শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

৩২ নম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ কাদের সিদ্দিকীর

আবেগঘন আলাপচারিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘ তিন বছর পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিবাদী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। ১৫ আগস্ট বিকালে কাদের সিদ্দিকী স্ত্রী ও সন্তানসহ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে গেলে এক আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী কথা বলেন তিনি। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী নাসরিন কাদের সিদ্দিকী, ছেলে দীপ সিদ্দিকী ও মেয়ে কুশি সিদ্দিকী।  সূত্র জানায়, ১৫ আগস্ট বিকালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী যখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে প্রবেশ করতে যান তখন নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, এখন পরিবারের সদস্য ছাড়া কোনো অতিথি প্রবেশের অনুমতি নেই। কাদের সিদ্দিকীর গেট থেকে ফিরে যাওয়ার খবর চলে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। তিনি এপিএস সাইফুজ্জামান শিখরকে পাঠিয়ে কাদের সিদ্দিকী ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩২ নম্বরের ভিতরে আনার ব্যবস্থা করেন। সে সময় মহিলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে ৩২ নম্বরে মিলাদ মাহফিল চলছিল। ভিতরে ঢুকতেই বঙ্গবীরের কাঁধে হাত রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তার স্ত্রী নাসরিন কাদের সিদ্দিকী ও মেয়ে কুশি সিদ্দিককে তিনি জড়িয়ে ধরেন। উভয়ের চোখেই তখন পানি ছলছল করছিল। এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কুশির মাথায় হাত রেখে বঙ্গবীরের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বজ  তুমি মস্ত বড় মহৎ কাজ করেছ। আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকা একজন কুশিকে দেখে বলেন, ‘এই মেয়ে সেই মেয়ে না’। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘না, তোমরা এসব বল না’। এতে বজ  কষ্ট পায়। বজ  তার মেয়েকে খুব ভালোবাসে। আল্লাহ তার মঙ্গল করবে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা কাদের সিদ্দিকীকে ধন্যবাদ জানান।

দীর্ঘ তিন বছর পর বোনের সঙ্গে দেখা, কী কথা হলো আপনাদের—জানতে চাইলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, বেশ কয়েক বছর পর জাতির শোকের দিন ১৫ আগস্ট মায়ের মতো বড়বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সঙ্গে কথা বলে শোকের মধ্যেও শক্তি অনুভব করেছি। বড়বোন (প্রধানমন্ত্রী) আমার ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেছেন। তাদের সাফল্য কামনা করেছেন। তারাও আমাদের দেখে অভিভূত হয়েছেন। আর কী কথা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট আমার জীবনে কী সেটি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ভালো করেই জানেন। এই আবেগ অনুভূতি শুধু আমার। এ মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কথা গণমাধ্যমে বলতে চাই না। আমি আমার লেখার মধ্যে স্মৃতিচারণ করব। এ ছাড়া বঙ্গবীরের ছোটকন্যা কুশিকে নিয়েও প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি আবার আওয়ামী লীগে ফিরে আসছেন, নাকি তার দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিচ্ছে, এমন আলোচনা চলছে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, যা শুনতে পাচ্ছেন তা পুরোটাই মিথ্যা। আমি শোকের দিনে সুখ খুঁজতে যাই না। ১৫ আগস্ট আমার জীবনে সবচেয়ে বেদনার দিন। এই বেদনার দিনে অন্য কোনো চেতনা নিয়ে চিন্তা করা সম্ভব নয়। সেদিন আমার দুর্ভাগ্যের দিন, শোকের দিন। কোনো স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যারা বলেন, তারা উন্মাদ।

সর্বশেষ খবর