শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
সন্ত্রাসী হামলায় থমথমে ইউরোপ

ফের হামলার ছক ভেস্তে ছয় জঙ্গি নিহত

স্পেনে বাংলাদেশিরা নিরাপদে আইএসের দায় স্বীকার

সাহাদুল সুহেদ, স্পেন থেকে

ফের হামলার ছক ভেস্তে ছয় জঙ্গি নিহত

বার্সেলোনায় গাড়ি হামলায় নিহতদের স্মরণ —এএফপি

আরও ভয়ঙ্কর হামলার প্রস্তুতি চলছিল স্পেনের বার্সেলোনায়। তবে এবার তা আগেই ঠেকিয়ে দিয়েছে পুলিশ। বার্সেলোনা থেকে ৭০ মাইল দূরে কামব্রিলসে গুলি করে হত্যা করা হয় পাঁচ সন্দেহভাজন জঙ্গিকে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল ভোরে। তবে ওই জঙ্গিদের সঙ্গে বার্সেলোনা হামলার কোনো যোগ আছে কিনা তা নিশ্চিত করেনি পুলিশ। পুলিশের দাবি, কামব্রিলসেও বার্সেলোনার ধাঁচেই হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওই সন্দেহভাজনরা। এ ঘটনায় ছয় নাগরিক ও এক পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে দুর্বৃত্তরা সাদা রঙের একটি ভ্যান নিয়ে লা রামলা চত্বরের লোকসমাগমের মধ্য দিয়ে চালাতে থাকে। এ ঘটনায় ১৪ জন নিহত হন। একপর্যায়ে গাড়িটি একটি পত্রিকা স্টলে আঘাত করে থেমে যায়। এ সময় ওই সন্ত্রাসী গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায়। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। নিহতের বেশির ভাগই বিদেশি। আহত হয়েছেন শতাধিক। মৃতদের তালিকায় নাম রয়েছে একটি বছর তিনেকের শিশুরও। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ভ্যানটি আঁকাবাঁকাভাবে সামনে এগোচ্ছিল। খুব দ্রুতগতিতে লোকজনকে পিষ্ট করছিল। যতটা সম্ভব তত বেশিসংখ্যক মানুষকে পিষ্ট করার চেষ্টা করছিল। ভ্যানের চাপায় লোকজন সড়কে লুটিয়ে পড়ছিল। উল্লেখ্য, লা রামলা এলাকায় প্রচুর বাংলাদেশির বাস। তবে জঙ্গি হামলার ঘটনায় বাংলাদেশি কারও ক্ষতি হয়নি বলে দূতাবাস নিশ্চিত করেছে। এদিকে কাতালান পুলিশ দাবি করেছে, বার্সেলোনা ও ক্যামব্রিলসে হামলায় দুই ভাই জড়িত। বড় ভাই হামলায় ব্যবহারের জন্য দুটি গাড়ি ভাড়া করেন। আর ছোট ভাই বার্সেলোনায় পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দিয়ে ১৩ জনকে হত্যা করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ড্রিস ওকাবিরকে (২০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ছোট ভাই মওসা ওকাবিরকে (১৮) হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, কিন্তু তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তাদের একজন আফ্রিকার উত্তর উপকূলে স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত শহর মেলিল্লার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। আরেকজনকে গতকাল রিপোল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চতুর্থজনকে গ্রেফতার করা হলেও তার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

এদিকে কামব্রিলসের ঘটনায় সন্দেহভাজন এক সন্ত্রাসীকে মৃত অবস্থায় একটি গাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির গাড়িকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকে পুলিশ থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নাকি সে নিজেই আত্মহত্যা করেছে, তা পুলিশ স্পষ্ট করে জানায়নি। স্পেনের প্রেসিডেন্ট মারিয়ানো রাখোই জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে দেশটিতে তিন দিনের শোক পালন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। নিস, বার্লিন, স্টকহোম, লন্ডনের স্টাইলেই বৃহস্পতিবার বিকালে বার্সেলোনার জনপ্রিয় পর্যটন শহর লা রামলায় একটি ভ্যান নিয়ে জঙ্গি হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতি।

বাংলাদেশিরা নিরাপদে : লা রামলা এলাকাটি বাংলাদেশি অধ্যুষিত হলেও জঙ্গি হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে অনেক বাংলাদেশি ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন আলী হাসান আজমল। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি পাশ দিয়ে বাইসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম দ্রুতগতি নিয়ে একটি গাড়ি রামলার ওপর উঠল। এ সময় অনেক মানুষ ভয়ে আর্তনাদ করছিল। আমি দ্রুত সাইকেল নিয়ে নিরাপদ স্থানে যাই। দূর থেকে মানুষের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেছি।’ স্পেনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মিনিস্টার ও হেড অব চ্যান্সেরি এম হারুন আল রাশিদ বলেন, ‘বার্সেলোনায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছেন। তাই আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।’ বাংলাদেশিদের নিরাপদে থাকার জন্যও তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।

দায় স্বীকার আইএসের : বার্সেলোনায় বৃহস্পতিবারের রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। আইএসের কথিত সংবাদ সংস্থা ‘আমাক’ বলেছে, বার্সেলোনায় যারা হামলা চালিয়েছে, তারা তাদের (আইএস) যোদ্ধা। এ হামলাকে প্রতিশোধ হিসেবে বর্ণনা করেছে আইএস।

দুই মাস আগেই সতর্ক করেছিল সিআইএ : বার্সেলোনায় হামলা হতে পারে বলে দুই মাস আগেই কাতালান কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। কেবল তাই নয়, জুলাইয়ের শেষের দিকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসও স্পেনে হামলা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছিল। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নির্দিষ্ট করে বার্সেলোনার লা রামলা শহরের নাম উল্লেখ করেছিল সিআইএ। বলা হয়েছিল প্যারিস, লন্ডন ও বার্লিনের মতো ইউরোপীয় শহরগুলোয় হামলার পর লা রামলাও হামলার নিশ্চিত লক্ষ্যবস্তু হয়ে পড়েছে।

২৪ দেশের নাগরিক হতাহত : বার্সেলোনায় গাড়ি হামলায় অন্তত ২৪টি দেশের নাগরিক হতাহতের শিকার হয়েছেন। কাতালান কর্তৃপক্ষের বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর