বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

জনশক্তি রপ্তানিতে সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনশক্তি রপ্তানির নামে মানব পাচার, সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে বেশ কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে। নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট তৈরি করে প্রতিষ্ঠানগুলো নিরীহ লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে নাবিরা লিমিটেডের এক ব্যক্তি। তিনি নেপথ্যে থেকেই তার লোকজনের মাধ্যমে মানব পাচার করছেন। অভিযোগ, মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছত্রচ্ছায়ায় সক্রিয় এই সিন্ডিকেট। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে জনশক্তি রপ্তানি খাত। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর কথা বলে গত কয়েক মাসে নাবিরা লিমিটেডের সাইদুর রহমান ও তার লোকজন হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। মোটা বেতনের চাকরির কথা বলে দরিদ্র শ্রমিকদের জাল কিংবা ভিজিট ভিসায় সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছেন সাইদুর। কিন্তু এই দুই দেশে গিয়ে চাকরি না পেয়ে উল্টো বিপাকে পড়েন শ্রমিকরা। তাদের অনেকে গ্রেফতারও হন। প্রতারিত এসব শ্রমিক দেশে ফিরে সাইদুরের বিরুদ্ধে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেন। এমনকি সম্প্রতি সাইদুরের প্রতিষ্ঠান নাবিরা লিমিটেড ঘেরাও করেন। এই ঘটনায় সাইদুরের লোকজন অভিযোগকারী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকিসহ নানাভাবে হুমকি দেন। একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরো জনশক্তি রপ্তানি খাতই জিম্মি হয়ে আছে সাইদুরের নেতৃত্বাধীন একটি সিন্ডিকেটের হাতে। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি টিম সৌদি আরব গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এবং তদন্ত করে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নানা তথ্য পায়। দেশে ফিরে প্রতিনিধি দল মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। যাতে সাইদুরের নাবিরা লিমিটেডসহ মোট ১৪টি রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করা হয় মানব পাচারকারী হিসেবে। তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্সও বাতিল করার সুপারিশ করা হয়। সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জনশক্তি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির একটি অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে মন্ত্রণালয় নাবিরা লিমিটেডসহ ১৪ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কালো তালিকাভুক্ত করে তাদের লাইসেন্স স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি বিএমইটি। বরং এই প্রতিষ্ঠানগুলোই এখন মন্ত্রণালয়ের কতিপয় প্রভাবশালী কর্মকর্তার সহযোগিতায় জনশক্তি রপ্তানিখাতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চিহ্নিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এগুলো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, সৌদিতে শ্রমিক পাঠাতে যখন সরকারি হিসাবে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা খরচের কথা বলা হলো, তখনো এই সিন্ডিকেট জনপ্রতি সাত-আট লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে শ্রমিকদের কাছ থেকে।

সর্বশেষ খবর