বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাইফুলের সঙ্গীদের খুঁজছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পান্থপথে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি সাইফুল ইসলামের সহযোগীদের খুঁজছে পুলিশ। সাইফুল কার হাত ধরে জঙ্গিবাদে জড়ালো, কাদের ইন্ধনে ঢাকা এলো, তাকে বোমার জোগানদাতা কারা, তার সঙ্গে নাশকতার উদ্দেশে আর কেউ ঢাকায় অবস্থান করছে কিনা— এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আর শোক দিবসে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাকারী কারা, তাদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশলে আত্মঘাতী জঙ্গি সাইফুলের কয়েকজন সহযোগী ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিল বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। গতকাল তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। সূত্র বলছে, সাইফুল সাত-আট মাস আগে জেএমবিতে যোগ দেয়। বাড়ি থেকে বের হলেও সে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। ঘটনার তিন দিন আগে সাইফুল ওই হোটেলে উঠেছে। সে সময় সাইফুলের কাছে কিছু ছিল না। তবে হোটেলে তার নাম-ঠিকানা সবই সঠিক দিয়েছিল। ঘটনার একদিন আগে তার কাছে বোমা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তার ব্যবহূত মোবাইলটি ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। মোবাইল ট্রাকিং করে দেখা গেছে সে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে তারা আত্মীয়স্বজন। ধারণা করা হচ্ছে, জঙ্গিরা সাইফুলের সঙ্গে বিশেষ অ্যাপস ব্যবহার করে যোগাযোগ করেছে। গতকাল সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে শব্দ দূষণ ও হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে করণীয় শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, জঙ্গি সাইফুলের অবস্থান শনাক্তের পর ওই হোটেলের ম্যানেজারের কাছ থেকে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরে খুব কম সময়ের মধ্যেই আমরা তার পরিচয় জানতে পারি। সাইফুলের সঙ্গে অন্য সহযোগীরা জড়িত ছিল। এই জঙ্গিদের বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর সক্ষমতা নেই। তাদের ধরতে গোয়েন্দারা কাজ শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, নব্য জেএমবিতে সদ্য যোগদান করা সাইফুলকে ইত্তেহাদী হামলার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছিল। সাইফুল মাদ্রাসায় পড়াশোনার পর খুলনার বিএল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করত। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, তাদের অনুসারী ও সহযোগীরাই এই শোক মিছিলে হামলার পরিকল্পনা করছিল। বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে তারাই হামলা করতে পারে যারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা। গতকাল বিকালে নিহত জঙ্গি সাইফুল ইসলামের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণেই সাইফুলের মৃত্যু হয়েছে। তার সমস্ত শরীর দগ্ধ। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বোমার স্প্লিন্টারের আঘাত রয়েছে। একটি স্প্লিন্টার তার ডান চোখ দিয়ে ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। যাতে তার মাথার ডান পাশের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে কোনো গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার মৃতদেহ থেকে ভিসেরা ও সে উত্তেজক কোনো ওষুধ খেয়েছিল কিনা তা জানার জন্য রক্ত ও মূত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুই দিন পার হলেও এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি। কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সমীর চন্দ্র সূত্রধর জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল ভবনটিতে তালাবদ্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত ভবনটি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। হোটেল ওলিওর সামনে দায়িত্বপ্রাপ্ত এএসআই সানাউল হক জানান, তদন্তের স্বার্থে আরও কিছু আলামত লাগতে পারে তাই ভবনটি গত মঙ্গলবার রাতে তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। আমরা নয়জন এখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছি। আপাতত ভবনটিতে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ভবনটির নিচতলার দোকানগুলোও খুলতে দেওয়া হয়নি। সকালে একজন দোকান খুলতে এসেছিলেন আমরা তাকে খুলতে দেইনি। স্যাররা অনুমতি দিলে দোকানগুলো খুলতে দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, ১৫ আগস্ট সকালে পুলিশ পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে ‘অপারেশন আগস্ট বাইট’ নামে জঙ্গি অপারেশন চালায়। এ সময় জঙ্গি সাইফুল ইসলাম আত্মঘাতী হয়ে নিহত হয়।

সর্বশেষ খবর