বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু হত্যায় ছিল রাঘববোয়ালরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধু হত্যায় ছিল রাঘববোয়ালরা

শ্রদ্ধা এস কে সিনহার

বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে অনেক রাঘব বোয়াল জড়িত ছিল এবং মামলার তদন্তের ত্রুটির জন্য তাদের বিচারে সোপর্দ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেন, ‘আমি নথি পর্যালোচনা  করে দেখলাম, বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে আরও অনেক রাঘব বোয়াল জড়িত ছিল। কিন্তু তদন্তের ত্রুটির জন্য তাদের বিচারে সোপর্দ করতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘যদিও আমাদের রায়ে আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছি, এটা একটা ক্রিমিনাল কন্সপাইরেসি, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদের বিচারে সোপর্দ করার জন্য বলেছি। আজকে জাতির জন্য একটা দুঃখময় দিন।’ জাতীয় শোক দিবস ২০১৭ উপলক্ষে গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আজকে আমাদের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক দিন। উপমহাদেশে দুজন জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। একজন মহাত্মা গান্ধী, অপরজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড কাপুরুষোচিত মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হয়তোবা কারও শত্রু বা বিরাগভাজন হতে পারেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শিশু শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ যারা নব্য বিবাহিত, আজকে পত্রিকায় পড়লাম, তাদের গায়ে হলুদ হয়েছিল। এগুলো (মেহেদির রং) মুছে যায়নি। বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসের, তিনি রাজনীতিতে ছিলেন না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারকে এই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা।’ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পৃথিবীর অন্য কোনো হত্যার মিল পাওয়া যায় না। আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই, যে রকম তাদের হত্যা করেছিল। আরও কষ্টদায়ক হলো, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হত্যাকারীদের রাষ্ট্রের আইন দ্বারা বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া। আমি এই বিচার বিভাগের একজন সদস্য হিসেবে অত্যন্ত গৌরবান্বিত বোধ করছি। এই সুপ্রিম কোর্ট ওই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে সেই বিচারের পথ প্রশস্ত করেছিল।’ তিনি বলেন, ‘এই মামলাতেই একটি গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। আমি যখন আপিল বিভাগের সবচেয়ে কনিষ্ঠ বিচারক, তখন অসুস্থ ছিলাম। সিঙ্গাপুরে আমার ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছিল। আমি চিকিৎসায় থাকা অবস্থায় মামলাটির বিচারের জন্য বেঞ্চ গঠন করা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। তখনই আমাকে অনুরোধ করা হয় তাড়াতাড়ি চলে আসার জন্য। ডাক্তার তখনো বলেননি আমি বাঁচতে পারব কি না? যা-ই হোক, এরপর আমি আমার চিকিৎসা বাদ দিয়ে চলে এলাম। পরে শপথ নিয়ে চিকিৎসার জন্য চলে গেলাম।’ আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতির জনক, এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তিনি ছিলেন বলে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তার কারণে আমি আজ আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হতে পেরেছি। পাকিস্তান যদি থাকত, হাই কোর্ট পর্যন্ত হয়তো যাওয়া যেত, কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বা বিচারপতি হওয়া কল্পনার বাইরে ছিল। কাজেই বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি। এ জন্য করি, আমি স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হিসেবে আসীন আছি।’ হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে সহায়তা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিশন মেডিসিন বিভাগ। নিবন্ধিতদের মধ্য থেকে অন্তত ৮০ জনের রক্ত গ্রহণ করা হয় বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর