রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিপদে পড়ার সংস্কৃতিতে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিপদে পড়ার সংস্কৃতিতে মানুষ

বাংলাদেশের মানুষ ‘বিপদে পড়ার কালচারের’ মধ্যে ঢুকে গেছে। মানুষ এখন প্রতিবাদ করতে গেলে পরিবারের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়। বলা হয়, প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিপদে পড় না। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, যদি অপহরণের ঘটনা একটিতে শেষ হতো, তাহলে অপহরণের শিকার ব্যক্তি ও তাদের স্বজনেরা মুখ খুলতেন।

‘আইনের শাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি। কমিটির অন্যতম সদস্য এবং আইন ও সালিস কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বলেন, স্বজ্ঞানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিবর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলা হয়েছে। কারণ বাহিনীর সঙ্গে রক্ষাকারী শব্দটা আর যায় না। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিককে অজ্ঞাতপরিচয় লোকজন অপহরণ করে তিন বছর আগে। অপহরণের পরপরই থানায় মামলা করলেও কারা এর পেছনে ছিল, সে সম্পর্কে তদন্তে কিছু জানা যায়নি। রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘টেলিভিশন টকশোতে দেখলাম, শুনলাম, যারা অপহৃত হয়ে ফিরে আসছেন, তারা আর কথা বলেন না। এ প্রসঙ্গে বেলা প্রধান ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, এটা বুঝবার বুদ্ধি নেই আপনাদের? কথা কেমন করে বলবে? যদি একটা অপহরণের ঘটনাই হতো শেষ অপহরণের ঘটনা, তাহলে অবশ্যই যারা অপহৃত হয়েছেন, তারা এবং তাদের পরিবার কথা বলত। একটা অপহরণের ঘটনা সারতে না সারতেই যদি দেখেন সাতজন অপহরণ হয়েছে, তাও আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে এবং এমন পর্যায় থেকে যাকে আপনি ফেলে দিতে পারবেন না। বেলার নির্বাহী প্রধান বলেন, ?‘যেসব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আস্থাহীনতা চরম, অবিশ্বাস চরম, সেখান থেকে মুক্তি পেতে হলে, কোনো আইন বাতিল করতে হলে আমাদের তা বাতিল করতে হবে। যদি বিডিআরের নাম বদলে যেতে পারে, যে সে মূল্যবোধ নিয়ে ব্যাজ পরতে পারছে না, তাহলে র?্যাবের ব্যাপারেও আসলে আমাদের চিন্তা করতে হবে।’ আলোচনা সভায় সাতক্ষীরার জেসমিন নাহার নামে এক নারী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, তার স্বামীর তিন দিন হাজতে অবস্থানের সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের প্রতিবেদনে। বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পরও পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করছে। তাকে ?‘জঙ্গি’ বলে প্রচার করছে। আলোচনা সভার সমন্বয়ক সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আইনে অপহরণের ব্যাপারে বিধান আছে, যখন কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তারা কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই গ্রেফতার করছে। সে কারণে গ্রেফতারের পরিবর্তে তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো বেআইনি শব্দগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে। যেহেতু আইনি প্রক্রিয়া না মেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত প্রতিকার আসলে নেই বলে মন্তব্য করেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

সর্বশেষ খবর