বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

লড়াই সমানে সমান

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

লড়াই সমানে সমান

বোলিংয়ে উজ্জ্বল মুস্তাফিজ ও মিরাজ —এএফপি

বৃষ্টির শেষ ফোঁটাটাও ঝরে পড়েছে সাগরিকার সবুজ চত্বরে। গ্রাউন্ডসম্যানরা তৎপর পরিচর্যার কাজে। ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে এলেন অস্ট্রেলিয়ান কোচ ড্যারেন লেহম্যান। আউট ফিল্ড পরিদর্শন করেন তিনি। সহকারীদের নিয়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সবুজ চত্বর নিরীক্ষণ করে গেলেন ভালো করে। রণকৌশল সাজানোর জন্য কাজে লাগবে তার।

তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হতে হাতেগোনা কয়েক মিনিট বাকি। জায়ান্ট স্ক্রিনে কাউন্ট ডাউনের মহড়া চলছে। ঠিক তখনই টিপ টিপে বৃষ্টি মুষলধারে ঝরতে লাগল। তিন পরতের ঘোমটায় ঢেকে গেল উইকেট। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয়টি ভেসে যাবে না তো বৃষ্টিতে! এই ভয় মনের গভীরে স্থায়ী হওয়ার আগেই আকাশে আলোর রেখা ফুটে উঠল। প্রথম সেশনের পুরোটা সময় ভাসিয়ে নেওয়ার পর থেমে গেল বৃষ্টি। লাঞ্চ আওয়ারে শুরু হয় মাঠের পরিচর্যা। মাঠের ঘোমটা খুলেন পিচ কিউরেটর। পানি নিষ্কাশন মেশিনগুলো আউটফিল্ডে চক্কর দিতে থাকে। প্রায় ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় বৃষ্টিভেজা মাঠটাকে খেলার উপযোগী করা হয়। তবে উইকেটের স্যাঁতসেঁতে ভাবটা রয়েই যায়। পিচ কিউরেটর সবুজ সঙ্কেত দিতেই ঠিক হলো, দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে শুরু হবে তৃতীয় দিনের খেলা। সাকিব আল হাসানকে দিয়েই শুরু করেন মুশফিক। বৃষ্টির কারণে দেরিতে খেলা শুরু হওয়ায় ম্যাচ রেফারি ২৩ ওভার কেটে দিনের খেলা ৬৭ ওভার নির্ধারণ করেন। ১৩৫ মিনিটের লম্বা সেশন ঘোষণা করা হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাও হয়নি। ৫৪ ওভার খেলা হতেই আলো স্বল্পতার কারণে দিনের খেলা বন্ধ করে দেন আম্পায়ার। এই ৫৪ ওভারে ১৫২ রান করতে ৭ উইকেট হারায় স্মিথ বাহিনী। তৃতীয় দিন শেষে অসিরা স্কোরবোর্ডে ৯ উইকেটে তুলেছে ৩৭৭ রান। অস্ট্রেলিয়া ৭২ রানে এগিয়ে গেলেও তৃতীয় দিনে বোলাররা নিজেদের কাজটা ঠিকই করেছেন। মেহেদী তিনটি, মুস্তাফিজ দুটি ও সাকিব একটি উইকেট নিয়েছেন। আরও তিনটি সুন্দর সুযোগ তৈরি করেছেন তারা।

