বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
হিসাব-নিকাশে দুই জোট

জোট রেখেই অন্যদের সঙ্গে সমঝোতা চায় বিএনপি

মাহমুদ আজহার

টানা ১০ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এখন একাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও অপেক্ষায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার মতো ভুল আর করতে চান না তারা। এ কারণে নির্বাচনে যেতে সব ধরনের কৌশলই গ্রহণের চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। ২০-দলীয় জোটকে সঙ্গে রেখেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে সমঝোতাও করতে চায় তারা। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশের পাশাপাশি আসন ভাগাভাগির রাজনীতি করতেও আগ্রহী দলটি। সেই লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে বিএনপি যোগাযোগ করছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সরকারবিরোধী এক ‘বৃহৎ প্লাটফর্ম’ তৈরি করে ভোটে যাবে বিএনপি। এদিকে সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির চা-চক্র ভেস্তে যাওয়ার পর দলটি নতুন কৌশলে এগোচ্ছে। প্রকাশ্যে সভা না করে ভিতরে ভিতরে দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা চলছে। জানা যায়, ২০ দলের বাইরে থাকা দল গণফোরাম, বিকল্প ধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে নিয়মিতই যোগাযোগ রাখছে বিএনপি। এ ছাড়াও জোটের বাইরে কয়েকটি ইসলামী ও বাম দলের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা তাদের সঙ্গে নিয়মিতই কথাবার্তা বলছেন। এরই মধ্যে কয়েকটি দলের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতারা বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা কৌশলগতকারণে ২০-দলীয় জোটে যাবে না। এতে তাদের ওপর মামলা-হামলাসহ ব্যক্তিগতভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দাবি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন ও নির্বাচনী জোটে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কোনো কোনো দল। এ নিয়েও তারা আরও বিস্তর আলোচনা চান। এর আগে অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন কয়েকটি দলের সমন্বয়ে পৃথক একটি বিকল্প জোট হতে পারে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অংশীদার জাতীয় পার্টিকেও এ জোটে আমন্ত্রণ জানানো হলেও আপাতত তারা আসছে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে ভোটের আগমুহূর্তে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ প্রসঙ্গে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা সব দলের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে পারি। সেক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গেও হতে পারে। তবে শুনছি, তারা একটি সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবে। তাতে কী আছে স্পষ্ট নয়। দেশ ও জনগণের স্বার্থে যে কোনো প্রস্তাবই আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্র ও ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন একটি জোটে আছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে জোটগতভাবেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি। তারপরও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা অন্য দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক কথাবার্তাও হয়। তবে নির্বাচন নিয়ে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করার সময় এখনো আসেনি। এ সময় রাজনীতিতে অনেক কিছুই হতে পারে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক সমঝোতা হলে সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোকে বিএনপি বেশ কয়েকটি আসন ছেড়ে দেবে। এক্ষেত্রে বগুড়ার একটি আসনে মাহমুদুর রহমান মান্নার জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। একইভাবে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবসহ অন্যান্য দলের সিনিয়র নেতাদের জন্য আরও কয়েকটি আসনও ছেড়ে দিতে পারে। অন্য দলের জনপ্রিয় প্রার্থীকেও ছাড় দেওয়া হবে। আলোচনার ভিত্তিতে সেখানে বিএনপির কোনো প্রার্থী নাও দিতে পারে। এদিকে রব-মান্নাদের জোটকে স্বাগত জানালেও তাদের কর্মকাণ্ড ও গতিবিধির দিকে নজর রাখছে প্রধান দুই দল। আপাততদৃষ্টিতে সরকারের সঙ্গে থাকলেও শেষ মুহূর্তে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে তা নিয়েও রহস্যঘেরা বলেই মনে করা হচ্ছে। বিএনপি মনে করছে, নতুন জোট হলে সরকারের প্রতি আরও চাপ বাড়বে। সরকারবিরোধী ছোট ছোট আরও জোটের পক্ষেও দলটি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আচরণের বিরুদ্ধে যেসব রাজনৈতিক দল সোচ্চার, তাদের সঙ্গে কমবেশি আলোচনা হচ্ছে। প্রায় এক বছর আগে থেকেই এ কার্যক্রম চলছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। সরকারবিরোধী অন্য দলগুলো নিয়ে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে নির্বাচনে যেতে চাই আমরা।’

সর্বশেষ খবর