মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইস্টার্ন বাইপাস ১৮ বছর ফাইলবন্দী

মানিক মুনতাসির

রাজধানীর যানজট নিরসনে ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণ প্রকল্প শুধু পরিকল্পনায়ই আটকে আছে ১৮ বছর। প্রথমদিকে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন দিলেও তা কাজে আসেনি। এরপর জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর আরও এক বছর কেটে গেছে। গত বছরের শুরুতে জাইকার ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রকল্পটি সম্পর্কে একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলেন। এরপর আর কোনো কাজ এগোয়নি। সেই সম্ভাব্যতা যাচাই আর প্রেজেন্টেশন ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে আছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী  সংস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো)। প্রকল্পটি ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদনের পর এখন পর্যন্ত অর্থায়নকারী সংস্থা রুট নির্দিষ্ট করতে না পারায় চলতি বছরও কাজ শুরুর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে পাউবো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান বলেন, এ প্রকল্পটি নিয়ে মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর সামনে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছিল প্রকল্পটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এতে জাইকা তাদের বিশদ পরিকল্পনাও তুলে ধরে। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে এরপর কাজ খুব একটা এগোয়নি। তবে খুব শিগগিরই এর মূল কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ঢাকার অভ্যন্তরে যানবাহনের চাপ কমাতে ঢাকার উত্তরদিকে টঙ্গী খাল, দক্ষিণে ঢাকা-ডেমরা রোড, পূর্বে বালু নদী এবং পশ্চিমে প্রগতি সরণী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার ইস্টার্ন বাইপাস রোড নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রজেক্ট কনসেপ্ট পেপার বা প্রকল্পের ধারণা পত্র (পিসিপি) অনুমোদিত হয়। এ সময় প্রকল্পটির মোট আনুমানিক ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের তহবিল (জিওবি) থেকে ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা জোগানের পরিকল্পনা করা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বব্যাংক এতে অর্থায়নের আগ্রহ দেখালেও পরে সংস্থাটি এ থেকে সরে দাঁড়ায়। এবং পরবর্তীতে জাইকা এতে অর্থায়নের আগ্রহ দেখায়। জাইকা প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা, উপকারিতা, উপযোগিতার বিষয়ে সংস্থাটি প্রধানমন্ত্রীর সামনে একটি প্রেজেন্টেশনও দেয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিকতা আর অর্থায়নের শর্ত জটিলতার কারণে সে আলোচনাও ভেস্তে যায়। ফলে অর্থায়নকারী সংস্থা চূড়ান্ত না হওয়ায় প্রায় ১৮ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত পরিকল্পনায়ই রয়ে গেছে প্রকল্পটি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপর সূত্র জানায়, ‘ঢাকা সমন্বিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক বহুমুখী প্রকল্পের’ জন্য যৌথভাবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০০০ সালে কিছু কাজ করে। এ দুই প্রকল্পের জন্য সংস্থাটি এ সময় ৭০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর কর্তৃক টঙ্গী থেকে শাহআলী মাজার পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পাকা করা হয়। পাশাপাশি তুরাগ নদের তীর ঘেঁষে কয়েক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে ২০০৩ সালে এ কাজ স্থগিত হয়ে যায়। পাউবোর তথ্যমতে, ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক বাস্তবায়ন হলে ঢাকার ভিতরে যানজট অনেকটাই কমে যাবে। কেন না এ বাইপাস ব্যবহার করে গাড়িগুলো ঢাকার ভিতরে না এসেও রাজধানীর একপাশ থেকে অপর পাশে চলাচল করতে পারবে। সে সময় প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল ২৪ কিলোমিটার। কিন্তু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এক সমীক্ষার তথ্যমতে, সময়ের ব্যবধানে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকার আকার বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ গুণ। ফলে যানজট নিরসন করতে হলে এ প্রকল্পটির আওতাও এখন অনেক গুণ বাড়বে। ফলে প্রকল্পটির ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে স্বাভাবিকভাবেই।

সর্বশেষ খবর