সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাবনায় ২ স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের শিকার

থানা নেয়নি, আদালতে মামলা

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনার সুজানগরে দুই স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের পর ইন্টারনেটে সে ঘটনার ভিডিও প্রকাশ করায় ছয় ধর্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষিতারা বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছে। গতকাল বিকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. ইমরান হোসেন চৌধুরী মামলাটি গ্রহণ করেন। ধর্ষকরা সবাই সুজানগর পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহাবের কর্মী-সমর্থক। মামলার আইনজীবী রাজিউল্লাহ সরদার রঞ্জু বলেন, ‘সুজানগর থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ না করায় গতকাল মামলাটি এ আদালতে করা হয়। আদালত মামলাটি গ্রহণ করায় আমরা ন্যায়বিচার পাব বলে আশা করছি।’ তিনি মামলার বিবরণে জানান, সুজানগর পৌর এলাকা চর ভবানীপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের অষ্টম শ্রেণির এই দুই ছাত্রী গত ১ আগস্ট বিকালে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ছয় বখাটে চর ভবানীপুর মাস্টারপাড়ার হযরত আলী, আল আমিন, শাহিন, মিঠুন, পাংকু ও সোহেল রানা মিলে জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে তাদের তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী নিকিরী পাড়ার একটি বাঁশবাগানে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। মোবাইলে তার ভিডিও ধারণ করে। ঘটনাটি কাউকে জানানো হলে ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ারও হুমকি দেয়। দুই ছাত্রী বিষয়টি ভয়ে গোপন রাখে। ঘটনার কয়েক দিন পর ফের ভিডিও দেখিয়ে তাদের সঙ্গে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে দুই ছাত্রী তা প্রত্যাখ্যান করে। এরপর বখাটেরা ওই ভিডিওচিত্র ফেসবুকে আপলোড করলে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই দুই ছাত্রীর অভিভাবকরা থানায় বখাটেদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে মামলা গ্রহণ না করে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়রের কাছে ওই দুই ছাত্রীর পিতা-মাতা বিচার দাবি করলেও তিনি কৌশলে শালিসি বৈঠকের কথা বলে সময় ক্ষেপণ করেন। একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই তারা আদালতে মামলাটি করে। এ ঘটনার শিকার দুই ছাত্রী বলে, ‘ঘটনার পর থেকে বখাটেদের ভয়ে আমরা বাড়ির বাইরে যেতে পারছি না এবং কাউকে মুখ দেখাতে পারছি না। সুষ্ঠু বিচার না পেলে আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’ এ বিষয়ে ওই দুই ছাত্রীর পিতা-মাতা জানান, ‘আমরা গরিব মানুষ, বখাটেরা প্রভাবশালী আওয়ামী পরিবারের সন্তান ও পৌর মেয়রের ক্যাডার হওয়ায় থানা পুলিশ এবং মেয়রের কাছে আমরা বিচার পাইনি।’ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহিনুজ্জামান শাহিন বলেন, বখাটেরা পৌর মেয়রের ক্যাডার হওয়ায় থানা মামলাটি গ্রহণ করেনি। আমরা কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি তাদের। এ প্রসঙ্গে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল হক বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ কেউ আমাদের কাছে নিয়ে আসেনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আবদুল ওয়াহাব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘মেয়ে দুটির অভিভাবকরা আমার কাছে এসেছিল। এটা নিয়ে কয়েক দফা শালিসি বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। তিনি বলেন, তারা আওয়ামী পরিবারের ছেলে হলেও আমার লোক নয়। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর