বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজধানীতে জঙ্গি আস্তানায় প্রচণ্ড বিস্ফোরণে জ্বলে উঠল আগুন

ভিতরে আবদুল্লাহসহ সাতজনের অবস্থা সম্পর্কে র‌্যাব অনিশ্চিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে জঙ্গি আস্তানায় প্রচণ্ড বিস্ফোরণে জ্বলে উঠল আগুন

মিরপুরে গতকাল জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে র‍্যাব —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর দারুস সালাম থানার বর্ধনবাড়ী এলাকার ‘কমল প্রভা’ নামের ভবনে দিনভর ঘিরে রাখা জঙ্গি আস্তানায় গত রাত পৌনে ১০টার দিকে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে। আগুনের শিখা দেখে অনেকেই ভয় পেয়ে যান। বিস্ফোরণে ভবনের একটি দেয়াল ধসে পড়ে। পরে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা গেছে। আস্তানায় থাকা জঙ্গি আবদুল্লাহসহ সাতজনের কী অবস্থা তা জানাতে পারেনি র‌্যাব। তবে র‌্যাবের ধারণা, জঙ্গিরা আত্মঘাতী হওয়ার জন্য বিস্ফোরণ ঘটিয়ে থাকতে পারে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, চারটি ভারী বোমা বিস্ফোরিত হয়। এটি রাসায়নিক বিস্ফোরণ। বোমার স্প্লিন্টারে র‌্যাবের চার সদস্য আহত হয়েছেন। তবে তারা সবাই আশঙ্কামুক্ত। এর আগে, জঙ্গি আস্তানায় থাকা আবদুল্লাহর সঙ্গে বিভিন্নভাবে নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করলে তিনি আত্মসমর্পণে রাজি হন। নারী-শিশুদের নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনে আরও সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় র‌্যাব। এরই মধ্যে বিস্ফোরণের ঘটনা। এর আগে রাজধানীর দারুস সালামের ওই বাড়ির জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় র‌্যাব। সোমবার রাত ১১টা থেকে বর্ধনবাড়ী এলাকার ২/৩-বি নম্বর ‘কমল প্রভা’ নামের ভবনটি ঘিরে রাখা হয়। র‌্যাব  জানায়, ওই বাড়ির পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে আবদুল্লাহ নামে দুর্ধর্ষ এক জঙ্গি, তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ওসামা (৩) ও ওমর (১০) এবং দুই সহযোগীসহ মোট সাতজন অবস্থান করছে। আবদুল্লাহর প্রতিবন্ধী এক বোনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছিল, ওই ফ্ল্যাটে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে। এর আগে সোমবার রাতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় এক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জেএমবির সদস্য দুই ভাইকে ড্রোন ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব। পুরো এলাকা র‌্যাব ঘিরে রাখায় স্থানীয় বাসিন্দারা উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছেন।

র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ দুপুরে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণ করতে বলেছি। সময় চেয়েছেন তিনি। যেহেতুে ভিতরে দুটি বাচ্চা রয়েছে, আমরা তাকে সময় দেব। চূড়ান্ত অভিযানের জন্য আমরা প্রস্তুত। এখন তার সিদ্ধান্তের ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে। ইতিমধ্যে ওই বাড়ির বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।’

আবদুল্লাহকে দুর্ধর্ষ জঙ্গি আখ্যায়িত করে র‌্যাবপ্রধান বলেন, ‘২০০৫ সাল থেকে তিনি জঙ্গিবাদে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি দারুস সালাম এলাকায় থাকছেন। কবুতরের ব্যবসার পাশাপাশি আইপিএস ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী মেরামতের কাজ করতেন তিনি। এর আড়ালে তিনি প্রচুর বিস্ফোরক বাসায় মজুদ করেন। আবদুল্লাহ র‌্যাবকে বলেছেন, তার কক্ষে ৫০টির মতো আইইডি আছে। স্পিরিট, অ্যাসিডসহ আরও বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ রয়েছে। অভিযান শুরুর পর ওই দিক থেকে গুলি করা হয়েছিল। তার কাছে একটি পিস্তলও থাকতে পারে।’

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, র‌্যাব ওই বাড়ি ঘিরে ফেলার পর সোমবার রাত ১টার দিকে সেখান থেকে চারটি বোমা ছোড়া হয়। ওই বাড়ি থেকে ছোড়া বোমার মধ্যে পেট্রলবোমাও ছিল। বাইরে বিস্ফোরণের পর সেখানে আগুন ধরে যায়। তবে কেউ হতাহত হয়নি। ওই বাড়ি থেকে র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা ওই বাড়ির মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ। তিনি নিজেও পরিবার নিয়ে ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকেন। স্থানীয় বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি আজাদসহ ওই ভবন থেকে ৬৫ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে ১৫ জন শিশু, ২৪ জন নারী ও ২৬ জন পুরুষ রয়েছেন। যাদের সরিয়ে আনা হয়েছে তাদের মধ্যে আবদুল্লাহর বোন মেহেরুন্নেসাও রয়েছেন। আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় তিনি বলেছেন, অন্যদের সঙ্গে যেন তার বোনকেও সরিয়ে নেওয়া হয়। ওই ভবনে ২৪টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২৩টির বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মুঠোফোনে আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে র‌্যাব। এমনকি আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে আবদুল্লাহকে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। জবাবে আবদুল্লাহ ভেবে দেখার জন্য বারবার সময় নিচ্ছেন। ওই বাড়ির বাসিন্দা গুলশান আরা বলেন, ‘রাতে বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। আমিসহ বাসায় আমার স্বামী ও দুই সন্তান ছিল। ভয়ে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না। থরথর করে শরীর কাঁপছিল। বিছানা ছেড়ে দ্রুত মেঝেতে শুয়ে পড়ি। ভোরে র‌্যাব সদস্যদের ডাকে দরজা খুলে দ্রুত বের হয়ে আসি। প্রথমে স্থানীয় একটি স্কুলে আশ্রয় নিলেও বর্তমানে এক স্বজনের বাসায় উঠেছি।’ স্থানীয় বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক জানান, আবদুল্লাহ এ এলাকায় ১৫ বছর ধরে বসবাস করছেন। আচরণ ও চলাফেরা ভালো ছিল। তার মাথায় বাবড়ি চুল ও মুখে দাড়ি আছে। এর আগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ঢাকার পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াত সদস্যদের অভিযানের মধ্যে নব্য জেএমবির সন্দেহভাজন এক জঙ্গি সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর