বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
হিসাব-নিকাশে দুই জোট

জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিয়েই নির্বাচনে যাবে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শুরু হয়েছে দুই জোটের নতুন হিসাব-নিকাশ। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে, এমন নিশ্চয়তা পেলে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে নিয়ে মহাজোটেই ভোট করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে বিএনপি থেকে বেরিয়ে যাওয়া নেজামে ইসলাম পার্টি ও হেফাজতে ইসলামের একটি অংশকে পাশে চায় দলের একাংশ। ১৪ দলে যেসব প্রার্থী বিজয়ী হতে পারবেন, নিশ্চিত হয়ে তাদেরই আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। এবার ভোট না থাকলে জোটে ‘ছাড়’ দেবে না আওয়ামী লীগ। বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে আরেকটি বিকল্প জোটকে মাঠে নামাতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কয়েকটি আসন দেওয়া হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। শুধু জোটের প্রার্থীই নয়, দলের প্রার্থী নিয়েও নতুন চিন্তাভাবনা করছে আওয়ামী লীগ। যারা নিজের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে বিতর্কিত তারা মনোনয়ন পাবেন না। তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের কাছে এবং সব মহলে গ্রহণযোগ্যদের নিয়ে ভাবা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এমন তথ্য দিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে বর্তমানে ১৩টি দল। এর মধ্যে অনিবন্ধিত কয়েকটি দলও রয়েছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি জোটের পক্ষে ভোটে অংশ নেয় ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি—জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদ ও তরীকত ফেডারেশন। এবারও জোটের শরিকরা শতাধিক আসন দাবি করতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে এ বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা হবে।

মহাজোট সরকারের শাসনামলে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় বাগিয়ে নিয়ে পাঁচ বছর মন্ত্রিত্ব করলেও ভোটের মাঠে শক্তি নেই দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দলের। নবম সংসদে তিনি টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী ছিলেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও তিনি অংশ নেননি। মন্ত্রিত্বের সুবাদে প্রথমবারের মতো মহাজোট আমলে জাতীয় সংসদে যাওয়ার সৌভাগ্য হয় এই বাম নেতার। আর সবশেষ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বর্তমানে সংসদের বাইরেই রয়েছেন দিলীপ বড়ুয়া। গত পৌর নির্বাচনেও তার দল অংশগ্রহণ করেনি। একই অবস্থা অনেক শরিক দলের। আওয়ামী লীগের জোটে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনভুক্ত গণতন্ত্রী দল। এবার সংসদ নির্বাচনে ১০টি আসন দাবি করতে পারে বলে জানা গেছে তারা। তবে সংসদ নির্বাচনে জিতে আসার মতো সাংগঠনিক শক্তি-জনসমর্থন নেই বলে জানা গেছে। জোটের গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদের একাংশ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র ও গণআজাদী লীগের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই। তাই এ চারটি রাজনৈতিক দলের দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। তবে তারা চাইলে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে পারে। কিন্তু দলগুলোর সেই সাংগঠনিক ভিত্তি ও জনসমর্থন নেই বলে জানা গেছে।

নবম সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের হয়ে অংশ নেয় এরশাদের জাতীয় পার্টি। গত সংসদ নির্বাচনে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এককভাবে অংশ নিয়ে এখন সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এরশাদের জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ করবে নাকি আলাদা, তা এখনো চূড়ান্ত বলা যাচ্ছে না। অবশ্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি সরকারে তিনি নিজেসহ দলের আরও তিন নেতা (আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, মশিউর রহমান রাঙ্গা) বেরিয়ে যাবেন বলেও একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন অবশ্য এখনো দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল মনে করছে, এরশাদ যা-ই বলুন, নির্বাচনের সময় শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবেন। জাতীয় পার্টি থাকলে মহাজোটেই ভোট হবে। তবে আওয়ামী লীগের এ দাবি কতটুকু ঠিক থাকবে, তা আগামী নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির আসলে কী পরিকল্পনা, তার ওপরে অনেকটা নির্ভর করছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক চান দলের হাইকমান্ড। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। সে কারণে নির্বাচনটি অনেক চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন তারা। তাই ভোটে জিতে আসতে সব ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এজন্য জোট না বাড়ালেও ভোটের মাঠে জনসমর্থন রয়েছে এমন রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশে চায় আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, বিএনপি থেকে বেরিয়ে যাওয়া ইসলামী ঐক্যজোট ও হেফাজতে ইসলামের সারা দেশে ভোট থাকায় ঐক্যজোট ও হেফাজতের একটি অংশকে পাশে চায় আওয়ামী লীগের একাংশ। তাদের যুক্তি, নির্বাচনে এসব ইসলামী দলের সঙ্গে জোট না হলেও একটা সমঝোতার মাধ্যমে ভোট করলে তা আওয়ামী লীগের জন্য সুফল বয়ে আনবে। এ দুটি ইসলামী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন বিএনপিত্যাগী ইসলামী ঐক্যজোটের বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী। এ জোটে নায়েবে আমির মুফতি আমিনীর ছেলে মাওলানা হাসানাত ও সেক্রেটারি মুফতি ফয়জুল্লাহ। ইসলামী ঐক্যজোট আলাদা একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছে। ভোটের মাঠে এ জোটকে কাজে লাগাতে চায় সরকার।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে আলাদা একটি জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এ জোট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ না দিলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোটে থাকছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সমঝোতা হলে বিকল্পধারাকে মুন্সীগঞ্জে ও বৃহত্তর নোয়াখালীর যে কোনো দুটি আসন ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট গত রমজানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইফতার পার্টিতে যোগদান করেছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভিতরে ভিতরে যোগাযোগ চলছে বলে জানা গেছে।

১৪-দলীয় জোটের শরিকরা গণহারে আসন দাবি করলেও এবার ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। যে আসনগুলোয় ভোটে জিতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলোয় ছাড় দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। নামসর্বস্ব কোনো দলকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। জোটে রাখা হলেও তাদের ভোটে ছাড় দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুই জোটের শরিকরা অধিকাংশ সময় মূল দল থেকে সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত থাকে। ঘরোয়া অনুষ্ঠানে জোরালো বক্তব্য দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাদের কর্মতৎপরতা। সম্মিলিতভাবে মাঠের লড়াইয়ে তাদের প্রায় কখনই সমানতালে অংশ নিতে দেখা যায় না।

সর্বশেষ খবর