রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

মুখ থুবড়ে পড়ছে বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলো

সাংগঠনিক কার্যক্রমে মন নেই কারও, সবাই চান মনোনয়ন

শফিউল আলম দোলন

একে একে মুখ থুবড়ে পড়ছে বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলো। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম কিংবা সাংগঠনিক কোনো কাজকর্ম নেই তাদের হাতে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগই ব্যস্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার লবিং-তদবিরে। তারা সবাই এমপি হতে চান। এজন্য সবকিছু বাদ দিয়ে এখন নির্বাচনে দলীয় টিকিট সংগ্রহের ‘লবিং-তদবিরে’ আদাজল খেয়ে লেগেছেন তারা। ফলে ভেস্তে যাচ্ছে সাংগঠনিক সব কর্মকাণ্ড। তবে সরকারের দমননীতি আর মামলা-হামলা, থানা পুলিশসহ প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির দোহাই দিলেন কেউ কেউ। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কমিটি নেই টানা দুই দশক ধরে। ছাত্রদলের কমিটিও চার বছর অতিক্রম করেছে।

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির তাঁতী দল ও মৎস্যজীবী দলের অবস্থাও বেহাল। এ চারটি অঙ্গদলের দ্রুত কমিটি গঠন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বলে দাবি করেছেন নেতা-কর্মীরা। কিন্তু অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে কমিটিগুলো আটকে আছে। কবে হবে কেউ বলতে পারছেন না। এ ছাড়া অন্য পাঁচটি অঙ্গসংগঠনের কমিটি হলেও মাসের পর মাস এমনকি বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না। এর ফলে আটকে আছে তাদের ইউনিট কমিটিগুলোও। কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় জেলা সফর করতে পারছেন না নেতারা। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, জাসাস ও শ্রমিক দল এই ত্রাহি অবস্থায় পড়েছে। জানা গেছে, রাজপথে আন্দোলন না থাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে কর্মসূচি পালন এখন অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। এসি রুমে বসে প্রতিবাদ সভা, জাতীয় প্রেস ক্লাব আর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে রাউন্ড-টেবিলে বক্তৃতা প্রদান এবং পার্টি অফিসে প্রেস ব্রিফিংয়ে ‘চেহারা মোবারক’ প্রদর্শনই হচ্ছে এখন তাদের সর্বোচ্চ কর্মসূচি। পুলিশের অনুমতি না পেলে মাঝেমধ্যে তারা ঘরোয়াভাবেও এসব কর্মসূচি পালন করতে পারেন না। তবে কেউ কেউ আবার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক-শোয়ও যাওয়া শুরু করেছেন। তাদের দেখাদেখি আবার আরেকটা গ্রুপ ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রোগ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বগুড়ায় মা-মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় কর্মসূচি ছিল না মহিলা দলের। অবশেষে চেয়ারপারসন কার্যালয় থেকে একজন তাগিদ দিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানকে প্রধান অতিথি করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে দেন। অন্যদিকে ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তার কার্যক্রমও চলছে দায়সারাভাবে। কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যস্ত মনোনয়ন পাওয়ার লবিংয়ে। যুবদলে যুবনেতার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। সরকারের দমননীতির মুখে খুব বেশি নড়াচড়াও করতে চান না তারা। যুবদল, ছাত্রদল চলে এখন বিবৃতির ওপর। শ্রমিক দলের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর। এ সময় কোনো একটি উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি পালন দূরের কথা, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতারাই ঠিকমতো চিনে উঠতে পারেননি। এর চেয়ে বড় কথা, দল কিংবা জনস্বার্থে কোনো কর্মসূচি পালন না করতে পারলেও নিজেদের স্বার্থে এসব অঙ্গসংগঠনের নেতাদের বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করতে দেরি হয় না। আর বিবৃতিতে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় তোলাটা তো একেবারে মামুলি ব্যাপার। ছয় মাস আগে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন শফিউল বারী বাবু। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারলেও ঈদের পর বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফিরলেই তা সম্পন্ন করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে। তিনি জানান, ‘দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ঘরোয়া সভা করলেও পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। এর মধ্যেও সতর্কতার সঙ্গে ঝটিকা মিছিল বের করি; যাতে পুলিশ নেতা-কর্মীদের ধরতে না পারে। তা ছাড়া সবচেয়ে বড় উপদ্রব হচ্ছে তৃণমূলে পুলিশি বাণিজ্য; যা এখন চরমে উঠেছে। মামলা থাকুক বা না থাকুক নেতা হলেই হলো। মাঝেমধ্যেই পুলিশ গিয়ে বাড়িতে হানা দিয়ে ধরে নিয়ে আসে। চাহিদা মেটাতে পারলে ছেড়ে দেয়, না পারলে কোর্টে চালান করে কারাগারে পাঠায়। এ ধরনের প্রতিকূল অবস্থায় চলতে হচ্ছে আমাদের।’ ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি দলের এখতিয়ার।’ কর্মসূচি পালনের বিষয়ে তিনি জানান, সর্বশেষ তার আইনজীবী তার বিরুদ্ধে সরকার ৮৬টি মামলা দায়ের করেছে বলে হিসাব দিয়েছেন। এসব মামলা মোকাবিলা করেই চলছে তার দৈনন্দিন কাজকর্ম। তিনি আরও জানান, গত দুই বছরে রাজধানী ঢাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাত্রদলের ২৭ নেতাকে ধরে নিয়ে গুম করেছে। এখনো এদের হদিস পাওয়া যায়নি। এভাবে সারা দেশে শতাধিক নিখোঁজ রয়েছেন। হত্যাকাণ্ডেরও শিকার অনেকে। মামলা, জেল-জুলুম তো আছেই। এসবের মধ্যেই যতটা সম্ভব সাংগঠনিক কাজকর্ম করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তবে এ অবস্থার শিগগিরই পরিবর্তন আসবে বলে আশা ব্যক্ত করেন রাজীব।শ্রমিক দল সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সব সংগঠনেরই একটু গা ছাড়া ভাব থাকে। তার কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে প্রায় এক বছর। আশা করছেন বেগম জিয়া দেশে ফেরার পরপরই কাউন্সিল করবেন। তা ছাড়া মামলা-মোকদ্দমার পাশাপাশি শারীরিকভাবেও তিনি বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ফলে সব মিলিয়ে সাংগঠনিক কাজে কিছুটা ভাটা পড়ে। তবে সম্প্রতি তিনি আবারও পূর্ণোদ্যমে সাংগঠনিক কাজ শুরু করেছেন বলে জানান।

সর্বশেষ খবর