রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন লতিফ সিদ্দিকীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

হজ নিয়ে মন্তব্যের পর মন্ত্রিত্ব, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ও প্রাথমিক সদস্যপদ হারানো আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দীর্ঘদিন পর গতকাল হঠাৎ করেই গণমাধ্যমের সামনে এলেন। বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ১২ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে কথা বলেন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে। তার দাবি, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে উচ্চ আদালতের কর্মকাণ্ড ষড়যন্ত্র কিনা তা ইতিহাসের গবেষণার বিষয় হলেও এই রায় ষড়যন্ত্রকারীদের একটি বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রায়ের পর্যবেক্ষণ সাংবিধানিক পন্থায় শেখ হাসিনাকে কাত করার চেষ্টা। বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। গত ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রবাসে এক অনুষ্ঠানে হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। ওই বছরের ১২ অক্টোবর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর ২৪ অক্টোবর দলের প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয় লতিফ সিদ্দিকীর। এরপর তাকে আর গণমাধ্যমে দেখা যায়নি। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে যখন উদ্ভূত পরিস্থিতি বিরাজ করছে তখন তিনি হাজির হলেন গণমাধ্যমের সামনে। এ সময় তার স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী ছাড়াও নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইল-৪ আসনের কিছু নেতা-কর্মীকে দেখা যায়।

লিখিত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে আসল আক্রমণের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী। পলিটিক্যাল এক্সিকিউটিভ বলতে প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, হাই কোর্টের বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের লর্ডগণ যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করেছেন তার কি আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল? তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী কোনো বিষয় নয়। আমার ধারণা বিষয়টি অন্য কোথাও আড়াল করে রাখা হয়েছে। আমরা দূর থেকে হাত-পা ছুড়ছি, কিন্তু আসল বিষয়টি দেখতে পাচ্ছি না। তিনি বলেন,  ব্যাপারটা কি এমন  যে মানুষ হত্যা, যানবাহন পোড়ানো, ককটেল-বোমা ফোটানো, বৃক্ষনিধন, নির্বাচন বর্জন, সড়ক অবরোধ, পুলিশ হত্যা, জঙ্গিবাদ ও হলি আর্টিজান হত্যা তাণ্ডব করে কিছু হলো না, অসাংবিধানিক শক্তিকেও ব্যবহারের সুযোগ কমে গেছে, বার বার ব্যবহার করে অস্ত্রটি ভোঁতা হয়ে গেছে, তাই সাংবিধানিক পন্থায় শেখ হাসিনাকে কাত করা হবে। বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। সাবেক এই নেতা দাবি করেন, ব্যাপারটা আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সঠিক কৌশল নিলেও অন্যরা ষড়যন্ত্রকে উসকে দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। স্বাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সবটাই শেখ মুজিবের নেতৃত্ব-নির্দেশনায়। এখানে কোনো দাবিদার নেই। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অপ্রাসঙ্গিক ও অযাচিতভাবে বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্ব নিয়ে অসঙ্গত ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যে ইঙ্গিত ঘোষক বিতর্কের অনুকূলে যায় বলে ভাবলে দোষের কিছু নেই। সাবেক মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটি রায়ের মদদদাতা ও শক্তির উৎস জনগণ, সংবিধান কিংবা আইন নয়, এর মদদদাতা সেনানিবাস। তাহলে এই রায়ের মদদদাতা কে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জানি, বলব না। কে লিখেছেন তাও আমি জানি, কিন্তু বলব না। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন তাহলে কি প্রধান বিচারপতি এ রায় লেখেননি? জবাবে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, তাও আমি বলব না।

সর্বশেষ খবর