বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

আট উইকেটের অপেক্ষা

আসিফ ইকবাল

আট উইকেটের অপেক্ষা

মিরপুরের ঝকমকে আকাশ আর ঝলমলে দিন রোমাঞ্চ, বিনোদন-কিছুই উপহার দিল না!  তৃতীয় দিনের বিকালটা বরং উপহার দিল একরাশ হতাশা, আফসোস, আক্ষেপ ও কষ্ট। সাকিব, মিরাজ, তাইজুলদের সাঁড়াশি আক্রমণকে তুড়ি মেরে স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার যে দৃঢ়তায় ব্যাটিং করেছেন, তাতে হতাশার কালো চাদরে ঢাকা পড়েছে টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীদের জয়ের স্বপ্ন। ম্যাচের বাকি যদিও দুদিন। প্রকৃতি বিরূপ না হলে জয়ের উদ্বাহু আনন্দে মেতে উঠতে পারে বাংলাদেশ। আবার প্রজাপতির সাত রংয়ের ডানায় ভাসতে পারে অস্ট্রেলিয়াও। সত্যিকার অর্থে ম্যাচ এখন দুলছে পেন্ডুলামের মতো দুদিকে! ‘আমরা জিততেও পারি। আবার হারতেও পারি।’ দিন শেষে মিডিয়ার মুখোমুখিতে রূঢ় সত্যটাই বলেন তামিম ইকবাল। তিন দিন শেষ মিরপুর টেস্টের। শেষ তিন ইনিংসও। আজ চতুর্থ দিন। ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের চাই ৮ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার দরকার ১৫৬ রান। এমন জটিল সমীকরণে দুলতে থাকা ম্যাচটিতে জয়ের স্বপ্ন দেখতে পারে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া-দুদলই। দুলতে থাকা ও হেলতে থাকা টেস্টটি জিতবে বাংলাদেশ-যদি ইতিহাসকে কেউ সাক্ষী মানেন। বাজিও ধরতে পারেন। এজন্য বেশিদিন আগে যেতে হবে না। এই মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে ১০৮ রানে জিতেছিল টাইগাররা। গত অক্টোবরে ২৭৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে বিনা উইকেটে ১০০ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। তখন মনে হচ্ছিল, ফের স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং ১৬৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে মুশফিক বাহিনী জয় তুলে নিয়েছিল ১০৮ রানের। শুধুই কি তাই? ২৭৫ রানের উপরে টার্গেট তাড়া করে উপমহাদেশের মাটিতে জয়ের রেকর্ড মাত্র একবার। তাও বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৬ সালে ফতুল্লায়। সেবার রিকি পন্টিংয়ের সেঞ্চুরিতে ৩০৭ রানের পর্বত ছুয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বাকি ছয়বার জিতেছে ২০০ রানের কম টার্গেট তাড়া করে। সুতরাং স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ। যদিও ১৫৬ রান খুব বেশি নয়। তবে মিরপুরের সর্বশেষ চার ইনিংসের রেকর্ড কিন্তু উদ্দীপ্তই করবে টাইগারদের। সর্বশেষ চারটি চতুর্থ ইনিংসে দলগুলোর স্কোর ১৬৪, ২২১, ৭/১০১ ও ১৬৭। সুতরাং স্বপ্ন দেখতেই পারেন মুশফিকরা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২৬০ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া থেমেছিল ২১৭ রানে। দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিল ১ উইকেটে ৪৩ রান তুলে। গতকাল তামিমের দৃঢ়তায় ২২১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। তামিম তার ৫০ নম্বর টেস্ট ক্যারিয়ারের উভয় ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করেন। টেস্টের উভয় ইনিংসে ৬ বার হাফসেঞ্চুরি করে নাম লিখেছেন হাবিবুল বাশারের পাশে। ৫০ টেস্টে বাশারের হাফসেঞ্চুরি ২৪টি। তামিমেরও ২৪টি। প্রথম ইনিংসে ৭১ রানের পর গতকাল প্যাট কামিন্সের দুর্দান্ত এক বাউন্সারে সাজঘরে ফেরার আগে রান করেছেন ৭৮। ২৬৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ২৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে সফরকারীরা। সেখান থেকে ওয়ার্নার ও স্মিথ ৮১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিন পার করেন। অথচ দুজনেই জীবন পেয়েছেন স্লিপে সৌম্য সরকার ও সিলিতে ইমরুল কায়েসের বদান্যতায়। ওয়ার্নার ব্যক্তিগত ১৪ সিলিতে সাকিবের বলে স্লিপে সৌম্যও হাতে এবং স্মিথ ব্যক্তিগত ৩ রানে সিলিতে ইমরুলের হাতে জীবন পান। নতুন জীবন পাওয়া ওয়ার্নার সাজঘরে ফিরেছেন ৭৫ রানে অপরাজিত থেকে এবং বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান স্মিথ ব্যাট করছেন ২৫ রানে। দুলতে থাকা ম্যাচের আজ চতুর্থ দিনের প্রথম সেসনটাই গুরুতপূর্ণ বললেন তামিম। সমোচ্চারিত হয়েছে হ্যাজলউডের কণ্ঠেও। কোমড়ের ইনজ্যুরিতে পড়ে হ্যাজলউড ফিরে যাচ্ছেন দেশে। তার আগে মিডিয়াকে বললেন, দিনের প্রথম সেসনটাই গুরুত্বপূর্ণ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর