সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে তিন মাস : প্রধানমন্ত্রী

দিনাজপুর ও কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে তিন মাস : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দিনাজপুরে ত্রাণ বিতরণ করেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যাদুর্গতদের আগামী তিন মাস খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নষ্ট ঘরবাড়ি দ্রুত তৈরি বা মেরামত করে দেওয়া হবে। যেসব ছেলেমেয়ের বই-খাতা নষ্ট হয়েছে, তাদের আবার বই  দেওয়া হবে। কৃষকদের কৃষি ঋণ দেওয়া হবে। গতকাল দিনাজপুর জিলা স্কুল মাঠ এবং কুড়িগ্রামের পাঙ্গারানী লক্ষ্মীপ্রিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে পৃথক দুটি জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি উভয় স্থানে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বন্যাদুর্গতদের উদ্দেশে বলেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। আপনারা চিন্তা করবেন না। আওয়ামী লীগ, বিজিবি, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী সবাই ত্রাণ বিতরণ করছে। তিনি বলেন, একটি মানুষও যাতে না খেয়ে মারা না যায়, গৃহহীন না থাকেন, আমরা তার ব্যবস্থা করেছি। কৃষকদের ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে থাকে। তাদের প্রতি আহ্বান, সপ্তাহ তোলার জন্য বানভাসি মানুষ, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ওপর যেন জুলুম করা না হয়। তিনি বন্যাদুর্গতদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আমাদের ওপর কেবল ভরসা রাখবেন। আপনাদের পাশে আছি। যাদের ফসল নষ্ট হয়েছে, তাদের ঋণের ব্যবস্থা করাসহ যা যা দরকার সবই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরবঙ্গে ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার ছিল, মঙ্গা লেগেই থাকত। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেই সিদ্ধান্ত নেয় এ এলাকায় যেন মঙ্গা না হয়। এখানকার প্রত্যেক মানুষ যেন কাজ পায়, খাদ্য পায়। আমরা মঙ্গা দূর করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে দেশে আবার মঙ্গা দেখা দেয়। ২০০৯ সালে আবার আমরা ক্ষমতায় আসার পর আট বছরেও এ এলাকায় মঙ্গা হয়নি। আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাবা, মা, ভাই-বোন সব হারিয়েছি। আমার আর হারানোর কিছু নেই। আমার বাবা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। আমি দেশের মানুষের জন্য আমার জীবন উত্সর্গ করেছি। প্রয়োজনে আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমিও জীবন দেব। তিনি বলেন, বন্যা-দুর্যোগ এসব মোকাবিলা করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। সেই পরিকল্পনা নিয়েই সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে ইয়াসমিন হত্যার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইয়াসমিন হত্যার ঘটনায় সারা দিনাজপুরে আগুন জ্বলছিল। তখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি আপনাদের খবর নিতে আসেননি। আমি সেদিন আপনাদের পাশে এসেছিলাম। তিনি বলেন, অতিবৃষ্টি ও প্রবল উজানের পানি নেমে আসায় নদ-নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়া থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, খেতের ফসল নষ্ট হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের বই-খাতা নষ্ট হয়েছে। আমরা সবই জানি। ইতিমধ্যে সব ব্যবস্থা নিয়েছি। যাতে প্রত্যেকের কাছে ত্রাণ পৌঁছায়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি, শিবলি সাদিক এমপি প্রমুখ।

কুড়িগ্রামে প্রধানমন্ত্রী : কুড়িগ্রামের রাজারহাটের পাঙ্গারানী লক্ষ্মীপ্রিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোনো সংকটে জনগণের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকুক আর নাই থাকুক তারা জনগণের পাশে ছিল, থাকবে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন কোনো ঘটনা নয় বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে, তখন থেকেই তা মোকাবিলা করার জন্য আমরা তৈরি হয়েছি। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। বিদেশ থেকে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য এনেছি। প্রত্যেক বানভাসি প্রয়োজন মতো তা পাবেন। ত্রাণ সহায়তা আগামী ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার নিজের কিছু প্রয়োজন নেই।  জনগণের সুখ-শান্তিকেই প্রাধান্য দিই। ত্রাণ সহায়তা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাফর আলীসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয়  নেতারা।

সর্বশেষ খবর