সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতি শুধু রায় নিয়েই

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতি অব্যাহত আছে। গত কয়দিন ধরেই রায়ের সমালোচনা করে তারা বক্তৃতা দিচ্ছেন।

গতকাল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল বৈঠক করে রায় প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ছাড়া একই দিনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সমালোচনা করে বক্তৃতা করেন।

গর্তে থাকা বিএনপিকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে : বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড : দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় অগ্রহণযোগ্য। এতে করে গর্তে থাকা বিএনপিকে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের পর বিএনপি গর্ত থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে।  তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি প্রধান বিচারপতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, অসম্মান করব না, আপনি অবজারভেশনে যা লিখলেন সেটা কি কথা হলো? এক ব্যক্তির নেতৃত্বের কথা বললেন, বঙ্গবন্ধুর বাইরে ২-৪টা লোকের কথা বলতে পারবেন, যারা স্বাধীনতার জন্য জেল খেটেছেন, ফাঁসির সামনে গিয়েছেন? তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে জিয়াউর রহমানের হাত ছিল। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। সুযোগ পেলেই ছোবল মারবে। সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, চক্রান্ত নিঃশেষ হয়ে যায়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে ফেলতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীনের পরে রাজাকারদের ক্ষমা করে দেওয়া বড় ভুল ছিল। সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনাকারীদেরও বিচার করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল জাসদ। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চক্রান্তের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। চক্রান্ত এখনো চলছে, সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাবে।

বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, চক্রান্তের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও হত্যার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি সাইফুল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে ফেলা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আজিজুল ইসলাম ভূইয়া, মাহফুজা খানম, সৈয়দ বদরুল আহসান প্রমুখ।

আলোচনা শেষ হয়নি : গতকাল বিকালে শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, তার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আরও আলোচনা হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি প্রধান বিচারপতির বাড়িতে গিয়েছিলাম। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে যে পর্যবেক্ষণ ছিল সেগুলো নিয়ে দলের বক্তব্য তাকে জানিয়েছি। আলোচনা শেষ হওয়ার আগে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। সময়মতো সব কথা আপনারাও জানবেন, আমিও বলব।

রায় প্রত্যাখ্যান ১৪ দলের : ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় প্রত্যাখ্যান করেছে ১৪ দল। রায় পুনর্বিবেচনা এবং রায়ের পর্যবেক্ষণে থাকা বিভিন্ন বিষয় বাদ দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে এ জোট। গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, একটি সার্বভৌম সংসদকে অবহেলা করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের যে রায় দেওয়া হয়েছে তা ১৪ দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা রায়কে প্রত্যাখ্যান করি। জাসদ একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যা বলা হয়েছে সেটি কার্যত বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করা হয়েছে।

আন্দোলনের হাতিয়ার বানানোর চেষ্টা : জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বঙ্গবন্ধু একাডেমি আয়োজিত আলোচনা সভায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, প্রধান বিচারপতির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে বিএনপি রাজনীতি করতে চায়। রায়কে বিএনপি এখন আন্দোলনের হাতিয়ার বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

পদত্যাগ দাবি : প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে সম্মানের সঙ্গে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, এই দেশের মানুষ আপনাকে আর প্রধান বিচারপতি পদে দেখতে চায় না।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। আলোচনা সভায় সাবেক বিচারপতি সামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে শপথ ভঙ্গের অভিযোগ আনেন। 

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের ক্ষমতা কেবল সংসদের : আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম গতকাল গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে একটি সড়ক উদ্বোধনকালে বলেছেন, প্রধান বিচারপতি বাতিলের রায় দিলেই তো বাতিল হয়ে গেল না। এটা বাতিল করার ক্ষমতা একমাত্র সংসদের।

সর্বশেষ খবর