মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

এবার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ

২৪ আগস্ট আলোচনা শুরু আওয়ামী লীগ-বিএনপি ঈদের পর, মতামত নিয়ে নির্বাচনী আইন সংস্কার

গোলাম রাব্বানী

সুশীলসমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপের পর তৃতীয় ধাপে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসার প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২৪ আগস্ট থেকে এই সংলাপ শুরু হতে যাচ্ছে। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে বসবে ঈদের পরে। ইতিমধ্যে ঈদের আগে-পরে ১২ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঈদের আগের সংলাপে অংশ নিতে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে ৬ দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বরাবর।

এদিকে সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের

পরামর্শগুলো

রাজনৈতিক দলের কাছে উপস্থাপন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনকে প্রভাব মুক্ত করতে ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ‘না ভোট’, সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে। তবে আলোচ্য সূচিতে না থাকলেও নির্বাচনে ইভিএম বা ডিভিএম ব্যবহার নিয়েও আলোচনা হতে পারে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছে, দলের নামের আদ্যাক্ষর, নিবন্ধনক্রমের শুরু থেকে গত দুই নির্বাচন কমিশন সংলাপ করলেও এবার শুরু হচ্ছে নিবন্ধনের শেষ থেকে। সে হিসাবে বিএনপির পরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসবে ইসি। ঈদুল আজহার পরে এই দুই দলের সঙ্গে বসবে। আর নিবন্ধিত দলের ক্রমের নিচের দল প্রথম সংলাপে আমন্ত্রণ পেয়েছে। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি নিবন্ধনক্রমের শেষ থেকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সে হিসেবে বিএনএফ (নিবন্ধন নম্বর ৪২) সবার আগে আর এলডিপি (নিবন্ধন নম্বর ১) সবার শেষে আসবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের (নিবন্ধনক্রম ৬) আগে বিএনপির (নিবন্ধনক্রম ৭) সঙ্গে বসবে ইসি। ২০০৮ সাল থেকে ৪২টি দল নিবন্ধিত হলেও বর্তমানে ৪০টি দল ইসিতে নিবন্ধিত রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। রাজনৈতিক দলের সংলাপের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৪ আগস্ট নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু হচ্ছে। ঈদুল আজহার আগে ২৪, ২৮ ও ৩০ আগস্ট সংলাপ হবে। পরে ১০ সেপ্টেম্বর আবার সংলাপ শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে ঈদের পর ৬ দলের তারিখও চূড়ান্ত করা হয়েছে। তা হলো—১০, ১২ ও ১৪ সেপ্টেম্বর। এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘এ পর্যন্ত পাওয়া সুপারিশগুলো দলগুলোর সামনে তুলে ধরা হবে। সংলাপ শেষ করে সব প্রস্তাব একীভূত করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।’

সংলাপসূচি : রাজনৈতিক দলের সংলাপে প্রথম দিন ২৪ আগস্ট বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) নিবন্ধনক্রম ৪২। বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) নিবন্ধনক্রম ৪১। ২৮ আগস্ট বেলা ১১টায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নিবন্ধনক্রম ৪০। বিকাল ৩টায় খেলাফত মজলিশ (নিবন্ধনক্রম ৩৮)। ৩০ আগস্ট বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (নিবন্ধনক্রম ৩৭)। বিকাল ৩টায় জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) নিবন্ধনক্রম ৩৬। ইতিমধ্যে এ ছয় দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আর ঈদের পর ১০, ১২ ও ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল-বিকাল ছয় দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। শিগগির তাদের কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হবে। এ ক্ষেত্রে ১০ সেপ্টেম্বর সকালে বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট (নিবন্ধনক্রম ৩৫) ও বিকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (নিবন্ধনক্রম ৩৪)। ১২ সেপ্টেম্বর সকালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (নিবন্ধনক্রম ৩৩) ও বিকালে ইসলামী ঐক্যজোট (নিবন্ধনক্রম ৩২)। ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে কল্যাণ পার্টি (নিবন্ধনক্রম ৩১) ও বিকালে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (নিবন্ধনক্রম ৩০)। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, সংলাপে সাতটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তারা বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বাংলা ভাষায় প্রণয়ন, ভোটে অবৈধ অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধে আইন সংস্কার, সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজ করা, প্রবাসী ভোটারদের ভোটদান নিশ্চিত করা ও নির্ভুল ভোটার তালিকা করা, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষাসংক্রান্ত প্রস্তাব, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সবার সক্ষমতা বৃদ্ধি করার বিষয়ে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে।

সংলাপে সুশীল সমাজের প্রস্তাব : অনলাইনে মনোনয়নপত্র চালু, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা যায় কিনা, ভোটার স্লিপ ইসির উদ্যোগে বিতরণ, নির্বাচনকালীন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ইসির নিয়ন্ত্রণে, নির্বাচনী ব্যয় কমানো, তদারকি কমিটি করা, সোশ্যাল মিডিয়া তদারকি, ভোটকক্ষে কোনো মোবাইল নয়, গণমাধ্যমে প্রার্থী ও দল নিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন রোধে আচরণবিধিতে যুক্ত করা, নির্বাচনী ব্যয় ও প্রচারণা করিয়ে দেবে ইসি ও সরকার, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোট, প্রবাসী কোটি ভোটারকে তালিকাভুক্ত ও ভোটাধিকার প্রয়োগে ব্যবস্থা।

সংলাপে সাংবাদিকদের প্রস্তাব : ১. সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন। ২. বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ। ৩. সেনা মোতায়েনের পক্ষে বলেছেন কেউ কেউ; অধিকাংশই বলেছেন সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। ৪. ‘না’ ভোটের পক্ষে-বিপক্ষে মত; কেউ ভালো বলেছেন, কেউ ‘না’ ভোটের বিপক্ষে বলেছেন। ৫. দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন। ৬. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাংলায় করা। ৭. জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ। ৮. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। ৯. আচরণবিধি প্রয়োগে কঠোরতা। ১০. প্রবাসীদের ভোটার হওয়ার ও ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা। ১১. নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ। ১২. ধর্মকে কোনোভাবেই যাতে ভোটের প্রচারে ব্যবহার করতে না পারে। ১৩. অবৈধ অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ। ১৪. প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ ও প্রচারের উদ্যোগী হওয়া। ১৫. নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও কাউকে যেন ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে না হয়। ১৬. ইসির দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন। ১৭. অনলাইনে মনোনয়ন নেওয়ার সুযোগ দান। ১৮. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিকরণ। ১৯. ভোটার ও প্রার্থীর আস্থা অর্জন। ২০. নারী ভোটারের উপস্থিতি ও নারী নেতৃত্বের অগ্রগতি ধরে রাখতে ভূমিকা নেওয়া। এ ছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দল যাতে নিবন্ধন না পায় এবং জামায়াতে ইসলামী যাতে অন্য কোনো নামে বা অন্য কোনো ফরম্যাটে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে বিষয়ে আইনি উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ এসেছে।

 

সর্বশেষ খবর