালী প্রার্থী নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করছেন।

সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় পোস্টার ব্যানার লাগিয়ে সাধারণ মানুষের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন। ধর্মীয় সামাজিক অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে সাহায্য করছেন। এ ছাড়া এলাকায় গণসংযোগ করে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনছেন। ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সমস্যা সমাধানও করছেন জাপার সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা।

সর্বশেষ খবর