সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট

শেষ বিকালের রোমাঞ্চ

আসিফ ইকবাল

শেষ বিকালের রোমাঞ্চ

মিরপুরে গতকাল নাথান লিওনকে আউট করার পর উল্লাস করছেন সাকিব —রোহেত রাজীব

মিরপুর স্টেডিয়ামে পড়ন্ত বিকালের ধুসর আভাটা হঠাৎই উজ্জ্বল হয়ে উঠে! স্পিনারদের ঘূর্ণিতে দিনের শেষ ঘণ্টায় প্রতিরোধের দেওয়াল তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ায় রোমাঞ্চ তার মাত্রা ছড়িয়ে রোমাঞ্চিত করে তোলে ক্রিকেটপ্রেমীদের। বহুল আকাঙ্ক্ষার, বহুল প্রতীক্ষার বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্টের প্রথম দিনই ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিয়েছে হাজারগুণ। মনস্তাত্ত্ব্বিক ও বাগযুদ্ধের টেস্টের প্রথম দিনই পরতে পরতে উত্তেজনা ছড়িয়ে সরলদোলকের মতো দুলতে শুরু করেছে। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উত্তেজনা ছড়ানো টেস্টের শেষ বিকালের নাটক ম্যাচের আগাম ভবিতব্যও করে ফেলেছে! মিরপুরের নায়ক যে স্পিনাররাই হবেন, সেটা নিয়ে বোধকরি দিনশেষে কারও দ্বিমত থাকছে না। গোটা দিনে যেখানে উইকেটের পতন হয়েছে ১৩টি এবং দুই দল রান করেছে ২৭৮(২৬০+১৮)।  সেখানে, শেষ এক ঘণ্টায় রান উঠেছে মাত্র ৬০ এবং পতন হয়েছে ৭ উইকেটের। এজন্য অবশ্য বৃষ্টি ছোট্ট একটি ধন্যবাদ পেতেই পারে! বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ ছিল আধ ঘণ্টার উপরে। সেই বাড়তি সময়েই সফরকারী অস্ট্রেলিয়াকে আঁটোসাঁটো বাঁধনে বেঁধে চালকের আসনে বসে পড়েছে বাংলাদেশ। আগের রাত আকাশ কেঁদেছে তার স্বাভাবিক ধারায়। মনে জন্ম নিয়েছিল শঙ্কা। দীর্ঘ অপেক্ষার টেস্টটি মাঠে গড়াবে তো? প্রকৃতি শেষ পর্যন্ত সকালে আর বাঁধা হয়নি। নির্ধারিত সময়ে মাঠে খেলা গড়ায় এবং প্রথম ৫ ওভার ভুলে যেতেই চাইবেন স্বাগতিক দল ও ক্রিকেটপ্রেমীরা। প্যাট কামিন্সের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কুকড়ে পড়ে টাইগাররা। হতাশার কালো মেঘে ছেয়ে পড়া গোটা দেশকে এরপর আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখান দুই বন্ধু, দুই দেশ সেরা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। চার নম্বর উইকেটে জুটি গড়ে দুজনে যোগ করেন ১৫৫। রেকর্ডের পাতায় যার অবস্থান দুই নম্বরে। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে সেটার অবস্থান সবার উপরে। দলকে খাদের কিনারা থেকে  অভিজ্ঞতা ও মেধা দিয়ে দুজনে টেনে শক্ত অবস্থান দেন। দুজনের জন্য অবশ্য টেস্টটি বিশেষ কিছু। দুজনেই খেলতে নামেন ক্যারিয়ারের ৫০ নম্বর টেস্ট। আগে হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ আশরাফুল ও বর্তমান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম খেলেছেন পঞ্চাশটি করে টেস্ট। কিন্তু স্মরণীয় করতে পারেননি ত্রয়ীর কেউই। দুই বন্ধু সবাইকে ম্লান করে ইতিহাসের পাতায় জায়গা নেন পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে আলগা শট খেলে পয়েন্টে ওয়ার্নারের সহজ ক্যাচ হওয়ার আগে  তামিম নামের পাশে লিখেন ৭১ রানের প্রত্যয়ী ইনিংস। যা তার ক্যারিয়ারের ২৩ নম্বর হাফসেঞ্চুরি। বিশ্বসেরা সাকিব সাজঘরে ফিরেন সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১৬ কদম আগে। ৮৪ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারের ২২ নম্বর হাফ সেঞ্চুরি। দুজনের রেকর্ড গড়া জুটি শুধু দুজনের ক্যারিয়ারকেই উজ্জ্বল করেনি। একইসঙ্গে দেশকে আর একবার জয়ের স্বপ্ন দেখার পাইপলাইনে তুলে দিয়েছে। দুই দেশসেরা ক্রিকেটারের প্রত্যয়ী ব্যাটিংয়ের পর হঠাৎ ছন্দপতন হলে দুর্যোগ নেমে আসে ফের। সেখান থেকে ত্রাতা হয়ে দলকে টেনে তুলতে চেষ্টা করেন প্রায় দুই বছর পর খেলতে নামা নাসির হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনে সপ্তম উইকেট জুটিতে ৪২ রান যোগ করে আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তে বিচ্ছিন্ন হন। তবে শেষ দিকে শফিউলের দৃঢ়তায় বাংলাদেশ ২৬০ রানের লড়াকু রান যোগ করে স্কোর বোর্ডে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হলেও দিনের তখনো আধাঘণ্টা বাকি। তাই ব্যাটিং নামে অস্ট্রেলিয়া এবং নেমেই মিরাজ ও সাকিবের ঘূর্ণির ধাঁধায় পড়ে দিন শেষ করে ১৮ রানে ৩ উইকেট খুঁইয়ে। আজ দ্বিতীয় দিন খেলতে নামবে সফরকারীরা ২৪২ রানে পিছিয়ে থেকে হাতে ৭ উইকেট নিয়ে। রোমাঞ্চ উপহার দেওয়ার টেস্টটিতে সফরকারীরা তাকিয়ে অধিনায়ক স্মিথের দিকে এবং বাংলাদেশ অপেক্ষায় দিনের প্রথম সেসনে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর