বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

পানির সঙ্গে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি

প্রতিদিন ডেস্ক

পানির সঙ্গে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি

গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ঘরের টিন খুলে নিচ্ছে একটি পরিবার। জামালপুরের ইসলামপুরে পানির মধ্যে দাঁড়িয়েই চলছে রান্নাবান্না —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে মানুষ ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি অব্যাহত রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে বর্ণনাতীত দুর্ভোগে পড়েছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে লাখ লাখ হেক্টর জমির আমন ধান ও শাক-সবজি। ভেসে গেছে পুকুরের কোটি কোটি টাকার মাছ। হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যায় গত তিন দিনে জামালপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, সুনামগঞ্জ,  কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জে মোট ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের বেশিরভাগই শিশু। কুড়িগ্রামে শুকনো জায়গার অভাবে লাশ দাফন করতে না পেরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে পানিতে। বন্যার কারণে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ’৮৮-র বন্যার রেকর্ড ছাড়িয়েছে যমুনার পানি। গতকাল সকালে এই পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে তীব্র বন্যার কারণে ৮০০ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। অর্ধাহারে-অনাহারে রয়েছে পানিবন্দী লাখো মানুষ। ত্রাণ সহায়তা অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেছেন দুর্গতরা। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও  প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

নীলফামারীতে দুই কিশোরের মৃত্যু : নীলফামারীর সৈয়দপুরে বন্যার পানি প্রবাহ কিছুটা কমলেও এখনো উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও পৌরশহর পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যার পানিতে দুই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। গত চার দিনের টানা বর্ষণে চিকলী ও খড়খড়িয়া নদীর পানি বেড়ে সৈয়দপুর উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়ে উপজেলার ৩০ হাজার মানুষ। রবিবার সকালে পশ্চিম পাটোয়ারী পাড়ায় খড়খড়িয়া নদীর বাঁধ ভেঙে সৈয়দপুর শহরের পাটোয়ারী পাড়া, বসুনিয়া পাড়া, কুন্দল, নয়াবাজার ও বাঁশবাড়ী এলাকায় নদীর পানি ঢুকে পড়ে।

এদিকে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সোমবার থেকে কমতে থাকে তিস্তার পানি। গতকাল সকাল থেকে নদীর নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নীলফামারীর সৈয়দপুরে বন্যার পানিতে ডুবে শহরের আবদুল হামিদের ছেলে আরিফ হোসেন (১৪) ও হাতিখানার জয়নাল হোসেনের ছেলে সিরাজুল ইসলাম রতন (১৭) নামে দুই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।

নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বেতগাড়ী, ঘোষগ্রাম ও কৃষ্ণপুর নামক স্থানে আরও ৫টি স্থানে ছোট যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে আত্রাই উপজেলা ও নাটোর জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে নওগাঁর ৬টি উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক বিঘার ফসলি জমি তলিয়ে গেছে এবং কয়েক হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আত্রাই নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ২০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। মান্দায় নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। শহরের পুরনো কালেক্টরেট ভবন চত্বর. জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশ সুপারের বাসভবন, জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, মুক্তির মোড়, কাজীর মোড়, বিহারী কলোনি, বনানীপাড়া, উকিলপাড়া, কালীতলা, পার-নওগাঁ ১ থেকে দেড় ফিট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

লালমনিরহাটে আরও ২ জনের মৃত্যু : লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল সকালে সদরের মোগলহাট এলাকায় ধরলার পানিতে ডুবে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিরা হলেন- মোগলহাটের ইটাপোতা গ্রামের জহির আলীর ছেলে আয়নাল আলী (১৩) এবং জারি ধরলা গ্রামের ওমর মিয়ার ছেলে ওয়াজেদ মিয়া (৪৬)। এ নিয়ে গত তিন দিনে বন্যার পানিতে ৯ জনের মৃত্যু হলো। জেলার ৩৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে অমানবিক জীবন-যাপন করছেন। এসব মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের ৩য় বৃহত্তর বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম। এদিকে পানিবন্দী মানুষগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে ত্রাণ সংকট। অনাহারে-অর্ধহাারে রয়েছে পানিবন্দী লাখো মানুষ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বানভাসি মানুষদের মাঝে গতকাল পর্যন্ত ৯ হাজার ৩০০ শুকনা প্যাকেট খাবার, ১৯৭ টন চাল ও নগদ ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। তিস্তা ও ধরলার প্রবল স্রোতে গতকাল ভোরে অর্ধ-শতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে।

এদিকে তীব্র বন্যায় ৮০০ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো বললেন, আমরা জারি ধরলা চর থেকে জীবন নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। অনেক মানুষ সেখান থেকে ভারতে ঢুকতে পেরেছে। কিন্তু আমরা ৭-৮শ’ লোক আটকা ছিলাম। নিরূপায় হয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে আসি। বিজিবির লোকজন যদি আমাদের ঢুকতে না দিতো তাহলে ধরলার পানিতে ডুবে আমরা নিশ্চিত মারা যেতাম। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ধরলার ভয়াবহ বন্যা থেকে জীবন বাঁচাতে ভারতীয় দুই গ্রামের প্রায় আট শতাধিক ভারতীয় নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার মোগলহাট ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন।

দিনাজপুর : আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার কিছুটা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ইছামতি, পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। গতকাল পার্বতীপুরে তিলাই নদীর বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে আতাবুর রহমান (৫৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি পার্বতীপুর পৌর এলাকার নামাপাড়া মহল্লায়। দিনাজপুরের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বাড়ছে : সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৮৮ সালের পর এবারই প্রথম যমুনার পানি বিপদসীমার ১৩৭ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ায় জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চারদিনের ব্যবধানে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। দুই হাজার হেক্টর ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসন থেকে ১৭০ মেট্টিক টন চাল ও নগদ সাড়ে আট লাখ টাকা বিতরণ বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা বন্যা কবলিতদের হাতে পৌঁছেনি। কাওয়াকোলা ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মধ্যে সবই তলিয়ে গেছে। শুকনো জায়গা না থাকায় কেউ কোথায় আশ্রয় নিতে পারছে না। বাধ্য হয়ে ঘরের চালের ওপর আবার কেউ নৌকার ওপর আশ্রয় নিয়েছে। এতটা দুর্ভোগের মধ্যে থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার তাদের খোঁজ খবর নিতে আসেনি। কাজ না থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিনযাপন করছেন। জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, নদীর পানি বেড়েই চলেছে। কোনো অবস্থাতেই যেন বাঁধ এলাকায় কোনো ধস বা ভাঙন সৃষ্টি না হয় সে জন্য পাউবোকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।

জামালপুরে দু’জনের মৃত্যু : জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ’৮৮-র বন্যার রেকর্ড ছাড়িয়েছে যমুনার পানি। গতকাল সকালে এই পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ’৮৮-র বন্যায় এই পয়েন্টে পানি ছিল বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপরে।

জামালপুরে নতুন করে বন্যা প্লাবিত হয়েছে সদর ও বকশীগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। মাদারগঞ্জের চাঁদপুর-নাংলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দেড়শ মিটার ভেঙে এই উপজেলার ১৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলার ৭টি উপজেলায় প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে গতকাল দুপুরে মেলান্দহ উপজেলার টংকি গ্রামে রিক্সাচালক পাগুর পুত্র কমল নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বিকালে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর বাহাদুরাবাদ গ্রামে পানির প্রবল তোড়ে ওই গ্রামের সাইফুলের পুত্র শুটকো (১৩) নামে এক কিশোর ভেসে গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার লাশ পাওয়া যায়নি। বন্যার পানিতে রেল লাইন ডুবে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল। বন্ধ হয়ে গেছে জেলার ৩০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কুড়িগ্রামে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত : কুড়িগ্রামে ২য় দফার বন্যায় ৫৯টি ইউনিয়নের ৭৬৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রাস্তা, বাঁধ, ফসল, গবাদিপশুসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৬জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ২জন। কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী সড়ক বন্ধ হওয়ায় নৌকাযোগে চলাচল করছে মানুষ এবং কুড়িগ্রামের টগরাইহাটের বড় পুল সংলগ্ন রেল ব্রিজ দেবে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

কুড়িগ্রামে বন্যায় পুরো এলাকা প্লাবিত হওয়ায় মানুষ মারা গেলে দাফনের জন্য নেই শুকনো জায়গা। তাই লাশ দাফন করতে না পেরে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে পানিতে। চরটেপারকুটি এলাকার হাসমত আলী (৪০) সোমবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লাশ দাফন করতে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও শুকনো জায়গা পাননি স্বজনরা। তাই লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে বন্যার পানিতে।

গাইবান্ধায় অবনতি : গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। করতোয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলার অন্তত ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১শ’ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার এবং করতোয়া কাটাখালী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।

করতোয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সোমবার মধ্যরাতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুরে ধসে যায়। এতে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে, পলাশবাড়ী উপজেলার চেরেঙ্গা নামক স্থানে করতোয়ার বাঁধ ধসে ১৫ গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। শ্রমিক ছাড়াও সেনাবাহিনীর রংপুর-৬৬ ডিভিশনের ৮৫ জনের একটি টিম স্থানগুলোতে কাজ করছে।

বগুড়ায় বাঁধ হুমকির মুখে : বগুড়ায় যমুনার পানি বেড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার ১০ পয়েন্টে বন্যা বাঁধ দিয়ে পানি ভিতরে ঢুকছে। গতকাল যমুনার পানি বিপদসীমার ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপর দিকে যমুনার সঙ্গে বাঙালী  নদীর পানিও বাড়ছে। বন্যার্ত ও বাঁধের ওপরসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে। নতুন করে সৃষ্ট বন্যায় জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৮৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।

জয়পুরহাটে নতুন গ্রাম প্লাবিত :  জয়পুরহাটে গতকালও নতুন করে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সোমবার তুলশীগংগা নদীর ওপর কালিতলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় এবং ছোট যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জয়পুরহাটের সদর, পাঁচবিবি, ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর ও সদর উপজেলার ৫১টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। তলিয়ে গেছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ও শাক-সবজি। ভেসে গেছে ৫ শতাধিক পুকুরের প্রায় ৫ কোটি টাকার মাছ।

টাঙ্গাইলে শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল : টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর, ভূঞাপুর ও নাগরপুর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে গেলে টাঙ্গাইল শহরসহ অন্তত ৫টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়বে।

ঠাকুরগাঁওয়ে একজনের মৃত্যু : নদনদীর পানি কমে যাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও খাদ্য সরবরাহ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রে আসা দুর্গত মানুষরা। কেউ কেউ আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরলেও নিচু এলাকা থেকে পানি এখনো না সরে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ অবস্থান করছে। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানি ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছে তারা। গতকাল সকালে তিনদিন আগে নিখোঁজ হওয়া রিয়াদ (২০) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীর লাশ টাঙ্গন নদীতে ভেসে ওঠে।

বদরগঞ্জে (রংপুর) শিশুর মৃত্যু : রংপুরের বদরগঞ্জে মাসুম মিয়া (১২) নামে এক শিশু গোসল করতে নেমে বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল দুপুরে উপজেলার কালুপাড়া ইউপির কবিরাজ পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. শুকলা চক্রবর্তী মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার পূর্বেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।

নতুন এলাকায় সেনা মোতায়েন : আইএসপিআর জানায়, উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হওয়ায় সরকারের নির্দেশে বন্যা কবলিতদের সাহায্যার্থে গতকাল আরও নতুনভাবে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পঞ্চগড়ে প্রয়োজনীয় স্পিড বোট ও উদ্ধার সামগ্রীসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়াও আগে মোতায়েনকৃত দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রংপুর ও  সৈয়দপুরে সেনাসদস্য ও উদ্ধার সরঞ্জামাদি বৃদ্ধি করা হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বর্তমানে সেনাবাহিনীর ২৮ প্লাটুন সেনাসদস্য মোতায়েন রয়েছে। অদ্যাবধি উক্ত এলাকা হতে সেনাবাহিনী ১৭৮৫ জন মানুষকে উদ্ধারসহ বিপুল পরিমাণ গবাদি-পশু ও গৃহস্থালি সামগ্রী উদ্ধার করেছে। এ ছাড়াও সেনাবাহিনী সৈয়দপুর ও গাইবান্ধায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণে স্থানীয় প্রশাসনকে  সহায়তা প্রদান করেছে।

সর্বশেষ খবর