রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

শাহজালালে আগুন নিয়ে নানা প্রশ্ন

কাজ শুরু করেছে দুই তদন্ত দল

নিজস্ব প্রতিবেদক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে নানা প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে। এমন সুরক্ষিত স্থানে কীভাবে অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটল, এ বিষয়টি রীতিমতো ভাবিয়ে তুলছে সিভিল এভিয়েশন, দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্তাব্যক্তিদেরও। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে গঠিত দুটি তদন্ত সংস্থার কাজ। গতকালই তদন্ত দল দুটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলসহ বিমানবন্দরের বিভিন্ন ইউনিটে স্থাপিত সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখবে বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার দুপুরে বিমানবন্দরে লাগা আগুন বিকালে নিয়ন্ত্রণে আসার পর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) পাঁচ সদস্য ও ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান উপপরিচালক (ঢাকা) দেবাশীষ বর্ধন গতকাল বলেন, ‘আমরা বেলা ১১টার থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ সময় ৮-১০ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহে রাখা হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া থেকেই যে আগুনের সূত্রপাত তা আমরা এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছি। তবে কী কারণে আগুন লেগেছে, তা জানতে সময় প্রয়োজন।’ তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিমানবন্দরের প্রতিটি ফ্লোরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ফায়ায় ফাইটিং ইন্ট্রুমেন্ট বসানো রয়েছে। কোনো ধরনের ধোঁয়া কিংবা আগুনের আঁচ পেলেই অ্যালার্ম বেজে ওঠার কথা। অ্যালার্ম সময়মতো কাজ করলে ফায়ার এক্সটেনগুইশার দিয়েই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কথা। সূত্র আরও বলছে, আগুনের উৎপত্তিস্থল এয়ার ইন্ডিয়ার অফিসও তালাবদ্ধ ছিল আগের রাত সাড়ে ৯টার পর থেকে। তবে পার্শ্ববর্তী সৌদি অ্যারাবিয়া এয়ারলাইনস ও কুয়েত এয়ারওয়েজের অফিস খোলা থাকলেও শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য সেখানে অনেকটা শিথিলতা ছিল ওই সময়। এ ছাড়া বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে কেউ স্মোকিং জোন ছাড়া অন্য কোথাও ধূমপান করেন না। আবার বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেও যদি আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকে তাহলে ফায়ার অ্যালার্ম ঠিকমতো কাজ করেনি বলে দাবি করেছেন সিভিল এভিয়েশনের একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, বিমানবন্দরের ফায়ার অ্যালার্মগুলো অনেক আগের। এগুলো কাজ করলে ফায়ার এক্সটেনগুইশার দিয়েই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কথা। এদিকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান বেবিচকের পরিচালক (প্রশাসন) সাইফুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শুরু করেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আগুন কীভাবে লেগেছে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বেবিচক পরিচালক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিটিতে সংস্থার সহকারী পরিচালক আবু সালেহ মো. খালেদ (অগ্নি), নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার মোর্শেদ, ডিজিএফআইয়ের উইং কমান্ডার হাবিবুর রহমান ও এনএসআইয়ের প্রতিনিধি ননী গোপাল রয়েছেন। গতকাল বেবিচকের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ফায়ার কন্ট্রোল মনিটরের আগুনের সূত্র হিসেবে এয়ার ইন্ডিয়া অফিস চিহ্নিত হয়। আগুনে এয়ার ইন্ডিয়া ও পাশের কাতার এয়ারওয়েজের অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দুটি এয়ারলাইনসের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বিমানবন্দরে সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিমানবন্দরে লাগা আগুনে প্রায় তিন ঘণ্টা বহির্গমন কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর অন্তত দেড় ডজন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। তবে ওই সময়ে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণে  কোনো বিঘ্ন ঘটেনি বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলছে বেবিচক। গতকাল রাতে এয়ার ইন্ডিয়ার স্টেশন ম্যানেজার রাজেন্দ্র কলি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের অফিস আগুনে পুড়ে গেলেও ফ্লাইট বন্ধ হয়নি। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো পরিমাপ করা হয়ে ওঠেনি।

সর্বশেষ খবর