বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

জলবায়ু প্রকল্পে অনিয়ম করছে প্রভাবশালীরা

-------- টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রকল্পে ক্ষমতাশালীদের প্রভাবে অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাউবোর চারটি প্রকল্প অনুমোদনে বিভিন্ন পর্যায় থেকে সুপারিশ ও প্রভাব খাটানো হয়েছে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়নাকারীরা। ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসঙ্গে’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে পরিচালিত ছয়টি প্রকল্প নিয়ে নিজেদের গবেষণায় পাওয়া তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, উপদেষ্টা, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা ও ক্লাইমেট ফাইন্যান্স গভর্নেন্স (সিএফজি) ইউনিটের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম জাকির হোসেন খান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়ায় শুদ্ধাচার চর্চার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, গবেষণাধীন ছয়টি প্রকল্পের মধ্যে চারটিই অনুমোদনের সময় বিভিন্ন পর্যায় থেকে সুপারিশ ও প্রভাব খাটানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রকল্পে জনৈক সচিব, একটি প্রকল্পে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রীর আত্মীয় ও স্থানীয় এমপি এবং দুটি প্রকল্পে স্থানীয় এমপি প্রভাব খাটিয়েছেন। এসব প্রকল্পে কারা জড়িত তাদের কারও নাম প্রকাশ করছি না। শুধু অনিয়মের বিষয়টা তুলে ধরছি, যাতে তারা শুদ্ধাচার চর্চার সুযোগ পান।’ তিনি বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ফান্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা স্বচ্ছতার বিষয়টি তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রে আমরা স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা করলে তারা অন্তত এটা আর বলতে পারবে না। এ গবেষণায় নিয়মানুক্রমিক নমুনায়নের মাধ্যমে জরিপে অংশগ্রহণের জন্য ৬০০ জন উত্তরদাতা বাছাই করা হয়। সেই জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে ফলাফল বের করে আনা হয়।’ টিআইবির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক গোলাম মহিউদ্দিন মূল প্রবন্ধে বলেন, ‘আমরা ছয়টি প্রকল্প গবেষণার জন্য ঠিক করি। এর চারটিতেই প্রভাব খাটিয়ে অনুমোদন দেওয়ার মতো অনিয়ম পাওয়া গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গৃহীত প্রকল্পের মধ্যে বড় প্রকল্পগুলো পাউবো বাস্তবায়ন করে।’ গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘সংস্থাটি এ খাতে চলমান প্রকল্পের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪১টি বাস্তবায়ন করছে, যা মোট অর্থায়নের ৪০ শতাংশ। এ ছয়টি প্রকল্পের মধ্যে দুটির কাজের নিম্নমানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি এর জেরে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে ঠিকাদারের লোকজনের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। আরেকটি প্রকল্পে বাঁধের নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার আগেই বাঁধের কিছু জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘একটি প্রকল্পের ঠিকাদার খাল খননের মাটি বাঁধের পাড় টেকসই করার জন্য না দিয়ে নিজের ইটভাটায় ব্যবহার করেছেন। আবার আরেকটি প্রকল্পের ১০-১৫টি গাছ কেটে (প্রতিটি গাছের দাম গড়ে ২৮ হাজার টাকা) আত্মসাৎ করেছেন। ছয়টি প্রকল্পের কোনোটিরই কার্যক্রমের শিডিউল জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয়নি। প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জনগণকে জানানোর কথা থাকলেও ৮৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানেন না কোথায় তথ্য পাওয়া যাবে।’

সর্বশেষ খবর