শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ওলিওতে বোর্ডার নিয়ে তোলপাড় কারণ খুঁজছেন গোয়েন্দারা

পান্থপথের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় শোক দিবসে পান্থপথের ওলিও আবাসিক হোটেলে বোর্ডার তোলা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৪ ও ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরকে কেন্দ্র করে আশপাশের সব আবাসিক হোটেলে বোর্ডার তোলা নিষিদ্ধ করা হয়। এরপরেও ওলিও আবাসিক হোটেলে কীভাবে বোর্ডার তোলা হলো—এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দারা।

হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের পুরনো ভবনে বোমা বিস্ফোরণে জঙ্গি সাইফুল ইসলামের আত্মঘাতী হওয়া ও পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। বুধবার রাতে কলাবাগান থানার এসআই ইমরুল সাহেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত কয়েকজনকে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, স্পর্শকাতর এলাকা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ২০০ মিটারের মধ্যে ওলিও হোটেলে আত্মঘাতী জঙ্গির আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর সেখানকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই রাতে জঙ্গি সাইফুলকে শনাক্ত করা না গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো বলে আশঙ্কা গোয়েন্দাদের। পুলিশ সূত্র জানায়, জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাওয়ার বিষয়টি ছিল পূর্বনির্ধারিত। আর এ কারণেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর কেন্দ্র করে তিন ধাপের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। এরই অংশ হিসেবে ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাছাকাছি ধানমন্ডি, কলাবাগান, শেরেবাংলা নগর, হাজারীবাগ ও নিউমার্কেট থানার সব আবাসিক হোটেলে বোর্ডার তোলা নিষিদ্ধ করেছিল পুলিশ। এরপরও কীভাবে কলাবাগান থানার হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে (আবাসিক) ১৫ আগস্টের আগের দিন সোমবার বোর্ডার তুলল, তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দাদের ধারণা, কলাবাগান থানা পুলিশ এই বিষয়টি হয়তো কঠোরভাবে অনুসরণ করেনি বলেই হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে (আবাসিক) বোর্ডার ছিল। সেই সুযোগ নিয়েছে জঙ্গিরা। স্থানীয়সূত্রগুলো জানায়, হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়। রাতে মাত্র একজন নিরাপত্তাকর্মী সেখানে থাকেন। সিসি ক্যামেরাও অকেজো। এসব বিষয় জেনেশুনেই হয়তো জঙ্গিরা এই হোটেলে উঠেছিল। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসা-যাওয়ার পথ ও ৩২ নম্বরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আগস্টের প্রথম দিন থেকেই সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পুলিশ কাজ করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজে যারা রাজধানীতে এসে এসব এলাকার হোটেলে ছিলেন, তাদের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র, বিস্তারিত ঠিকানা, হোটেলে থাকার কারণ জেনে নেয় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। যারা রোগী ছিলেন, তাদেরও সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। যাদের কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা বলেছিলেন, তাদের হোটেল ছাড়তে বলা হয়েছে। ৩২ নম্বর, কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড এলাকার কোনো হোটেলেই বোর্ডার থাকতে দেয়নি পুলিশ। প্রতিটি এলাকার সহকারী কমিশনার (এসি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) ঘুরে ঘুরে হোটেলগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সব আবাসিক হোটেলকে নতুন বোর্ডার না তোলার জন্য অনুরোধ করেছি। নিয়মিত ব্লকরেইড দিয়েছি। যে হোটেলটিতে জঙ্গি সাইফুল ছিল, সেই হোটেলটিতেও এর আগে একবার ব্লকরেইড দেওয়া হয়েছিল। কয়েকজন রোগী ছিল এর আগে। তাদের অনেককে স্থানান্তর করাও হয়েছিল।’ এতসবের পরও কীভাবে এই হোটেলে ১৩ জন বোর্ডারসহ জঙ্গি আশ্রয় নিল? কলাবাগান থানা পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা? এর উত্তরে ডিসি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছি। যে কারণে এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর