সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিকৃত ইতিহাস : আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতি যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তাতে ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নাই।’ তিনি বলেন, ‘রায়ের পর্যবেক্ষণে ইতিহাস বিকৃতি অসদাচরণ কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।’

গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ডিআরইউ আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’-এ তিনি এসব কথা বলেন। ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক। ব্যাখ্যা দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমাদের স্বাধীনতা কিন্তু রাতারাতি আসে নাই। স্বাধীনতার ঘোষণাটাও রাতারাতি হয় নাই। একটা রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের রায়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। এটাকে আমি বিকৃত করলেও আমি একটা অপরাধ করব।’ মন্ত্রী রায়টি পড়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘এখানে বঙ্গবন্ধু শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। তবে কোনো একক ব্যক্তির নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি বলে কথাটি আছে। প্রথমত কথা হচ্ছে, এ মামলায় এটা অপ্রাসঙ্গিক। দ্বিতীয়ত এটা ইতিহাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এবং ফাইনালি এটা ইতিহাস বিকৃত করার সমান।’ এটা অসদাচরণ কি না— সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অসদাচরণের কোনো সংজ্ঞা এখন পর্যন্ত নাই। সে ক্ষেত্রে এটা খতিয়ে দেখতে হবে। অসদাচরণ কিংবা অন্য কিছু কি না তা খতিয়ে দেখার অবকাশ আছে।’ বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো বিচারকের অসদাচরণের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার কর্তৃত্ব কার হাতে—এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এর অথরিটি এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। এর কারণ হচ্ছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সম্পর্কে যদি (সংবিধানে) কোনো বক্তব্য না থাকে, আর ষোড়শ সংশোধনীও যদি না থাকে, তাহলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছাড়া আর গতি নাই।’ রায়ে প্রধান বিচারপতির ‘অগ্রহণযোগ্য’ বক্তব্য সরকার কীভাবে এক্সপাঞ্জ করতে চায়— জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘আদালতের মাধ্যমেই তা করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের রুল বলে, রিভিউয়ের মাধ্যমে এর জন্য আবেদন করতে হয়। আমরা এখনো সিদ্ধান্তে আসিনি। এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।’ রিভিউ-সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘এটা কিন্তু ৭৯৯ পাতার একটা রায়। রিভিউ করতে গেলেও পড়ে জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। আজ-কাল-পরশুর মধ্যে হয়ে যাবে সেটা আমি বলব না। বিশদভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ওখানে আপত্তিকর, অপ্রীতিকর ও অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা আছে। সেগুলো এক্সপাঞ্জ করার কথা আমি বলেছি। সে বিষয়ে কাজ চলছে।’ এ রায়ের মধ্যে বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে কি না—জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘জুডিশিয়াল, লেজিসলেটিভ ও এক্সকিউটিভ— এই তিনটি বিভাগ হচ্ছে রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পথ চলতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। সেটি মুখ্য নয়। আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করে এগিয়ে চলাটাই মুখ্য। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ব্যক্তিগতভাবে না দেখে তিনটি চেয়ারকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এখানে তিন ব্যক্তি গৌণ, চেয়ারটি মুখ্য। আমরা চেয়ারকে সম্মান করব, আশপাশে ফিরেও তাকাব না।’ মিট দ্য প্রেসে সাংবাদিকরা সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিষয়টি তুললে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সাগর-রুনির মামলার ব্যাপারটা কঠিন। তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছি, তারা তদন্ত করছেন।’ তিনি বলেন, ‘আইনের শাসনের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার থেকে আমি বলতে পারি, সাগর-রুনির মামলার তদন্ত শেষ হবে। অপরাধীদের বিচার হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত শেষ না হয়, ততক্ষণ আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, করতেই হবে। এটা আপনারা কখনো মনে করবেন না যে তদন্ত থেমে গেছে বা তদন্ত অন্যদিকে চালিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা হচ্ছে না।’ মন্ত্রী বলেন, ‘‘এ মামলাটি ‘কঠিন মামলাগুলোর একটি’। আপনারা হয়তো বলবেন, ধৈর্য আর কত দিন ধরব! ঠিক কথা। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তদন্তকারীরা প্রতিবেদন না দেয়, ততক্ষণ আমার-আপনার কিছু করার নেই।” প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সাক্ষাতের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল রাতে সাক্ষাৎ হয়েছে। তবে এখনো সাক্ষাতের বিষয়বস্তু জানি না। তবে এটা ঠিক যে বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলতে পারে। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে আলাপ-আলোচনা চালাতে পারেন তারা।’

সর্বশেষ খবর