মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকায় স্থিতিশীলতা দেখতে চায় দিল্লি

সম্পর্কের ইতিবাচক বন্ধনে সমস্যাগুলো দূর করার পক্ষে মোদি সরকার

নঈম নিজাম, নয়াদিল্লি থেকে ফিরে

ঢাকায় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারাবাহিকতা দেখতে চায় দিল্লি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঢাকার শক্ত অবস্থানকে ইতিবাচক চোখেই দেখছে দিল্লির সাউথ ব্লক। তিন দিন দিল্লি অবস্থানকালে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর, সাউথ ব্লকের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দিল্লির সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনীতিকদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। আড্ডায়-আলোচনায় অনেক কথাই বলেছেন তারা। বাংলাদেশের বর্তমান স্থিতিশীলতার প্রশংসাও করল দিল্লির কূটনৈতিক মহল। বলল, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঢাকার সাহসী অবস্থান প্রশংসনীয়। বিভিন্ন খাতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো উত্তরণের ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদি সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখে। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর এরই মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অনেক সংকট নিরসন করেছেন। বিশেষ করে, স্থলসীমান্তে যেসব সমস্যা ছিল তার সমাধান হয়েছে। সীমান্তে কমেছে সংঘাত, সংঘর্ষ। দুই দেশের জন্মলগ্ন থেকেই ছিটমহল নিয়ে যে সমস্যা ছিল তার ইতিবাচক সমাধান হয়েছে। ভিসা জটিলতা দূর করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনকে দিয়েছে দিল্লি। সে অনুযায়ী ভারতের হাইকমিশন কাজও শুরু করেছে। ব্যবসা, বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করছেন দুই দেশের কূটনীতিকরা। চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্তে উত্তেজনা থাকলেও এই উপমহাদেশের বাকি দেশগুলোর সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায়। নরেন্দ্র মোদি সরকার বাংলাদেশকে আরেকটি কারণে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। তা হলো, সেভেন সিস্টারসভুক্ত সাতটি পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য নিয়ে কোনো টেনশনে থাকতে হচ্ছে না ভারতকে। ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে না। তাদের সব ঘাঁটিও উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের অনেক শীর্ষ নেতাকেও গ্রেফতারের পর হস্তান্তর করা হয়েছে ভারতের কাছে। এ বিষয়গুলোও দিল্লি সম্পর্কের উচ্চ বন্ধনের জন্য ইতিবাচক ধারায় দেখছে। দিল্লি মনে করে, বাংলাদেশে জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আশ্রয়-প্রশ্রয় না পেলে এ সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আরও বাড়বে। আগামী বছর যে কোনোভাবে তিস্তা চুক্তিও করে দেবে দিল্লি। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জিকে স্নায়ুচাপে রেখেছে দিল্লি। মমতাকে ইতিবাচক রেখেই সংকটের নিরসন চায় মোদি সরকার। আগের তুলনায় এখন মমতার সুরও নরম। এর মধ্যে বিজেপির চাপে পড়ে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়িয়েছেন মমতা। আগামী সপ্তাহে সোনিয়া, মমতা ও লালু প্রসাদ যাদবের মধ্যে বৈঠকের কথা রয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্ক বরাবরই ইতিবাচক। অন্যদিকে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দুই চালেই মোদি সরকারকে ঢাকার পক্ষে ইতিবাচক রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিল্লির একজন সিনিয়র সাংবাদিক আমাকে বললেন, ভারতের সামনে কোনো বিকল্প নেই। জঙ্গিবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে ভারত-বাংলাদেশের বর্তমান ইতিবাচক ধারাই দেখতে চায় দিল্লি।

সর্বশেষ খবর