শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

তবুও ঘরে ফেরার আনন্দ

সাঈদুর রহমান রিমন

তবুও ঘরে ফেরার আনন্দ

ঈদে ঘরমুখো মানুষের স্রোত গতকাল রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে —রোহেত রাজীব

বাস, ট্রেন, লঞ্চে ঠাসা ভিড়, পথে পথে অন্তহীন ভোগান্তি—আছে পদে পদে ঝুঁকি; তবুও ঈদ আনন্দে ঘরে ফেরা চাই-ই চাই। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। বাস, ট্রেন, লঞ্চ টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড়। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা, বৃষ্টিজনিত কাদা-পানিতে পিচ্ছিল হয়ে উঠেছে। সেসব স্থান অতিসতর্কতায় পেরোতেও বাস-মিনিবাসকে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এত বিপদ, এত ঝুঁকি আর ঝক্কি সত্ত্বেও ঈদের তাড়ায় ছুটছে মানুষ। যে যেভাবে পারছে সেভাবেই ছুটে চলছে বাড়িমুখে।

রাজধানীর জনস্রোত এখন শুধুই টার্মিনাল আর স্টেশনমুখী। কমলাপুর রেলস্টেশনে প্রায় প্রতিটি ট্রেনেই ছিল বাড়তি মানুষের চাপ। ছাদেও ঠাঁই নেই নেই পরিস্থিতি। সদরঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোরও ভিতরে বাইরে ছিল যাত্রীভিড়ে ঠাসা। এদিকে সড়কপথে দীর্ঘ ভোগান্তি না হলেও বৃষ্টিজনিত দুর্ভোগ আর ফেরিঘাটসমূহে কিছুটা জটলা রয়েছে। নৌপথেও বাড়তি মানুষের চাপ ও বিলম্বে লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল মানুষের ঢল, নানা বিড়ম্বনা। প্লাটফর্মে দাঁড়ানো ট্রেনগুলোতে পা রাখারও জায়গা মেলেনি। প্রায় প্রতিটি ট্রেনই দেরিতে ছেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। ঈদযাত্রায় বৃষ্টি আর দুর্ভোগ সঙ্গী হলোই। ভিড়ে বাস-ট্রাক, ট্রেনের ছাদে উঠে রওনা দেওয়া ঘরমুখো মানুষজন পথিমধ্যেই আটকে পড়ে বৃষ্টি ভোগান্তিতে। সড়ক মহাসড়কের বেহালদশায় পথে পথে ছিল অন্তহীন দুর্ভোগ। ঢাকা-টাঙ্গাইল রোডসহ উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহনগুলো চলছে ধীরগতিতে থেমে থেমে। অপরদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিটি রোডে ছিল যানজটের সীমাহীন ধকল। ট্রেনযাত্রার ক্ষেত্রেও লণ্ডভণ্ড শিডিউলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীরা দুর্ভোগ সয়েছেন।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ছয় লেনে উন্নয়নের কাজ চলায় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নয়নের কাজ চলছে। সেখানে রাস্তার বিভিন্ন অংশ কাদা-পানির সরোবর হয়ে উঠেছে। সেসব স্থানে যানবাহন চলছে ধীরলয়ে, ঝুঁকি নিয়ে। এদিকে ঈদুল ফিতরের তুলনায় এবার ঈদুল আজহায় ট্রেন ও বাসের টিকিট কালোবাজারি কম হলেও অনেক বাস ও লঞ্চ সার্ভিস অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া (মাওয়া) ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে ‘ভিআইপি সেবা’র নামে যাত্রীবাহী যানবাহন পারাপারে সিরিয়াল ভঙ্গসহ নানা অনিয়ম হচ্ছে। ফলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ২১ জেলার বাসগুলো নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। এ ছাড়া দুর্ঘটনার ঝুঁকি সত্ত্বেও আইন লঙ্ঘন করে ট্রেন ও লঞ্চের ছাদে যাত্রী বোঝাই করা হচ্ছে। এসব কারণে শেষমুহূর্তে দুর্ভোগ-দুর্দশা ঘরমুখো মানুষের পিছু ছাড়ছেই না।

এলেঙ্গা থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন বিকল হওয়ায় যান চলাচলে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকেই মহাসড়কের এলেঙ্গা, রসুলপুর ও করাতিপাড়া বাইপাস এলাকায় যানজট শুরু হয়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের লাইনও দীর্ঘ হতে থাকে। হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ভোরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের করাতিপাড়া বাইপাস ও পুংলী এলাকায় দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক সরিয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগে যায়। এ থেকেই সৃষ্ট যানজটে দুর্ভোগে পড়েন ঘরমুখো যাত্রীরা।

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজায় নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও যানজটে আটকে পড়ছে শত শত যানবাহন। মেঘনা সেতুতে যানবাহনের ধীরগতির কারণে সেতু পার হতে ঘণ্টাব্যাপী সময় লাগছে। ফলে যানবাহনের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে রাস্তা সরু ও উঁচু-নিচু থাকায় যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। প্লাটফর্মে ঢুকতেই মানুষের দীর্ঘ সারি। তবে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে বেশির ভাগ ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বেও ছাড়ার ঘটনা ঘটে। চিলাহাটিগামী নীল সাগর এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময় সকাল ৮টায় কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি সকাল ১০টা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি। রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছাড়ার কথা থাকলেও রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা পৌঁছাবে। এদিকে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে প্লাটফর্মে মালপত্র নিয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় দেখা যায় বহু পরিবারকে।

রাজধানী থেকে নৌপথে দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলার রুটে গত বুধবার থেকেই যাত্রী ভিড় শুরু হয়েছে। গতকাল লঞ্চগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ঢাকা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারি, সার্বক্ষণিক মাইকিং সত্ত্বেও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা বন্ধ করা যায়নি। লঞ্চের ভিতরে-বাইরে ছিল ভিড়। লোকে লোকারণ্য অবস্থায় যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো বিপজ্জনকভাবে গন্তব্যে রওনা হয়েছে। সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড়, কোনাবাড়ী, সফিপুরসহ যানজটপ্রবণ এলাকাগুলো দিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। তবে কালিয়াকৈর বাইপাস এলাকায় যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় থেমে থেমে যানজট হচ্ছে। একই অবস্থা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও। যানবাহনের চাপে টঙ্গী, ভোগরা বাইপাসসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ধীরগতিতে চলছে গাড়ি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর