মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাড়তি হজ ফি’র সংকট কাটেনি

মোস্তফা কাজল

হজ এজেন্সিগুলো সৌদির নির্ধারিত মোয়াল্লেম ফি সম্পূর্ণভাবে পরিশোধ না করায় নতুন করে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। এজেন্সিগুলো হজযাত্রী পিছু এক হাজার পাঁচশ রিয়াল মোয়াল্লেম ফির মধ্যে পাঁচশ রিয়াল পরিশোধ না করায় হাজীদের হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণে সহায়তা করবে না সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সৌদি মোয়াল্লেমেরা। হাজীদের মিনায় যাওয়ার আগেই অবশিষ্ট পাঁচশ রিয়াল পরিশোধের জন্য তারা সময় বেঁধে দিয়েছেন। জানা গেছে, প্রায় দশ হাজার বাংলাদেশি হাজীর পাঁচশ করে মোয়াল্লেম ফি প্রদান করেনি হজ এজন্সিগুলো। এদিকে গতকাল পর্যন্ত ১৬ হজ এজেন্সি প্রায় ১০ হাজার হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। গতকাল পর্যন্ত সৌদিতে হাজী গেছেন মাত্র ৬৩ হাজার ৮৬ জন। দুই দিন বাড়িয়ে আগামী ২৮ আগস্ট পর্যন্ত হজ ফ্লাইট রয়েছে। অর্থাৎ বাকি ১৩ দিনে আরও ৬৪ হাজার ১২ জন হজযাত্রীকে সৌদি আরবে যেতে হবে। এমন সংক্ষিপ্ত সময়ে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। গতকাল সকাল পর্যন্ত ভিসা  পেয়েছেন এক লাখ ১১ হাজার যাত্রী। এখনো হজভিসা পাননি মোট ১৬ হাজার ১৯৮ জন। ভিসার আবেদন করা যাবে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত। অর্থাৎ আর মাত্র দুই দিন বাকি আছে। কিন্তু এখনো ভিসার আবেদনই করেননি ১০ হাজার ১৯৮ জন। গত বছর সৌদিতে সর্বনিম্ন মোয়াল্লেম ফি ছিল ৭২০ রিয়াল। এ বছর এটি দ্বিগুণ করে এক হাজার ৫০০ রিয়াল করা হয়। পাশাপাশি পুনঃহজের ফি নতুন করে অতিরিক্ত ২০০০ রিয়াল নির্ধারণ করা হয়। এ নিয়ে ৯১টি এজেন্সির ১৪ হাজার হজযাত্রীর ক্ষেত্রে এমন জটিলতা সৃষ্টি হয়। তখন সরকারের মধ্যস্থতায় কিস্তিতে এ টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়। প্রাথমিকভাবে এক হাজার রিয়াল দিয়ে সৌদির হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে দেশের  বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো। বাকি থাকে ৫০০ রিয়াল। জানা গেছে, এ বছর মোয়াল্লেম ফি বেড়েছে ৭৮০ রিয়াল। বেসরকারি এজেন্সিগুলো এ অতিরিক্ত টাকা খরচের কারণে ঘর ভাড়া করেছে অনেক দূরে। এতে হাজীরা বেশ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এমন অভিযোগ ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। প্রাথমিকভাবে হাজীদের স্বার্থে তখন চুক্তি করলেও বেশির ভাগ এজেন্সিই আর বাকি থাকা ৫০০ রিয়াল (১১ হাজার ২৫০ টাকা) পরিশোধে ইচ্ছুক নয়। জানা যায়, বাকি থাকা এ টাকা পরিশোধ না করলে মোয়াল্লেমরা হাজীদের জন্য গাড়ি, মিনা ও আরাফাতের ময়দানের জন্য তাঁবু কার্ডসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদান করবেন না। বাংলাদেশ হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. আবদুল্লাহ আল নাসের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৯১টি এজেন্সির ১৪ হাজার হজযাত্রীর জন্য মোয়াল্লেম ফি নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। বেসরকারি এজেন্সিগুলো তখন এক হাজার টাকা দিয়ে চুক্তি সম্পন্ন করলেও এর মধ্যে চার হাজার হাজীর ক্ষেত্রে বাকি থাকা ৫০০ রিয়াল পরিশোধ করা হতে পারে। বাকি ১০ হাজার হজযাত্রীর ক্ষেত্রে এ টাকা এজেন্সিগুলো পরিশোধ করতে না পারার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মোয়াল্লেম ফি পরিশোধ না করায় এসব ব্যক্তি সৌদি আরবে গিয়েও হজ করতে পারবেন না।

১৬ হজ এজেন্সি একজন যাত্রীও পাঠায়নি : এখনো ১৬টি হজ এজেন্সি একজন যাত্রীও পাঠায়নি বলে জানিয়েছেন বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয়ে ফ্লাইট জটিলতা নিয়ে সভা করেন মন্ত্রী। এরপর আশকোনায় হজ ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সেখানে উপস্থিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান তিনি। রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রায় ১৫ হাজার হজযাত্রীর ভিসা লজমেন্ট হয়নি। এজেন্সিগুলো টিকিট না কাটায় হজযাত্রীদের বিড়ম্বনা হচ্ছে। এজন্য দায়ী হজ এজেন্সি ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আগামী ২৬ আগস্ট হজ ফ্লাইটের শেষ সময় হলেও আরও দুই দিন সময় বাড়ানোর আবেদন করা হবে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের কাছে। এ ছাড়া বিমানের অন্য রুটের ফ্লাইট পুনর্বিন্যাস করে হজ ফ্লাইটে বেশি উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানান বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সব হজ যাত্রীদের নিরাপদে সৌদি আরবে পৌঁছানের সব প্রস্ততি বিমানের রয়েছে। পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সৌদি এয়ারলাইন্সের সহযোগিতা নেওয়া হতে পারে বলে মন্ত্রি জানান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর