শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
বাপেক্স-পেট্রোবাংলার সঙ্গে স্বাক্ষরিত দুটি চুক্তি অবৈধ

নাইকোর সম্পদ জব্দের নির্দেশ হাই কোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহের জন্য ২০০৩ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের সঙ্গে কানাডার কোম্পানি নাইকোর করা যৌথ উদ্যোগ (জয়েন্ট ভেঞ্চার) চুক্তি অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার সঙ্গে নাইকোর গ্যাস সরবরাহ ও কেনাবেচার চুক্তিও অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছে আদালত। এ বিষয়ে করা একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। একই সঙ্গে ওই দুই চুক্তির অধীনে নাইকো কানাডা ও নাইকো বাংলাদেশের সব সম্পদ এবং ৯ নম্বর ব্লকে থাকা নাইকোর সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালত বলেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে ওই চুক্তি দুটি হয়েছে। সুনামগঞ্জের ছাতকে টেংরাটিলা গ্যাস ক্ষেত্রে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিম্ন আদালতে বিচারাধীন ক্ষতিপূরণ ও অর্থ আদায়সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নাইকোকে কোনো ধরনের পেমেন্ট করা যাবে না।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এটা স্বীকৃত যে, নাইকো দুর্নীতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০০৩ সালে যৌথ অংশীদারিত্ব এবং গ্যাস ক্রয়-বিক্রয়বিষয়ক চুক্তি করে। এ ক্ষেত্রে নাইকো বাংলাদেশে তাদের তৎকালীন এজেন্ট কাসেম শরীফের সঙ্গে ৪ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছিল। পরে তাকে নাইকো বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এটা স্বীকৃত যে, কাজ পাওয়ার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনকে উেকাচ দেওয়া হয়েছিল। যদিও নাইকো বলেছে যে, উেকাচ নয়, উপহার হিসেবে তারা তা দিয়েছিল। কিন্তু এ ধরনের উপহারসামগ্রী দেওয়া বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানজীব উল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান। নাইকোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান, বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার পক্ষে মঈন গনি। বাংলাদেশে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহের জন্য নাইকোর সঙ্গে দুটি চুক্তি করে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা। একটি বাপেক্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি, অন্যটি পেট্রোবাংলার সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ ও কেনাবেচার চুক্তি। মঈন গনি সাংবাদিকদের জানান, নাইকোর সঙ্গে করা দুটি চুক্তি চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে ২০১৬ সালে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম একটি রিট করেন।

রিটে বলা হয়, ২০০৩ ও ২০০৬ সালে নাইকোর সঙ্গে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার চুক্তি সঠিকভাবে হয়নি। দুর্নীতির মাধ্যমে হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৫ সালে ছাতকে যে বিস্ফোরণ ঘটেছে এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশে থাকা নাইকোর সব সম্পত্তি জব্দের জন্যও নির্দেশনা চাওয়া হয়। শুনানি করে আদালত ২০১৬ সালের ৯ মে রুল জারি করে। ওই চুক্তি কেন বাতিল করা হবে না— তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব; বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক; পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এবং নাইকো কানাডা ও নাইকো বাংলাদেশকে জবাব দিতে বলা হয়। এ ছাড়া আদালত ওই চুক্তির কার্যকারিতা স্থগিত করে। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাই কোর্ট এ রায় দিয়েছে। এই আইনজীবী জানান, নাইকোর সঙ্গে ২০০৩ সালে করা বাপেক্সের চুক্তি ও ২০০৬ সালের পেট্রোবাংলার সঙ্গে গ্যাসবিষয়ক চুক্তি হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছে।

সর্বশেষ খবর