শিরোনাম
শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
যত ভাবনা তত মত

রাজনীতির পয়নামা বনাম পয়নালা

গোলাম মাওলা রনি

রাজনীতির পয়নামা বনাম পয়নালা

ঘটনাটি হজরত মুসা (আ.)-এর জমানার। তখনকার বিশ্বের বিভিন্ন জনপদে রাজনীতি, সুশাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বহু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যেমন ছিল তেমনই কমতি ছিল না দুঃশাসন, অবিচার এবং জেল-জুলুমের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার ইতিহাসও। পৃথিবীর এত সব পরস্পরবিরোধী ঘটনার কারণ নিয়ে আল্লাহর রসুল হজরত মুসা (আ.) যারপরনাই ব্যথিত ছিলেন। একদিন তিনি আল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া পরওয়ারদিগার! তুমি যখন একটি দেশের প্রতি তোমার রহমত ও বরকত অবারিত করতে চাও তখন সেখানে কি ঘটে? আল্লাহ বললেন, আমি রহমত ও বরকতপ্রাপ্ত দেশ, জাতি ও গোষ্ঠীকে সবার আগে উত্তম শাসক দান করি। তারপর সেখানে যথাসময় পর্যন্ত বৃষ্টিবর্ষণ করাই আর ধনীদের উদার, দানশীল এবং দয়াবান বানিয়ে দিই। হজরত মূসা (আ.) বললেন, আর যখন তুমি কোনো জনপদের জনগোষ্ঠীর ওপর ক্রোধান্বিত হও তখন? আল্লাহ বললেন, আমি বেকুব লোকদের হাতে নেতৃত্ব দিয়ে দিই। বেকুবদের মধ্য থেকেই শাসক বানাই। বখিল অর্থাৎ কৃপণদের কাছে ধনসম্পদ দিই। অকালে বারিবর্ষণ ঘটাই। অনাদিকালের খোদায়ী ইচ্ছা পর্যালোচনা করলেই রাজনীতির পয়নামা অর্থাৎ সাফল্যগাথার কার্যকারণ যেমন বুঝতে পারা যায়, তেমনি রাজনীতির রসাতল কিংবা নর্দমার দুর্গন্ধযুক্ত রাজনীতি অর্থাৎ পয়নালা বৃত্তান্ত বুঝতে খুব বেশি কষ্ট হওয়ার কথা নয়। একটি দেশের জনগণের বৃহদাংশের আচার-আচরণ, চিন্তাচেতনা ও অভ্যাসের ওপর সব কিছু নির্ভর করে। যে অঞ্চলে চোরের উপদ্রব বেশি সেখানে চোরের শাসন কায়েম না হওয়া পর্যন্ত শান্তি আসবে না। কারণ ভালো চরিত্রের উত্তম শাসক মন্দ লোকদের কাজ-কারবার ও মন-মানসিকতা বুঝতে পারেন না। ফলে সেখানে অনাসৃষ্টি পয়দা হয়ে যায়। জনগণ যদি চরিত্রহীন হয়ে পড়েন কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে ধৈর্যহীন উগ্র স্বভাবের মানুষে রূপান্তরিত হয়ে যান তবে বদরাগী এবং নিষ্ঠুর শাসক ছাড়া তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। দুর্নীতি, কুিসত কর্ম, মোনাফেকি, অস্থির চিত্ততা এবং বাহুল্য আচরণ যখন সমাজের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে পড়ে তখন সেখানে রাষ্ট্রীয় অনাচার অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। মানবজাতির ইতিহাসে চারটি স্তর— ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকেই অরাজকতা শুরু হয়। মানুষের কুকর্ম যেভাবে তার পতন ডেকে নিয়ে আসে তেমনি কুচিন্তাও সমভাবে তার ক্ষতি করে। মানুষ নিজের বুদ্ধিতে এককভাবে যতটা না সর্বনাশ ঘটাতে পারে তার চেয়েও বেশি সর্বনাশ ঘটাতে পারে সদলবলে। শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করে কুপথে টেনে নেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি চেষ্টা-তদ্বির করে মন্দ মাহফিল সৃষ্টি করার জন্য। পৃথিবীর সব প্রলয়ঙ্করী এবং ঘৃণিত পাপাচার শুরু হয়ে থাকে মন্দ লোকের সমাবেশ থেকে। রাজনীতি এমন একটি বিষয় যেখানে সর্বাবস্থায় বহু লোকের সমাবেশ হয়ে থাকে। এসব সমাবেশে যদি শয়তানি মদদ থাকে তবে যেমন পয়নালা সৃষ্টি হতে দেরি হয় না তেমনি খোদায়ী মদদ থাকলে শুরু হয়ে যায় রাজনীতির পয়নামা বা সফলতা। এখন প্রশ্ন হলো আল্লাহ কখন, কেন এবং কীভাবে ভালো অথবা মন্দ শাসক নিয়োগ দিয়ে রাজনীতির পয়নামা অথবা পয়নালা সৃষ্টি করে থাকেন। মানুষ যখন স্ব স্ব অবস্থানে থেকে ভালো চিন্তা করে পরস্পরের জন্য দোয়া করে এবং একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উত্তম কর্ম করে তখন নেয়ামত হিসেবে উত্তম শাসক তাদের ভাগ্যে জুটে যায়, সঙ্গে অন্যান্য আসমানি রহমত ও বরকত চলে আসে। অন্যদিকে মানুষের দুষ্ট চিন্তা দিয়ে সর্বনাশের শুরুটা হয়। দুষ্ট চিন্তার ফলে শয়তান তার মন মস্তিষ্কে বাসা বাঁধে এবং তাকে দিয়ে মন্দ কাজ করিয়ে তার ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার ধ্বংস করে দেয়। পরিবার সমাজকে কলুষিত করে যা রাষ্ট্রকেও স্পর্শ করে। একটি বিষয় মনে রাখা উচিত, একজন সর্বাঙ্গীণ ভালো মানুষের জন্য প্রকৃতির আইন হলো ভালো মানুষের জীবনে কোনো দিন এবং কোনো অবস্থায় মন্দ কিছু ঘটে না। মন্দ লোকেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং হানাহানি করে। মন্দ মানুষ এবং তাদের মন্দ শাসকরা কোনো দিন সত্যিকার ধর্মপরায়ণ, সৎ, সাহসী এবং চরিত্রবান মানুষের ক্ষতি তো করেই না বরং তাদের এমনভাবে ভক্তি শ্রদ্ধা করে যা সাধারণত একজন ভালো মানুষ অন্য ভালো মানুষকে করেন না। আল্লাহ তার আপন কুদরতে ভালো মানুষ সম্পর্কে সবারই মনে এক ধরনের সম্ভ্রম সৃষ্টি করে দেন।

সর্বশেষ খবর