শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর অবদান অস্বীকার সার্বভৌমত্বে অবিশ্বাস : প্রধানমন্ত্রী

রায়ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ পদক্ষেপ নেবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে যে অবিশ্বাস করে, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে সে বিশ্বাস করে কি না সন্দেহ আছে। মেজর জিয়ার নয়, পকিস্তানে ইয়াহিয়া খান কেবল বঙ্গবন্ধুরই বিচার করতে চেয়েছিলেন। গতকাল বিকালে গণভবনে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সনাতন  ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমীতে নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ও সম্পাদকমণ্ডলীর যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘যারা স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ চায়নি, তাদের প্রেতাত্মা এখনো এ দেশে রয়ে গেছে। তারা সুযোগ পেলে ছোবল মারে। এ ব্যাপারে বাঙালি জাতিকে সতর্ক থাকতে হবে। এ বিষয়ে জনগণকে বোঝাতে হবে কারা তাদের কল্যাণে কাজ করে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর প্রহসনমূলক বিচার করে ফাঁসির রায়ে সই পর্যন্ত করেছিলেন ইয়াহিয়া। তখন কিন্তু ইয়াহিয়া খান জিয়াউর রহমানকে চাকরিচ্যুত করেননি। অন্য কারও কথাও বলেননি তিনি। বলেছেন একজনের কথা—তিনি জাতির পিতা। তিনি কেবল বঙ্গবন্ধুকেই পাকিস্তানের শত্রু হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য এটাই, যারাই বাঙালি জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে, যারাই এই জাতির মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কাজ করে এবং মানুষ এর সুফল পেতে শুরু করে, তখনই যেন একটি ষড়যন্ত্র দানা বেঁধে ওঠার চেষ্টা করে। যৌথ সভায় সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। স্বকীয়তা নিয়ে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। সেই স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম-নিশানা একেবারেই মুছে ফেলতে অনেক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো, আমাদের দেশের কয়েকটা প্রজন্মকে এই বিভ্রান্তির বেড়াজালে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সত্য যেটা, তা প্রকাশ হবেই। সত্য উদ্ভাসিত হবেই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৫ বছর ধরে ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলছেন, একক নেতৃত্বে স্বাধীনতা আসেনি। একক চেষ্টায় কোনো কিছু হয় না। কিন্তু সবকিছুর পেছনে লক্ষ্য থাকে, আদর্শ থাকে, স্বপ্ন থাকে, প্রেরণা থাকে, নেতৃত্ব থাকে, শক্তি থাকে; সেই শক্তি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসেছে। তবে কাউকে নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। কিছু লোক থাকে, তারা সুযোগ পেলে বিকৃত ইতিহাস সামনে তুলে নিয়ে আসে। কিন্তু বিকৃত ইতিহাস এখন আর কেউ বিশ্বাস করাতে পারে না। ইতিহাস চাপা দিয়ে রাখতে পারে না।

পদক্ষেপ নেবে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ : এদিকে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এই সংশোধনী নিয়ে কী করণীয় সেসব বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মত চান দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, জ্যেষ্ঠ নেতা শেখ আবদুল্লাহ বক্তৃতা করেন। বৈঠকে জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণে যা বলা হয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে বৈঠকে বলা হয়, পৃথিবীর গণতান্ত্রিক সব দেশে বিচারপতিদের ইমপিচ করার ক্ষমতা সংসদের হাতে রয়েছে। একমাত্র সামরিক সরকারশাসিত দেশগুলোতে এটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ‘কোনো একক ব্যক্তির কারণে হয়নি’ বলায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সমালোচনা করে নেতারা বলেন, জাতির জনকের অবদান অস্বীকার করে তিনি কী বোঝাতে চাইছেন? কারও একক চেষ্টায় কোনো কিছুই হয় না। কিন্তু সবকিছুর পেছনে কারও উদ্যোগ থাকে, প্রেরণা থাকে, সাংগঠনিক ক্ষমতা থাকে এবং মানুষকে উদ্বুব্ধ করার শক্তি থাকে। সেই শক্তি ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।

 বৈঠকে রায়ের পর্যবেক্ষণে যেসব অপ্রাসঙ্গিক বিষয় উঠে এসেছে সেগুলোর বিষয়ে নেতারা বলেন, এসব বিষয় অপ্রাসঙ্গিক, অনভিপ্রেত। ষোড়শ সংধোনীর কয়েকটি পর্যবেক্ষণ আপত্তিকর। রায়ের সঙ্গে এসবের কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। তবে সুপ্রিম কোর্ট আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। কিন্তু বিএনপি ভিন্ন উদ্দেশ্যে আমাদের সুপ্রিম কোর্টের প্রতিপক্ষ বানাতে চাইছে। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ আছে—এর একটি বিচার বিভাগ, একটি নির্বাহী বিভাগ এবং অন্যটি আইনসভা। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের সম্পর্কই সহায়কমূলক, পরিপূরক। আইনসভার কাজ আইন প্রণয়ন করা। এ আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা বিচার বিভাগের নেই। বিচার বিভাগের দায়িত্ব ন্যায়বিচার করা। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে কতগুলো পর্যবেক্ষণ আছে, যেগুলো আমাদের কাছে আপত্তিকর। এতে বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী নেতাদের মতামত গ্রহণ করেছেন। কী করা হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। তবে তিনি নেতা-কর্মীদের জনগণের কাছে গিয়ে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে যেসব ‘আপত্তিকর’ কথাবার্তা উঠে এসেছে সেগুলো পরিষ্কার করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছেও সেগুলো তুলে ধরতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর