শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

আশার আলো দেখছে বিএনপি

একাদশ সংসদ নির্বাচন

মাহমুদ আজহার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ‘আশার আলো’ দেখছে বিএনপি। ওই নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে বলে মনে করে দলটি। তাছাড়া নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগে অস্থিরতা তত বাড়ছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল এবং এ সংক্রান্ত রায়ে সর্বোচ্চ আদালতের বেশকিছু পর্যবেক্ষণেও খুশি দলীয় নেতা-কর্মীরা। দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের পথ ধরেই নির্বাচনকালীন গ্রহণযোগ্য একটি সরকারের দাবি আদায় সম্ভব হবে। সেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারও হতে পারে কিংবা অনুরূপ ‘সহায়ক সরকার’ও হতে পারে। এ নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্ফুল্লতা লক্ষ্য করা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী নির্যাতন, ধর্ষণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা-কর্মীর জড়িত থাকার ঘটনায় সাধারণ মানুষের বিরক্তবোধকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। দলের নেতারা মনে করেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, দুঃশাসনের পাশাপাশি চলতি ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও ঘরে-বাইরে বেকায়দায় সরকার। এ ছাড়া সদস্য সংগ্রহ অভিযানে এক মাসেই ৫০ লাখ ফরম বিতরণ করায় বিএনপি অনেকটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এক মাসেই লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক পূর্ণ হওয়ায় সন্তুষ্ট নেতা-কর্মীরা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই রায়ে আমাদের বিশেষভাবে উত্ফুল্ল হওয়া বা না হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে আমরা এ জন্য উত্ফুল্ল হয়েছি, এই সরকার-আওয়ামী লীগ কিংবা দেশের রাজনীতি সম্পর্কে আমাদের যে বক্তব্য ছিল সে বিষয়ে জনগণের মতামতের প্রতিফলন হয়েছে। আমরা একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে এই রায়কে স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি, এই রায়ের ভিত্তিতে সরকারের যদি ন্যূনতম মূল্যবোধ থাকে এবং নৈতিকতার লেশ মাত্র অবশিষ্ট থাকে তাহলে অবিলম্বে পদত্যাগ করে একটি সহায়ক সরকারের অধীনে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, যেখানে দেশের জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে।

ষোড়শ সংশোধনী সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের একাংশে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা লিখেছেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি নিরপেক্ষভাবে এবং কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে না হতে পারে, তাহলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অনুপস্থিতিতে একটি গ্রহণযোগ্য সংসদও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।’ তিনি মনে করেন, সংসদ ও নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণ আস্থা অর্পণ করতে পারছে না। এ দুটি প্রতিষ্ঠান যদি জনগণের আস্থা ও শ্রদ্ধা অর্জনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ থেকে বিরত থাকে, তাহলে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এটা ঐতিহাসিক রায়। পূর্ণাঙ্গ রায়টি সর্বমোট ৭৯৯ পাতার। রায়ের পুরোটাই পড়তে হবে। প্রকাশের পর আমি নিয়মিতই পড়ছি। সপ্তাহ খানেক লাগবে। এরপর আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব এ নিয়ে কী করা যায়। উচ্চ আদালতে রিট করবেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা এখনই বলা যাবে না। পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে বুঝতে পারব কোনো পথ খোলা আছে কি না।

জানা যায়, পূর্ণাঙ্গ রায়ের একটি কপি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর গত শনিবার বিকালে দলের সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী অংশ নেন।

বৈঠকে আইনজীবীদের রায়ের বিশ্লেষণ করতে বলা হয়। পরে তা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলের প্রধান বেগম জিয়াকে অবহিত করবেন। এরপর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হতে পারে। বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, রায় তো এখনো পুরোপুরি পড়ে দেখেনি। পড়ছি। এক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা এ নিয়ে পরবর্তী করণীয় কী হবে—সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।

বিএনপি নেতারা বলছেন, এ রায় বর্তমান সরকারের জন্য বড় ধাক্কা। এ ছাড়া দেশের সিনিয়র সব আইনজীবী, বিশিষ্টজনসহ সাধারণ মানুষের বড় একটি অংশই আদালতের রায়ের সঙ্গে পুরোপুরি একমত। তাই বিএনপি আশা করে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ এ রায়ের প্রতিফলন ঘটাবে। এ ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তরুণ ও নারীরা বিএনপির সদস্য হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। এতেই প্রমাণ হয়, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর