শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

পেয়ারা-আমড়ার ভাসমান বাজার

রাহাত খান, বরিশাল

পেয়ারা-আমড়ার ভাসমান বাজার

ভাসমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে পেয়ারা-আমড়া। বরিশালের ভিমরুলী বাজার থেকে তোলা ছবি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বরিশাল, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুরের বিশাল এলাকা নিম্নাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বর্ষার পুরোটা সময় পানিতে ডুবে থাকে বরিশালের বানারীপাড়া, ঝালকাঠীর সদর এবং পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা। এ সময়ই চাষিরা ঝালকাঠির ভিমরুলী আর নেছারাবাদের কুরিয়ানা খালে ভাসমান পেয়ারা-আমড়ার কারবার করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় এবার ২ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে বিভিন্ন জাতের ৩৫ হাজার ৪৬ মেট্রিক টন পেয়ারা এবং ২ হাজার ৫৩ হেক্টর জমিতে আমড়া উৎপাদিত হয়েছে ২৯ হাজার ৮৯৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে পিরোজপুরের নেছারাবাদ এবং ঝালকাঠী সদরের বিশাল এলাকাকে বলা হয় ‘পেয়ারা-আমড়ার রাজ্য’। বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. রেজোয়ানুল আলম বলেন, বরিশাল অঞ্চলের পেয়ারা-আমড়া বিষ-ফরমালিন মুক্ত। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন ‘এ’ আছে। এই ফল মানবদেহে ভিটামিনের অভাব পূরণ করে। এগুলো আমাদের ত্বকের এবং চোখের জন্য অনেক উপকারি। সরজমিনে নেছারাবাদ, ঝালকাঠী সদর ও বানারীপাড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এবার ফলন মোটামুটি ভালো। তবে পেয়ারার সাইজ অন্যান্য বছরের তুলনায় ছোট। সারি সারি আইলের মাঝের নালাগুলো পানিতে পরিপূর্ণ। সেই নালায় ছোট ছোট নৌকায় আইলে থাকা গাছ থেকে পেয়ারা-আমড়া পাড়েন চাষিরা। তারপর তা বিক্রি করেন ভিমরুলী এবং কুরিয়ানা ভাসমান বাজারে। এখান থেকে ট্রাকে এবং লঞ্চ-ট্রলার যোগে এগুলো চলে যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। চাষি স্বপন কুমার শিকদার জানান, এ মৌসুমে উৎপাদিত বিঘা প্রতি পেয়ারা ৩০ হাজার এবং আমড়া ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে। চাষি লোটন হালদার বলেন, ফলন কম, সাইজে ছোট, দামও তালনামূলক অনেক কম। অন্যান্য যে কোনো কৃষি কিংবা ফলের মধ্যে পেয়ারার দাম সর্বনিম্ন । চাষি নৃপেন মজুমদার জানান, তিনি বাগান থেকে পেয়ারা-আমড়া পেড়ে সরাসরি বাজারে বিক্রি করেন। কোনো ফরমালিন কিংবা কোনো বিষ দেন না। তাই খেতে সুস্বাধু। পচনশীল হওয়ায় প্রতিদিন গাছ থেকে পাড়া পেয়ারা-আমড়া দৈনন্দিন বাজারে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু এলাকা থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে বাজারজাত করার জন্য উন্নত সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় পরিবহনও পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা। পেয়ারার বেপারী জাকির হোসেন জানান, ৭/৮ টাকা কেজি দরে ভিমরুলীর ভাসমান হাট থেকে পেয়ারা কিনছেন। ট্রাকে অনেক ভাড়া এবং ঢাকায় নিতে পথে পথে অনেক খরচ। এরপর ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেয়ারা পাইকরি বিক্রি করেন ১২/১৩ টাকা কেজি দরে। আরেক বেপারী পঙ্কজ মণ্ডল বলেন, ভিমরুলী বাজার থেকে ট্রাকযোগে ঢাকায় পেয়ারা নিতে ভাড়া কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা। লেবারের অনেক দাম। খরচ বাদ দিয়ে ভিমরুলী বাজারে ৫ টাকা কেজি দরে পেয়ারা কিনে ঢাকার পাইকারি বাজারে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও তেমন লাভ থাকে না। তিনি বলেন, মূলত খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ায়। তারা পাইকারি ২০ টাকা কেজি দরে পেয়ারা কিনে ভোক্তার কাছে ৪০ টাকায় বিক্রি করে। তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।

এই এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এই অঞ্চলের (ঝালকাঠী) মানুষ। তিনি বিভিন্ন সময় এই এলাকায় হিমাগার এবং জেলি কারখানা স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলে কৃষক তার উৎপাদিত পেয়ারা-আমড়ার সঠিক দাম পাবেন বলে তাদের আশা। পিরোজপুরের আটঘর-কুরিয়ানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখর কুমার সিকদার বলেন, এই অঞ্চলে আগে ধান-পাট চাষ হতো। তার চেয়ে পেয়ারা-আমড়ায় দ্বিগুণেরও বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা পুরোপুরি সেই দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। উৎপাদিত পেয়ারা-আমড়া তিন মাসের মধ্যে বাজারজাত হয়। কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। এ অঞ্চলের কৃষকদের অর্থনীতি চাঙা হয়। তিনি বলেন, একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পেয়ারা-আমড়া বাজারে আসায় কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। এজন্য একটি হিমাগার স্থাপন এবং এ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর