শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

শিক্ষায় বিপর্যয়, বন্ধ দুই হাজার প্রতিষ্ঠান

আকতারুজ্জামান

প্রবল বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যা প্লাবিত এলাকার অধিকাংশ স্কুলে থৈ থৈ করছে পানি। আবার নিমজ্জিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহৃত হচ্ছে বন্যাদুর্গতদের  আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে। সারা দেশে ২ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন পরীক্ষা বন্যা পরিস্থিতির কারণে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক এলাকায় বৃষ্টির পানির তোড়ে ভেসে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনেক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মাহবুব এলাহীর বরাত দিয়ে রংপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বিভাগের আট জেলায় মোট ১ হাজার ৩১টি প্রাথমিক স্কুল বন্যার কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরে জেলা শিক্ষা অফিসারদের পাঠানো এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামে ১০টিরও বেশি মাধ্যমিক স্কুলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব স্কুলেও ক্লাস-পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। রৌমারী উপজেলার গাছবাড়ী নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে। জেলার ৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফলে পাঠদানে সাময়িকভাবে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১১, চিলমারীতে ১৯, রৌমারীতে ১৫, রাজীবপুরে ৮, উলিপুরে ১১ ও ভুরুঙ্গামারীতে ৩টি স্কুলে পানি উঠেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্র এসব তথ্য জানায়। সব মিলে জেলায় মোট ৪৪৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। মাউশি রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক মোস্তাক হাবিব এই প্রতিবেদককে জানান, বিভাগে মোট ৬০৩টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে। যমুনার পানি বৃদ্ধি ও কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে জামালপুরের ৮১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রশাসক রাসেল সাবরিন এ তথ্য জানান। জেলার মেলান্দহে ৯, মাদারগঞ্জে ২০, ইসলামপুরে ৩২ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যমুনার পানি প্রবেশ করেছে। এসব স্কুলে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। জেলা সদরের ২টি স্কুলেও শিক্ষাদান স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। জামালপুর জেলার শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। সিরাজগঞ্জে ২৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুর রহিম এ তথ্য জানান। জেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১২১টি সরকারি প্রাথমিক ও ৭০টি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৌলভীবাজারে ১২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃষ্টি ও ঢলের কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া থেকে জানান, জেলার মোট ৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার কারণে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় গাইবান্ধা জেলায় ১৫৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মাউশির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, লালমনিরহাট জেলার ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় এসব স্কুলে শিক্ষাদান সাময়িক স্থগিত আছে। আস্তে আস্তে পানি নামতে শুরু করলেও কবে নাগাদ ক্লাস-পরীক্ষা চালু হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। বন্যা পরিস্থিতির কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্সের বুধ ও বৃহস্পতিবারের পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। শনি, রবি ও সোমবারের পরীক্ষাও বন্যার কারণে স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত পরীক্ষাগুলোর সময়সূচি পরে জানানো হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে। বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বুধবারের ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের (বর্তমান এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ) বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে হাঁটুপানি বিরাজ করছে। ফলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা তিন দিনের ছুটি নিয়েছেন। বন্যার কারণে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয় প্রতি বছরই। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠে গেছে, সেগুলোয় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি সরে গেলে শিক্ষকরা বাড়তি ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের এ ক্ষতি পুষিয়ে দেবেন।’ অবকাঠামোগত ক্ষতি হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা পেলে সেগুলো মেরামত বা নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর