মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রপতিকে সব জানিয়েছেন কাদের

আলাদাভাবে সাক্ষাৎ প্রধান বিচারপতির

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে বৈঠকের এক দিন পর গতকাল বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বেলা ১২টার দিকে ওবায়দুল কাদের বঙ্গভবনে যান। দুপুর ১টা পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন। এর আগে বঙ্গভবনে শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান বিচারপতি।

বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের দলের অবস্থানের কথা রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরেছি। রায় নিয়ে আমাদের দলের প্রকৃত অবস্থান কী সে বিষয় ব্যাখ্যা করেছি। তিনি বলেন, যেহেতু রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অভিভাবক, তিনি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন, তাকে আমি বিষয়টি  জানিয়েছি। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে যেসব কথাবার্তা হয়েছে সে বিষয়েও রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছি। ওবায়দুল কাদেরের সাক্ষাতের কিছুক্ষণ আগে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষ করে বঙ্গভবন ছাড়েন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। তার সঙ্গে দেখা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। এখানে যে অনুষ্ঠান আছে আমার জানা ছিল না। ওবায়দুল কাদের জানান, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণ অংশে যেসব কথা বলা হয়েছে সে বিষয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে দলের যে অবস্থান তুলে ধরা হয়, সেটাই তিনি রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, এর আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকের বিষয় দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছিলাম। আজকে রাষ্ট্রের অভিভাবক রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করলাম।

ষোড়শ সংশোধনীর রায় দ্রুত রিভিউ করা হবে কিনা-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমাদের আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনা শেষ হওয়ার আগে কোনো কথা বলব না। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ঘণ্টাখানেকের এই সাক্ষাতে কিশোরগঞ্জে তার এলাকার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন বিষয়েও খোঁজখবর নেন বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি সবসময় তার এলাকায় সড়কপথে যেতে পারেন না বলে দুঃখ করেন। আমরা উনার এলাকার রাস্তা তৈরির যে কাজ করছি সে বিষয়ে কথা বলেছি। অনেকগুলো রাস্তার কাজ শুরু করেছি।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে সরকার, রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে চলমান আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ওবায়দুল কাদের পৃথক পৃথক সাক্ষাৎ করলেন। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, তা ‘অবৈধ’ ঘোষণার রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন। রায় প্রকাশের পর থেকেই এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রধান বিচারপতির কড়া সমালোচনা করলেও বিএনপি একে ‘ঐতিহাসিক’ বলছে। আওয়ামী লীগ মনে করছে, রায়ের পর্যবেক্ষণে রাজনীতি রয়েছে। এর পেছনে ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে। আবার রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। ২ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী বাতিলসংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর প্রায় এক সপ্তাহ সরকার ও আওয়ামী লীগ প্রায় নীরব ছিল। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এই রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই সরকারের মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে রায় নিয়ে সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আসা ‘অনভিপ্রেত’ বিষয়গুলো বাদ দেওয়াই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য বলে সূত্র জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর