রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাহুবলে ইমাম পরিবর্তন নিয়ে সংঘর্ষ দুজন নিহত

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মুগকান্দি গ্রামে মসজিদের কমিটি ও ইমাম পরিবর্তন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে লন্ডন প্রবাসীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০০ রাউন্ড বুলেট ও ২৫ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় সম্পৃক্ত আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল ফজরের নামাজের পর এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজের পরও উভয় পক্ষের মধ্যে দুই ঘণ্টা সংঘর্ষে ৫০ জন আহত হয়েছিলেন। গতকাল সংঘর্ষে নিহতরা হলেন পূর্ব মুগকান্দি গ্রামের লন্ডনিবাড়ীর ছাবু মিয়ার ছেলে লন্ডন প্রবাসী কবির মিয়া (৪৫) এবং আখঞ্জিবাড়ীর মুসলিম মিয়ার ছেলে মতিন মিয়া (৫০)। কবির মিয়া ঘটনাস্থলে ও মতিন মিয়াকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ইউনিয়নের মুগকান্দি জামে মসজিদের কমিটি গঠন ও ইমাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে বিরোধ চলছিল। এক পক্ষ বর্তমান ইমান ফরিদ আখঞ্জির পরিবর্তন চায়। অপর পক্ষ ওই ইমামের পক্ষে অবস্থান নেয়। এ অবস্থায় শুক্রবার জুমার নামাজে সাতকাপন ইউপি চেয়ারম্যান মুগকান্দি গ্রামের আবদাল মিয়া আখঞ্জির অনুসারী সোহেল মিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের শফিক মাস্টারের বাগিবতণ্ডা হয়। এ বাগিবতণ্ডার জের ধরে বাদ জুমা উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র এএসপি রাসেলুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে  শটগানের ১০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী সংঘর্ষে উভয় পক্ষে অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাই বিষয়টি মীমাংসার জন্য উদ্যোগ নেন। তিনি উভয় পক্ষকে শুক্রবার রাতে অফিসে আসার আহ্বান জানালে লন্ডনিবাড়ীর পক্ষের লোকজন এলেও আখঞ্জিবাড়ীর পক্ষের কেউ আসেননি। রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে উভয় পক্ষের আটজনকে আটক করে। গতকাল ভোরে ফজরের নামাজের পর উভয় পক্ষ আবারও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে দুজন নিহত হন এবং আহত হন শতাধিক। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাহুবল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বলেন, ‘মসজিদের ইমাম নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি মীমংসার উদ্যোগ নিই। কিন্তু লোকজন সে উদ্যোগে সাড়া না দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা যদি বার বার সেখানে না যেতেন তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করত।’ এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে শটগানের ১০০ রাউন্ড গুলি ও ২৫ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনো মামলা হয়নি। তবে উভয় পক্ষ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সর্বশেষ খবর