আগের দিনের অস্বস্তিকর গরমের কথা মনে রেখে ফ্লপি হ্যাট মাথায় পরে খেলতে নামেন পিটার হ্যান্ডসকম্ব। এই হ্যাট পরেই অতীতে ক্রিকেট খেলতেন অনেকে। তবে ফ্লপি হ্যাটের ব্যবহার প্রায় উঠেই গিয়েছিল। হ্যান্ডসকম্ব অতীতটাকেই যেন মনে করিয়ে দিলেন। বৃষ্টির পর ঝকঝকে রোদ। তার চেয়েও ঝকঝকে ডেভিড ওয়ার্নারের ইনিংস। হ্যান্ডসকম্ব অবশ্য বেশি সময় টিকে থাকতে পারেননি। ওয়ার্নারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউটের শিকার হন তিনি। নাসিরের বল স্কয়ার লেগে খেলেছিলেন ওয়ার্নার। বিপরীত প্রান্ত থেকে হ্যান্ডসকম্ব ছুটে আসেন রান নিতে। ওয়ার্নার দেখেশুনে এগিয়ে যাননি। বল তখন সাকিবের হাতে। হ্যান্ডসকম্ব সময়মতো স্ব-স্থানে ফিরতে পারলেন না। সাকিবের থ্রো সরাসরি আঘাত করে ভেঙে দেয় উইকেট। হ্যান্ডসকম্ব-ওয়ার্নার ১৫২ রানের জুটি গড়েন তৃতীয় উইকেটে। এটা দুই দেশের টেস্ট লড়াইয়ে তৃতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি। এর আগেরটা ছিল ল্যাঙ্গার আর বর্তমান কোচ লেহম্যানের (১৪১ রান)। ২০০৩ সালে ডারউইনে এই রান করেছিলেন ল্যাঙ্গার-লেহম্যান। ডেভিড ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি আগের দিনই অনেকটা নিশ্চিত হয়েছিল। গতকাল কেবল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন তিনি। ৭৮তম ওভারের চতুর্থ বলে নাসিরের লো ফুল টস বলকে কভার অঞ্চল দিয়ে চার মেরে ক্যারিয়ারের ২০তম সেঞ্চুরি করেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি একটা এলিট ক্লাবেও প্রবেশ করেন। উপমহাদেশের মাটিতে ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরি অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে কেবল করেছেন বব সিম্পসন, অ্যালান বোর্ডার, মার্টিন, মাইক হাসি ও মাইকেল ক্লার্ক। ষষ্ঠ অস্ট্রেলীয় হিসেবে এই গৌরব ছুলেন ডেভিড ওয়ার্নার। এই ডেভিড ওয়ার্নার আউট হতে পারতেন ৫২ রানে। আউট হতে পারতেন ৭৩ রানেও। সেই ওয়ার্নার আউট হলেন ১২৩ রানে। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ধীরগতির টেস্ট ইনিংস খেলে মুস্তাফিজের বলে লেগ গালিতে ক্যাচ দেন ইমরুলকে। প্রথমবার বল নিয়ে উপরের দিকে ছুড়ে দিয়ে আবার লুফে নেন ইমরুল। মিরাজ না পারলেও ইমরুল ঠিকই মুস্তাফিজকে জন্মদিনের উপহার দেন। ৮৪তম ওভারের তৃতীয় বলে মুস্তাফিজের গুড লেন্থের বল খেলতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল (১০)। সহজ ক্যাচটা ধরতে ব্যর্থ হন মেহেদী মিরাজ। পরে অবশ্য মুস্তাফিজ ওয়ার্নার আর ম্যাথু ওয়েডের উইকেট শিকার করেন।

 কেবল মিরাজের এই ক্যাচ মিসের ঘটনাই নয়। দ্বিতীয় দিনে দুইটা সুযোগ হারিয়েছিলেন মুশফিকরা। গতকাল হারালেন তিনটা। মুস্তাফিজের বলে এই মিসের পর মিরাজ কার্টরাইটের রিটার্ন ক্যাচ নিতেও ব্যর্থ হন ৯১তম ওভারের পঞ্চম বলে। শেষ বিকালে অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের ১১৭তম ওভারে সাকিবের করা প্রথম বলে আগারের দেওয়া দুধ-ভাত ক্যাচ স্লিপে ফেলে দেন সৌম্য সরকার। বাংলাদেশের মতো না হলেও ব্যর্থ হয়েছে অস্ট্রেলিয়াও। বার বার রিভিউ চেয়ে বিফল হয়েছে অসিরা। মুস্তাফিজের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পরে আউট হয়ে রিভিউ চেয়েছিলেন ম্যাথু ওয়েড। টিভি আম্পায়ার রিভিউতে দেখলেন বল ঠিকই স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেয়। আম্পায়ারের আউটের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। ম্যাক্সওয়েল (৩৮) মিরাজের বলে কট বিহাইন্ড হয়েও রিভিউ চেয়েছিলেন। রিভিউতে দেখা গেল ব্যাট-সংঘাত ঠিকই হয়েছে। এই দিক থেকে অবশ্য সফল বাংলাদেশ। মিরাজের বলে প্যাট কামিন্স (৪) প্যাডে ডিফেন্স করলে জোরাল আবেদন জানান মুশফিকরা। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়ে রিভিউ আবেদন জানান টাইগার দলপতি। শট অফার না করে প্যাড দিয়ে ডিফেন্স করায় এবং বল স্ট্যাম্পিং লাইনে থাকায় টিভি আম্পায়ার আউট দেন কামিন্সকে।

আরও দুইদিন খেলা বাকি। কী হবে এই টেস্টে! মুস্তাফিজ দৃঢ় কণ্ঠে বলে গেলেন, এই টেস্টে কোনো কিছুই এখন আর অসম্ভব নয়। জয়, ড্র এমনকি পরাজয়ও!

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর